শিরক ও বিদ’আত

প্রশ্ন: কিছু লোক মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট (বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম) শব্দটির পরিবর্তে ৭৮৬ বলে থাকে, সূরা ওয়াকি‘আ ৪২ বার, যারিয়াহ ৬০ বার, ইয়াসীন ৪১ বার এবং (ইয়া লাতীফ) শব্দটি ১৬৬৪১ বার পড়ে থাকে, এ রকম করা কি জায়েয আছে? অনুগ্রহ করে জানতে চাই।

উত্তর: শরীয়তে এ রকম নির্দিষ্ট সংখ্যার আ‘মাল আছে বলে আমার জানা নেই, আর এ শব্দের পরিবর্তে সংখ্যা বলা এবং তা সুন্নাত হিসাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে বিদ‘আত। এমনিভাবে মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট এভাবে পাঠ করা মৃত্যুর সময় হোক বা মৃত্যুর পর হোক এর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু দিবা-রাত্রি বেশী বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করা ভালো, কুরআন তেলাওয়াতের শুরুতে, খাওয়া, পানাহার, ঘরে প্রবেশ, স্বামী-স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি কাজ কর্মের সময় বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে কাজে বিসমিল্লাহ বলা হয় না এ রকম প্রতিটি কাজই লেজ কাটা।”[44] অনুরূপভাবে ইয়া লাতীফ বা ইয়া আল্লাহ ইত্যাদি শব্দ নির্দিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করা সুন্নাত নয় বরং তা বিদ‘আত, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

তবে সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে বেশী বেশী দো‘আ করা বৈধ, যেমন কেউ বলল: ইয়া লাতীফ! উলতুফ বিনা (হে অমায়িক! আমাদেরকে অনুগ্রহ কর, বা আমাদেরকে ক্ষমা কর, বা রহমত কর বা সঠিক রাস্তা দেখাও) ইত্যাদি। তদ্রূপ ইয়া আল্লাহ, ইয়া রহমান, ইয়া রহীম, ইয়া গাফুর, ইয়া হাকীম, ইয়া আযীযু আমাদেরকে অনুগ্রহ কর, বিজয় কর, আমাদের আ‘মাল এবং অন্তরকে সংশোধন কর ইত্যাদি বলাও জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ﴾ [غافر: ٦٠]

“আর তোমাদের প্রভু বললেন, তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” [সূরা গাফের ৬০]

তিনি আরও বলেন:

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦ ﴾ [البقرة: ١٨٦]

“আর আমার বান্দা যখন আমার ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন) আমি তাদের অতি নিকটে, কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকলে আমি তার আহবানে সাড়া দেই।” [সূরা বাকারা/১৮৬] তবে শর্ত হচ্ছে, এ যিকির এর জন্য যা বাড়ানো বা কমানো যাবে না এমন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যাবে না।

কিন্তু যে ব্যাপারে নবী (ﷺ) থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা এসেছে যেমন : (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর) প্রতিদিন একশত বার। এটি নবী (ﷺ) থেকে সাব্যস্ত রয়েছে। এমনিভাবে (সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী ) সকাল সন্ধায় একশত বার, প্রত্যেক ফরয স্বলাতের শেষে সুবহানাল্লাহ, অলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার তেত্রিশ বার করে এবং একবার (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর) পড়ে শতবার পূর্ণ করবে।[45] এগুলো এবং এ অর্থে আরও যা নবী (ﷺ) থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সাব্যস্ত রয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় করা যাবে।

মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট মৃত্যুর পূর্বে যদি কিছু আয়াত পাঠ করা হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই, কেননা নবী (ﷺ) থেকে এর প্রমাণ রয়েছে।

আর মৃত্যুর পূর্বে তাকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর তালকীন দেওয়াই মুস্তাহাব, কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকীন দাও।”[46] আলেমগণের সঠিক মতে, এখানে ‘মৃত’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তি, কারণ তারাই তালকীন থেকে উপকার লাভ করে থাকে।


  • বিদ‘আত ও এর মন্দ প্রভাব
    সংকলন: শাইখ আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
    সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button