বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম

তাগুত নুসাইরিয়া বাহিনীর হাতে যিনি মারা গেছেন তিনি কী শহিদ?

প্রশ্নঃ আমার ঘটনা নিম্নরূপ: আমি ২৫ বছর বয়সী একজন সিরিয়ান নারী। প্রায় এক বছরের কম সময় আগে মেডিকেল কলেজে আমার এক সহপাঠী আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। তার প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দেয়ার পর খিতবার কাজটি অচিরেই শেষ করে ফেলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে সিরিয়ায় গণ্ডগোল শুরু হল। গণ্ডগোলের কারণে আমরা অন্যদেশে চলে গেলাম এবং বিষয়টি ৮ মাস পিছিয়ে গেল। এ সময়কালে আমি আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনেকটাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম এবং বহুবার আমার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার চিন্তাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারণ আমি পাত্রের ব্যাপারে পুরোপুরি সম্মত ছিলাম না। পুরোপুরি সম্মত না হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- সে ছেলে যখন বিয়ের প্রস্তাব দিতে এল তখন আমাকে খোলাখুলিভাবে বলেছে, সে এক মেয়েকে পছন্দ করত এবং সে মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবার রাজি না থাকায় ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে পারেনি। অন্য আরেকটি মেয়ে তাকে মোবাইলে ডিস্টার্ব করে, যে মেয়েকে সে চিনে না। কিন্তু সে মেয়েটি তার কাছে বিয়ে বসতে চায়, তাকে ভালবাসে। আমি প্রায় প্রতিদিন ইস্তিখারার নামায পড়তাম। এরপর আমরা দেশে ফেরার পর তার পরিবার এসে কাজটি সমাধা করতে চাইল; তখন আমিও সম্মতি দিলাম। যেহেতু ছেলেটি দ্বীনদার, চরিত্র ভাল, উন্নত সার্টিফিকেটধারী। অন্য বিষয়গুলো গোপন থাক— আমি সেটাই চাইলাম। সে জোর দিয়ে বলত যে, সে আমাকে প্রচণ্ড ভালবাসে, আমাকে বউ হিসেবে পেতে চায়। আমার স্বভাব-চরিত্র ও শিষ্টাচারে সে মুগ্ধ। অবশেষে আমাদের বিয়ের কাবিন হল। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ আমার অন্তরেও তার প্রতি ভালবাসা ঢেলে দিলেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর আমাদের মধ্যে সমস্যা শুরু হল। কারণ সে আমাদের বাসায় আসত না; তার সাথে ইউনিভার্সিটিতে দেখা হত। এ বিষয়টি আমাকে খুবই মর্মাহত করত। কারণ সে থাকত অন্য এক শহরে; আমাদের শহর থেকে প্রায় দেড় ঘন্টার রাস্তা। কখনো সে কারণ দেখাত যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভাল নয়; কখনো বলত: সে কাজে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে সে আমাদের বাসায় আসতে সম্মত হল। সে যখন আমাদের বাসায় থাকত তখন আমার ছোট বোনের সাথে যে আচরণ করত তাতে আমি খুব সংকোচবোধ করতাম। সে বলত, সে আমার বোনের ব্যক্তিত্বে অভিভূত। আরও বলত, সে আমার ছোট বোনকে নিজের বোনের মত ভালবাসে! বাস্তবে হয়তো সেটাই ছিল। কারণ তার মন ভাল ছিল। কিন্তু আমি মানতে পারতাম না। যার কারণে আমাদের মাঝে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমি সবসময় মানসিক কষ্টে ভুগতাম; এমনকি কোন কারণ ছাড়াই। দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ও মনমরা হয়ে থাকতাম। আর প্রতিদিন কাঁদতাম। কেন এ প্রস্তাব দিলাম সেটা নিয়েও অনুশোচনা করতাম। নিজেকে তার সাথে ও অন্য প্রস্তাবক ছেলেদের সাথে তুলনা করতাম এবং আমার মন বলত অন্যেরা তার চেয়ে ভাল হত। এরপর আমি পুনরায় ইস্তিখারার নামায পড়া শুরু করলাম; তবে এবার বিয়ের প্রস্তাব তুলে নেয়ার নিয়তে। কুরআন শরিফ পড়া শুরু করলাম যেন আল্লাহ আমাকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিশা দান করেন। কিন্তু আমার পরিবার এ চিন্তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে আসছিল। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- এর পিছনে মৌলিক কোন কারণ নেই। তারা বলত, আমি নানারকম বাহানা করছি। আমার ব্যাপারে ছেলে কোন ভুল করেনি। পরিবারের তিরস্কারের কারণে আমি এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেললাম এবং আগের মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেও আমার সাথে ব্যবহার অনেক ভাল করছিল এবং আমার ব্যাপারে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিল। আমি খুব ভাল সময় কাটাচ্ছিলাম। পরিস্থিতি ভাল হয়ে যাওয়ায় আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম। এর মধ্যে আমি আমার পরিবারের সাথে এক সপ্তাহের জন্য সিরিয়ার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সফরের আগে আমি তাকে দেখতে চাইলাম। আমরা একমত হলাম সে এসে মাগরিবের আগে চলে যাবে, যেহেতু নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ। সে ঠিকই আসল, কিন্তু আমাদের এখানে একটু দেরি করে ফেলল; তবে তখন আমি বা সে কেউ সেটা টের পাইনি। সে আমাদের এখানে থেকে যাক আমি তাকে সেটাও বলতে পারছিলাম না। কারণ আমার পরিবার তা চাচ্ছিল না। সেও আমার কাছে এমন কিছু বলেনি। অথবা তার কোন বন্ধুর বাসায় সে থেকে যাবে সেটাও তার খেয়ালে আসেনি; আগে একবার যখন আমাদের এখানে এসে দেরি করে ফেলেছিল তখন সে এভাবে থেকে গিয়েছিল। সে গ্রাম থেকে তার এক ফুফাতো ভাই ও বোনদেরকে তাকে নেয়ার জন্য আসতে বলল। যেহেতু তার নিজের গাড়ী ছিল না। গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩ ঘণ্টার পথ। তাকে নেয়ার জন্য তারা চলে এল। তারা আমাদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর খবর আসল যে, তারা গ্রামে ফেরার পথে নিরাপত্তা বাহিনীর বোমার আঘাতে সে ও তার বোন মারা গেছে এবং তার ফুফাতো ভাই আহত হয়েছে। খবর শুনে আমি ভেঙ্গে পড়লাম এবং নিজেকে দোষারোপ করতে থাকলাম। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- এক: এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য শাস্তিস্বরূপ? যেহেতু আমি অহংকার করতাম এবং তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাইতাম। সে দ্বীনদার ছিল, আমার সাথে ভাল ব্যবহার করত, আমাকে ভালবাসত। আমি আমার প্রতিপালকের এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করিনি। দুই: আমি ও আমার পরিবার কি তাদের গুনার বোঝা বইব? যেহেতু এ রাত্রিবেলা আমরা তাদেরকে যেতে বাধ্য করেছি? উল্লেখ্য, সেদিনের পরিস্থিতি অতবেশি খারাপ ছিল না। এমন কিছু ঘটতে পারে তা মনেও আসেনি। এ সংবাদ যেন মহাপ্রলয়ের মত আমাদেরকে বিদ্ধ করল। কখনো কখনো আমি আমার পরিবারের উপর দোষারোপ করি। কারণ তারা তাকে এখানে থাকতে দেয়নি। তিন: সে কি আল্লাহর কাছে শহিদ হিসেবে গণ্য হবে? যেহেতু সে অন্যায়ভাবে মারা গেছে। আশা করব, আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিবেন। এ দুর্ঘটনার পর থেকে অত্যন্ত খারাপ মানসিকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখনো আমার চোখের পানি শুকায়নি।

উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

প্রথমেই আমরা আল্লাহর দরবারে দুআ করি তিনি যেন, এ দুর্যোগ ও দুর্ভোগ থেকে আপনাদেরকে উদ্ধার করেন। আপনাদের মৃতদের প্রতি রহম করেন, তাদেরকে শহিদ হিসেবে কবুল করে নেন। নেওয়ার অধিকার আল্লাহর, দেওয়ার অধিকারও আল্লাহর। তাঁর কাছে সবকিছুর সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের মৃত্যুসময় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন; নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যার মৃত্যুসময় উপস্থিত হবে তাকে একটুও কম বা বেশি সময় দেয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “আল্লাহ আত্মাগুলোকে হরণ করেন সেগুলোর মৃত্যুর সময় এবং যেগুলো ঘুমের মধ্যে মরেনি সেগুলোরও। অতঃপর যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তার আত্মা রেখে দেন। অন্যদেরটা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছেড়ে দেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৪২]

শাইখ সা’দী (রহঃ) বলেন:

আল্লাহ অবহিত করেন যে, জাগরণ ও তন্দ্রাকালে, জীবদ্দশায় ও মৃত্যুকালে বান্দার তত্ত্বাবধায়ক একমাত্র তিনিই। আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ আত্মাগুলোকে হরণ করেন সেগুলোর মৃত্যুর সময়” এটি হচ্ছে বড় তিরোধান, মৃত্যুর তিরোধান। আল্লাহ আরও বলেন: “যেগুলো ঘুমের মধ্যে মরেনি সেগুলোরও” এটি ছোট মৃত্যু। অর্থাৎ যে আত্মা ঘুমের মধ্যে মরেনি সে আত্মাকেও আল্লাহ হরণ করেন। এরপর এ দুটি আত্মা থেকে “যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তার আত্মা রেখে দেন” সেটি এমন আত্মা যে মারা গেছে অথবা ঘুমের মধ্যেই যার মৃত্যু ঘটেছে। আর অপর আত্মাটিকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুনরায় প্রেরণ করেন; যেন সে আত্মা তার রিযিক ও বয়স পূর্ণ করে। তাফসিরে সাদী পৃষ্ঠা- ৭২৫ থেকে সমাপ্ত।

দুই:

পক্ষান্তরে আপনার স্বামীর সাথে –আপনাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পন্ন হয়েছে ধরা হলে- আপনার যে আচরণ বা কসুর অথবা আত্মসম্মানবোধ কেন্দ্রিক অভিমান এগুলোর কোন না কোন কারণ ছিল। পরবর্তীতে আপনাদের মাঝে সমঝোতা হয়েছে, আপনি সম্পর্ক ছিন্ন করার চিন্তা ছেড়ে দিয়েছেন। আপনাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। সুতরাং এর আগে যা কিছু ঘটেছে সেসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এসব চিন্তা আপনার কোন কাজে আসবে না। বরং আপনার শারীরিক ও মানসিক অশান্তির কারণ হবে। দুঃখিত-ভারাক্রান্ত হওয়া বা কিঞ্চিত কান্নাকাটি করাতে দোষের কিছু নেই। তবে আল্লাহর তাকদিরের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা থেকে সাবধান থাকুন। হাউমাউ করে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত থাকুন। আশা করছি এ মুসিবতে আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দিবেন, আপনাকে এর প্রতিদান দিবেন এবং যা হারিয়েছেন তার চেয়ে ভাল কিছু আপনাকে দিবেন।

আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখতে পারে; সেখানে বিপদ-মুসিবতে মুমিনের করণীয় কী এবং কী বলবে বা কী করবে তা তুলে ধরা হয়েছে।

তিন:

তিনি যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সেটার দায় জালেম ও তাগুত বাহিনী ছাড়া অন্য কারো উপর বর্তানো উচিত হবে না। কারণ তারাই তাকে হত্যা করেছে, তার বোনকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাআলা এটাই তাকদির (নির্ধারণ) করে রেখেছেন। তিনি ভেবেছিলেন রাত্রিবেলা গ্রামে ফিরে যাওয়াটা কঠিন হবে না। কোন সন্দেহ নেই যদি তিনি এমন কিছু আশংকা করতেন তাহলে তার কোন বন্ধুর কাছে ঘুমাতেন। অথবা রাতের বেলা আপনাদের বাড়ীতেই থাকতে চাইতেন। অতএব, আপনার অথবা আপনার পরিবারের কোন দোষ নেই। আল্লাহ তাআলা আযলে বা সৃষ্টির পূর্বে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। এটা যে, তার তাকদিরে ছিল এর সমর্থন পাওয়া যায় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ফুফাতো ভাই ও তার বোনের আপনাদের বাড়ীতে আগমন। যদি রাত্রিবেলা পরিস্থিতি চলাফেরার উপযুক্ত না হত তাহলে তার ফুফাতো ভাই অথবা তার বোন আপত্তি জানাত এবং তারা গ্রাম থেকে তাকে নিতে আসত না।

অতএব, তাকে অথবা তার পরিবারকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা ইচ্ছা করেছেন সেটাই ঘটেছে। আমরা দুআ করি, আল্লাহ তাকে রহম করুন, তাকে ক্ষমা করে দিন। তাকে, তার বোনকে এবং অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া সকল মুসলমানকে আল্লাহ শহিদ হিসেবে কবুল করুন। কারণ তিনি নাস্তিক্যবাদী ও বাতেনি চিন্তাধারার অধিকারী বাথ পার্টির বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। কারণ তিনি তার গাড়ীতে নিহত হয়েছেন; গাড়ীতে মারা যাওয়া ভূমি ধ্বসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভূমি ধ্বসে মারা গেলে শহিদের সওয়াব পাওয়ার কথা হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আরও জানতে 129214 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখা যেতে পারে; সেখানে আরও বিস্তারিত বিবরণ আছে।

চার:

জেনে রাখুন, আপনার উপর চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব— এ বিষয়ে আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর কি কি বিষয় পরিত্যাগ করা অপরিহার্য সেগুলো আমরা 10670 ও 13966 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করেছি। যেমন- প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় এবং জরুরত ছাড়া রাতের বেলায় ঘর থেকে হওয়া। সুন্দর পোশাক পরিধান। স্বর্ণ ও অন্য কোন অলংকার পরিধান। সুগন্ধির ব্যবহার; তবে হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর সামান্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সুরমা ও মেহেদির ব্যবহার।

আল্লাহই ভাল জানেন।

মূল — https://islamqa.info/bn/answers/179482/

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Arif Ahmed Amit

Assalaamu Alaykum, I'm a Muslim, Islam is perfect but I am not. If I make a mistake, blame it on me, not on my religion ...(সতর্কীকরণ!!! এখানে কোন ধরনের তর্ক কাম্য নয়। নিজে দেখেন ও জানেন এবং শেয়ার করে অন্যকে দেখার ও জানার সুযোগ দিন।)Jazak Allah Khair ...
Back to top button