গোসলের বিবিধ মাসাইল
১. সুন্নাত তরীকা মোতাবেক গোসল করলে এর পর নতুন করে আবার ওযূ করার দরকার নেই । তবে যদি লজ্জাস্থানে হাত লেগে যায় বা ওযু ভাঙার কোন কারণ ঘটে যায় তাহলে। নামাযের জন্য পুনরায় ওযূ করে নিতে হবে ।
২. পুরুষ ও মহিলাদের গোসলের পদ্ধতি একই নিয়মে।
৩. নারী-পুরুষ সবাইকে রাসূল (স) পর্দায় থেকে গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন ।
৪. গোসল বা ওযূ কোনটাতেই পানির অপচয় করা ঠিক নয়।
৫. নাপাক লোক যদি তার হাতে নাপাকি না থাকে তবে তার হাত পানিতে ডুবিয়ে গোসল করলে বাকি পানি নাপাক হয় না। তবে গোসলের আগে হাত আগে ধুয়ে নিতে হবে। আয়েশা (রা) ও রাসূলুল্লাহ (স) দু’জনে একসাথে একই পাত্রে হাত ডুবিয়ে ফরয গোসল করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
৬. নখ পালিশ বা শরীরের কোন অংশে গাঢ় রঙের কোন আবরণ থাকলে তা উঠিয়ে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। আর গোসল না হলে নামাযও হবে না। তবে মেহেদীর রঙে কোন অসুবিধা নেই।
৭. কপালে টিপ থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে, নতুবা গোসল হবে না।
৮. নাভিতে আঙুল দিয়ে সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে, পরিষ্কার করতে হবে। নতুবা গোসল অপূর্ণাঙ্গ থেকে যাবে।
৯. ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, তুমি যদি ফরয গোসলে কুলি করতে এবং নাকে পানি দিয়ে ঝাড়তে ভুলে যাও তাহলে নামায পুনরায় পড় (মুসান্নাফে আঃ রাযযাক)। অর্থাৎ গোসল ও নামায উভয় পুনরায় আদায় করতে হবে ।
১০. গোসলের পর তোয়ালে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে শরীর না মুছাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ (স) মুছতেন না। তবে গা মোছা নাজায়েয নয় ।
১১. যদি মাথায় ফোড়া বা ঘা থেকে আর পুরো শরীর ভালো হয় তবে শুধু মাথা মাসেহ করবে, কিন্তু শরীর ধৌত করতে হবে। অপরদিকে যদি ফোড়া বা ঘা পায়ের মধ্যে থাকে, আর পানি লাগলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে গোসল না করে তায়াম্মুম করেই নামায পড়া জায়েয। (হাকিম ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৫)
১২. গোসলটি যদি ফরয না হয়ে সাধারণ গোসল হয়ে থাকে অর্থাৎ ধুলোবালি থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়া বা গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য হয় তাহলে একই পদ্ধতিতে বা এর ব্যতিক্রমে যেকোনভাবে গোসল করতে পারে। তবে গোসলের পূর্বে ওযূ করে নিলে গোসলের পর আর ওযু করা লাগবে না।
১৩. বহুমুত্র রোগের কারণে ধাতু নির্গত হলে গোসল ফরয হয় না।
১৪. অর্শ রোগের দরুন রক্তস্রাব হলে গোসল ফরয হয় না।
১৫. গোসলের পর যদি উত্তেজনা বা বেগ ছাড়াই বীর্য বা বীর্যের ফোটা বের হয় তাহলে আবার নতুন করে গোসলের প্রয়োজন নেই। ঐ অংশটুকু ধৌত করে শুধু ওযু করে নিলেই চলবে ।
১৬. একই দিনে এক বা একাধিক স্ত্রীর সাথে একাধিকবার সহবাস হলে একবার গোসল করাই যথেষ্ট। তবে, প্রতি সহবাসের পর লজ্জাস্থান ধৌত করা ও ওযূ করে নেওয়া উত্তম।
১৭. জুমু’আর দিন স্বামী-স্ত্রীর মিলন বা অন্য কোন কারণে ফরয গোসল করলে এটাই জুমু’আর গোসল হিসেবে গণ্য হবে।
১৮. ফরয গোসল না করেও ঘুমানো জায়েয। তবে লজ্জাস্থান ধৌত করে এবং ওযূ করে ঘুমানো উত্তম।
১৯. স্বামী স্ত্রী একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতে পারে ।
২০. সাবান লাগিয়ে ফরয গোসল করা ভালো। সাবান ছাড়াও ফরজ গোসল হয়।
২১. গোসল করার পর যদি দেখা যায় যে, শরীরের কোন অংশ শুকনো রয়ে গেছে, তাহলে ঐ অংশটুকু শুধু ভিজিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে। পুনরায় গোসল করতে হবে না।
২২. ১০ মহররমের দিন, ২৭ রজবের রাত্রি ও ১৫ শাবানের রাতে গোসল করাকে কেউ কেউ সুন্নাত মনে করে। এটা ঠিক নয়।
২৩. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে গোসলদাতার জন্য ওযূই যথেষ্ট, গোসলের প্রয়োজন নেই।
সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত
লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম