অন্যান্য

প্রশ্ন: তাশাহুদে বসে আঙ্গুল নাড়ানোর পদ্ধতি কয়টি ও কী কী? এ বিষয়ে নানা ধরণের কথা শুনা যায়। আশা করি এ বিষয়ে সঠিক নিয়মটি বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর: নামযে তাশাহ্হুদে তর্জনী আঙ্গুলী ইশারা করা একটি সুপ্রমাণিত সুন্নত যে ব্যাপারে কোন মত বিরোধ নাই।

কিন্তু আঙ্গুল নাড়ানোর ব্যাপারে যথেষ্ট মত বিরোধ রয়েছে। যেমন, আদৌ আঙ্গুলী নাড়াতে হবে কি না বা হলে তার পদ্ধতি কী ইত্যাদি ব্যাপারে।

যাহোক, যারা বলেন, তাশাহ্হুদে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো সুন্নত। তারা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন:

প্রখ্যাত সাহাবী ওয়েব ইবন হুজুর (রা:) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে নামায পড়তে আমি যেন দেখতে পাচ্ছি।

অত:পর তিনি তাঁর নামায পড়ার পদ্ধতি বর্ণনা করলেন। আর তাশাহ্হুদে বসার পদ্ধতি সম্পর্কে বললেন:

ثُمَّ قَبَضَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَحَلَّقَ حَلْقَةً ثُمَّ رَفَعَ أُصْبُعَهُ فَرَأَيْتُهُ يُحَرِّكُهَا يَدْعُو بِهَا ثُمَّ جِئْتُ بَعْدَ ذَلِكَ فِى زَمَانٍ فِيهِ بَرْدٌ فَرَأَيْتُ النَّاسَ عَلَيْهِمُ الثِّيَابُ تُحَرَّكُ أَيْدِيهِمْ مِنْ تَحْتِ الثِّيَابِ مِنَ الْبَرْدِ.

“অত:পর তিনি হাতের আগুলগুলো ধরে গোলাকার তৈরি করলেন। তারপর আঙ্গুল উঠালেন এবং দেখলাম-
তিনি আঙ্গুল নাড়াচ্ছেন আর দুয়া করছেন। তারপর পরবর্তীতে ঠাণ্ডা কালীন সময় এসে দেখলাম লোকজন
ঠাণ্ডার কারণে কাপড়ের নীচ থেকে তাদের আঙ্গুল নাড়াচ্ছেন।”

(মুসনাদ আহমাদ, নাসাঈ, দারেমী প্রমূখ। আল্লামা আলবানী (রহ:) বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ।)

উক্ত হাদীসে শুধু দুয়া করার সময় অর্থাৎ তাশাহ্হুদে দুয়ার শব্দগুলো উচ্চারণের সময় আঙ্গুল নাড়ানোর বিষয়টি ফুটে উঠেছে। পুরো তাশাহ্হুদে নয়।

 

আল্লামা উছাইমীন (রাহ:) কে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাশাহুদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তর্জনী আঙ্গুল নড়ানোর বিধান কি?

 

তিনি উত্তরে যা বলেছেন তা হল নিম্নোরূপ:

তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দু’আর সময় হবে। পূরা তাশাহুদে নয়।
যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছেঃ “তিনি উহা নাড়াতেন ও দু’আ করতেন।”
এর কারণ হচ্ছেঃ দু’আ আল্লাহর কাছেই করা হয়। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আসমানে আছেন।

 

তাই তাঁকে আহবান করার সময় উপরে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে। আল্লাহ্ বলেন,

أَأَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ الأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ، أَمْ أَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ

“তোমরা কি নিরাপদে আছ সেই সত্বা থেকে যিনি আসমানে আছেন যে, তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না?

 

তখন আকস্মিকভাবে যমীন থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা নাকি তোমরা নিরাপদ আছ সেই সত্বার ব্যাপারে
যিনি আসমানের অধিপতি তোমাদের উপর কঙ্করবর্ষী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না?

তখন তোমরা জানতে পারবে, আমার সকর্ত করণ কিরূপ ছিল।”

(সূরা মুলকঃ ১৬-১৭)

 

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

أَلَا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ

“তোমারা কি আমাকে আমানতদার মনে করো না? অথচ আমি যিনি আসমানে আছেন তার আমানতদার।”
সুতরাং আল্লাহ্ আসমানে তথা সবকিছুর উপরে আছেন।

 

যখন আপনি দু’আ করবেন উপরের দিকে ইঙ্গিত করবেন।
একারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে খুতবা প্রদান করে বললেন, “আমি কি পৌঁছিয়েছি?” তাঁরা বললেন, হ্যাঁ।

 

তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুল উঠালেন এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন বললেন,
“হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো।”

 

এদ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ্ তা’আলা সকল বস্তুর উপরে অবস্থান করেন।
এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত ফিতরাতী ভাবে, বিবেক যুক্তি ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে।

 

এই ভিত্তিতে যখনই আপনি আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকবেন তাঁর কাছে দু’আ করবেন,
তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন। আর অন্য অবস্থায় তা স্থীর রাখবেন।

 

এখন আমরা অনুসন্ধান করি তাশাহুদে দু’আর স্থানগুলোঃ

১) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

২) আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ্ ছালিহীন।

৩) আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ

৪) আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ

৫) আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নাম

৬) ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি।

৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাত।

৮) ওয়ামিন ফিতনাতল মাসীহিদ্দাজ্জাল।

 

এই আটটি স্থানে আঙ্গুল নাড়াবে এবং তা আকশের দিকে উত্থিত করবে। এগুলো ছাড়া অন্য কোন দু’আ পাঠ করলেও আঙ্গুল উপরে উঠাবে।
কেননা দু’আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে।

উল্লেখ্য যে, আঙ্গুল না নাড়ানোর ব্যাপারেও একটি হাদীসে পাওয়া যায়। কিন্তু তা অনেক মুহাদ্দিসের মতে সহীহ নয়।
হাদীসটি হল:

كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها

“তিনি দুয়ার সময় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন কিন্তু নাড়াতেন না।”

(আবু দাউদ ও নাসাঈ) অনেক মুহাদ্দিস “নাড়াতেন না” কথাটিকে শায হওয়ার কারণে দূর্বল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

 

আল্লামা ইবনুল কাইয়েম যাদুল মায়াদে এ অংশটুকুকে দূর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। (যাদুল মায়াদ ১/২৩৮)

আল্লামা আলবানী বলেন: মুহাম্মাদ বিন আজলানের বর্ণনাটি শায। (আর শায হাদীস দূর্বলের অন্তর্ভূক্ত)
(দেখুন: সহীহ ওয়া যঈফ আবী দাউদ, সহীহ ওয়া যঈফ নাসাঈ ও তামামুল মিন্নাহ)

[আল্লামা উসাইমীন রহ. এর ফতোয়টি নেয়া হয়েছে, ফতোয়া আরকানুল ইসলাম গ্রন্থ থেকে]

আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন।

 

➖➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button