অন্যান্য

প্রশ্ন: অনেক ভাইকে দেখা যায়, নামাযের সময় কেবল প্যান্ট গুটিয়ে টাখনুর উপরে রাখে; নামায শেষে আবার টাখনু ঢেকে ফেলে। এ ব্যপারে ইসলাম কী বলে?

উত্তর:
পুরুষদের জন্য নামাযের মধ্যে এবং নামাযের বাইরে সর্বাবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
যে সকল ভাই কেবল নামাযের সময় প্যান্ট গুটিয়ে টাখনুর উপরে রাখে এবং নামায শেষে আবার টাখনু ঢেকে ফেলে তাদেরকে বলব,
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায ও নামাযের বাইরে সবসময় টাখনু ঢাকতে নিষেধ করেছেন।
তাই সব সময় তা ফলো করুন। কেননা, এটি হারাম কাজ ও কাবিরা গুনাহ।

টাখনু ঢাকা অবস্থায় নামায আদায় করার হুকুম:

নামাযরত অবস্থায় টাখনু ঢেকে রাখা হোক বা খোলা রাখা হোক তাতে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
তবে নামাযরত অবস্থায় টাখনু ঢেকে রাখলে গুনাহ আরও বেশি হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

উল্লেখ্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে
নামায পড়তে দেখে তাকে পুনরায় ওযু করতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন,
তার নামায কবুল হবে না-এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটিকে ইমাম আলবানী যঈফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
[দেখুন: শায়খ আলবানী তো এই হাদীসকে যয়ীফ (দুর্বল) বলেছেন।
(দেখুন আলবানী রহ. এর তাহকীককৃত সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং৬৩৮)]

পড়ুন টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ার ভয়াবহতা:

🔰 আবু যর ( রাঃ) বলেন, রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন,
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না।
এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নাই।
রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- এ কথা তিনবার বলেছেন।
তারা হলঃ

১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে।
২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যবসার পণ্য বিক্রি করে।
৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইব্‌ন মাজাহ্‌)।

🔰 আবু হুরায়রা ( রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করে বলেন,
“লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে।” (বুখারী)

🔰 জাবের ইব্‌ন সুলাইম (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও।
কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না।”
(আবু দাঊদ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।

  • ইবনে বায এবং ইবনে উছাইমীন রহ. এর ফাতওয়া*

▪ ইবনে বায রাহ. বলেন,
“যে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।
কারণ, তিনি বলেন,
“টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত।”
এখানে তিনি বিশেষ কোন অবস্থাকে বাদ দেন নি।
সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে।
চাই তা পায়জামা হোক বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক।
কোন পোশাকের ক্ষেত্রেই টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।”

▪ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন,
“অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়বে তার শাস্তি হল,
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না।
এমনকি তিনি তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি
আর যদি অহংকার বশতঃ ঝুলিয়ে পরে তাবে তার শাস্তি হল,
সে যতটুকু কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরেছিল ততটুকু আগুনে প্রজ্জলিত হবে।

(তথ্যসূত্রঃ ফাতওয়া আল বালাদুল হারাম, ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০ নং পৃষ্ঠা)

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদান ও গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button