প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাতসালাত / নামায

তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ে কি কি আদব-শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত?

 

(১) তাহাজ্জুদ পড়বে এ নিয়ত করে ঘুমানো। এরপরও যদি জাগতে না পারে তাহলেও তাহাজ্জুদের সাওয়াব পেয়ে যাবে। আর তার ঘুমটা হবে তার জন্য সদাকাহ (নাসাঈ: ১৭৮৪)

(২) জাগ্রত হয়েই চেহারাসহ মুখ মুছে নিয়ে ঘুম দূর করে নেবে, আল্লাহকে স্মরণ করবে, অর্থাৎ পড়বে আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহি, সুবহানাল মালিকিল কুদুস, আস্তাগফিরুল্লাহ এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অতঃপর মিসওয়াক করবে এবং তারপর এ দু’আ পড়বে..

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহূ লা- শারীকালাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লাহি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম, রাব্বিগফির লী … এরপর যাই চাইবে তাই কবুল হয়ে যাবে। (বুখারী: ১১৫৪)

[অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই; আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। সুউচ্চ সুমহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। হে রব্ব ! আমাকে ক্ষমা করুন”]

(৩) সূরা আলে-ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করা (বুখারী: ১৮৩) ।
(৪) প্রথমে হালকাভাবে দুই রাকআত পড়ে নেবে (মুসলিম)
(৫) তাহাজ্জুদ নিজ ঘরে পড়া মুস্তাহাব। কেননা, ফরজ ছাড়া বাকি (নফল-সুন্নাত) সালাত ঘরে আদায় করা উত্তম (বুখারী: ৭৩১)।
(৬) তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত পড়া, চলমান রাখা, বাদ না দেওয়া (বুখারী: ১১৫২)
(৭) তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেলে সালাতে বিরতি দিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া (বুখারী: ২১২)।
(৮) মুস্তাহাব হলো তার পরিবার পরিজনকেও জাগিয়ে দেওয়া, যেন তারাও তাহাজ্জুদ পড়তে পারে (বুখারী: ৯৯৭)।
(৯) ঘুম থেকে না জাগলে মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়া (নাসাঈ: ১৬১০)।
(১০) তিলাওয়াত দীর্ঘ করা, এক পারা বা এর কম-বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ (স) তাহাজ্জুদের সালাত এমনই দীর্ঘ করতেন যে, কেউ কেউ কাহিল হয়ে বসে পড়তে ইচ্ছা করতো। (বুখারী: ১১৩৫) হুযাইফা (রা) দেখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) চার রাকআত তাহাজ্জুদের সালাতে সূরা বাকারা, আলে-ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদা ও আল-আনআম (মোট ছয় পারা) তিলাওয়াত করেছেন। (আবু দাউদ, সলাতুল মুমিন- ১/৩৬৮)

আবার কখনো এক রাকাআতেই সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান পুরো এবং সূরা নিসার অংশবিশেষ পড়েছেন। তাছাড়া তাহাজ্জুদের সালাতে রাসূলুল্লাহ (স)-এর এক একটি সিজদা এত দীর্ঘ হতো যে, এর মধ্যে ৫০টি আয়াত তিলাওয়াত করা যেতো।

(১১) সশব্দে ও নিঃশব্দে তিলাওয়াত করা: পাশের কারোর বিরিক্তর কারণ না হলে তাহাজ্জুদের সালাত সশব্দে তিলাওয়াত করা উত্তম। আর কেউ বিরক্ত হলে তিলাওয়াত করবে নিঃশব্দে। রাসূলুল্লাহ (স) কখনো জোরে, কখনো আস্তে উভয়ভাবেই পড়েছেন। (আবু দাউদ: ১৪৩৭) অপর এক হাদীসে আছে, তাহাজ্জুদে আবু বকর (রা) নিঃশব্দে এবং উমর (রা) সশব্দে তিলাওয়াত করেছেন। (আবু দাউদ: ১৩২৯)

(১২) মাঝে মধ্যে জামাআতের সাথে আদায় করা: রাসূলুল্লাহ (স) তাহাজ্জুদের সালাত কখনো জামাআতে এবং কখনো একাকী আদায় করেছেন। তবে তারাবীহর সালাত সবসময়ই জামাআতে পড়া সুন্নাত।

(১৩) বিতরের সালাত দিয়ে তাহাজ্জুদ শেষ করা। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘বিতরকে তোমরা রাতের শেষ সালাত বানিও (বুখারী: ৯৯৮)। অর্থাৎ বিতর পড়বে তাহাজ্জুদের পর।
(১৪) আয়েশা (রা) বলেছেন, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাতের তাহাজ্জুদ ছুটে গেলে রাসূলুল্লাহ (স) উক্ত ১১ রাকাতের বদলে পরের দিন ১২ রাকআত সালাত কাযা আদায় করতেন। (মুসলিম)

 

সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত
লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button