সালাত / নামায

প্রশ্ন: একশ্রেণীর আলেম জোরালোভাবে প্রচার করেন যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলো মানসূখ বা হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাদের উক্ত দাবী কি সঠিক?

উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। মূলত তারা উক্ত দাবীর পক্ষে নিম্নোক্ত বর্ণনা পেশ করে থাকেন।

أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ رَاىَ رَجُلًا يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى الصَّلَاةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ رَفْعِ رَأْسِهِ مِنَ الرُّكُوْعِ فَقَالَ لَا تَفْعَلْ فَإنَّ هَذَا شَيْىٌ فَعَلَهُ رَسُوْلُ اللهِ ثُمَّ تَرَكَهُ

‘একদা আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, ছালাতে রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হতে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে। তিনি তখন বললেন, তুমি এটা কর না। কারণ এগুলো সবই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন, তবে পরবর্তীতে বাদ দিয়েছেন’ (ছহীহ বুখারী, ১/১০২ পৃ, টীকা দ্র.)।

অথচ উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও বাতিল। রাফ‘উল ইয়াদায়েনের প্রসিদ্ধ আমলকে প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত মিথ্যা বর্ণনা রচনা করা হয়েছে। কারণ উক্ত বর্ণনা কোন হাদীছ গ্রন্থে পাওয়া যায় না। যেমন মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদের ভাষ্যকার বলেন,

لَكِنَّ هَذَا الْأَثَرَ لَمْ يَجِدْهُ الْمُخَرِّجُوْنَ الْمُحَدِّثُوْنَ مُسْنَدًا فِىْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ مَعَ أَنَّهُ أَخْرَجَ الْبُخَارِىٌّ فِىْ رِسَالَةِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّهُ كاَنَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ الْخَفْضِ وَالرَّفْعِ

‘কিন্তু এই আছারের সন্ধান কোন মুহাদ্দিছ কোন হাদীছ গ্রন্থে পাননি। বরং ইমাম বুখারী তার ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রুকূতে যাওয়া ও রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’ (মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, তাহক্বীক্ব : ড. তাক্বিউদ্দীন নাদভী হা/১০৪-এর ব্যাখ্যা দ্র.)। অথচ ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, وَاَلَّذِىْ يُرْوَى مِنْ الرَّفْعِ مَحْمُوْلٌ عَلَى الِابْتِدَاءِ كَذَا نُقِلَ عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তা মূলত ইসলামের প্রথম যুগের বিষয়। যেমন ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে’ (হেদায়া ১/১১১ পৃ.)। সেই সাথে হেদায়ার টীকাকার হাশিয়ার মধ্যে ইবনু যুবাইরের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (হেদায়াহ ১/১১১ পৃ., টীকা নং-৬; আল-ইনায়াহ শারহুল হেদায়াহ ২/৪ পৃ.)। তাছাড়া বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদকমণ্ডলী টীকায় উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (আল-হিদায়াহ ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৬)। অথচ তার যে কোন ভিত্তি নেই সে বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। এই মিথ্যাচার সম্পর্কে অনুবাদকমণ্ডলীকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করলে তারা কী জবাব দিবেন?

আরো আফসোসের বিষয় হল, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ বুখারীতে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পাঁচটি হাদীছ পেশ করেছেন। সেই হাদীছগুলোকে রদ করার জন্য তার টীকায় ভাষ্যকার আহমাদ আলী সাহারাণপুরী উক্ত মিথ্যা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (বুখারী (ভারতীয় ছাপা) ১/১০২ পৃ., টীকা দ্র.)। অনুরূপভাবে আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল-বুখারীতে রাফঊল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলোকে যবাই করার জন্য উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করা হয়েছে এবং এই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতকে বাতিল আখ্যা দেয়া হয়েছে (সহীহ আল-বুখারী ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২১-৩২২)। অনুবাদকমণ্ডলী এবং প্রকাশক বিচারের মাঠে আল্লাহর সামনে কী জবাব দিবেন?

সুধী পাঠক! এটাই হল ফেক্বহী গ্রন্থের আসল চেহারা। মাযহাবকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাদীছের উপর এভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ তিনি যে নিজেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন তার প্রমাণে ইমাম বুখারী ছহীহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

عَنْ عَطَاءٍ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ وَابْنَ عُمَرَ وَابْنَ عَبَّاسٍ وَابْنَ الزُّبَيْرِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ

আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে দেখেছি, তারা সকলেই ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্র.; বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৬ ও ৫৭)। অতএব সকলকে ছহীহ দলীলের দিকে ফিরে আসতে হবে। বানোয়াট বর্ণনা ও প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে।

 

সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button