অন্যান্য

✔ পদস্খলনের আশঙ্কায় আকিদা শিক্ষা এড়িয়ে যাওয়া

প্রশ্ন: ঐ ব্যক্তির বিধান কী হবে, যে ব্যক্তি পদস্খলনের আশঙ্কায় আকিদা শিক্ষাকে পছন্দ করে না, বিশেষ করে তাকদীরের (ভাগ্যের) মাসআলায়?

উত্তর: এই মাসআলাটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাসমূহের মতোই মানুষের দীন ও দুনিয়ার জন্য খুবই জরুরি। তা বিশ্লেষণ করা ও জানা-বুঝার জন্য তার গভীরে ডুব দেয়া এবং আল্লাহ (তাবারাকা ওয়া তা‘আলা) -এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা আবশ্যক, যাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ, এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে থাকা উচিত নয়। আর যেসব মাসআলা জানার ব্যাপারে সে বিলম্বিত করলে তার দীনের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না এবং তা তার অধঃপতনের কারণ হবে বলেও সে আশঙ্কা করে না, তবে তা জানার ব্যাপারে বিলম্বিত করাটা দোষণীয় হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার চেয়ে আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা বিদ্যমান থাকবে। তাকদীরের (ভাগ্যের) সাথে সংশ্লিষ্ট মাসআলাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা পরিপূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা বান্দার উপর আবশ্যক, যাতে সে তার ব্যাপারে বিশ্বস্ত জ্ঞান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। আর বাস্তবে তাতে কোন জটিলতা নেই (আর আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা)। আর যে কারণে আকিদা শিক্ষা করা কোনো কোনো মানুষের উপর কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে, দুঃখজনকভাবে তা হচ্ছে এই যে, তারা “কেন” এর চেয়ে “কীভাবে” এর দিকটিকে প্রাধান্য দেয়। আর মানুষ তার কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হয় “কেন” এবং “কিভাবে” –এই দু’টি প্রশ্নবোধক অব্যয় দ্বারা। বলা হয়: ‘তুমি কেন এরূপ কাজ করেছ?’ এটা হল ইখলাস। আর, ‘তুমি কীভাবে এ কাজটি করেছ?’ এটা হলো রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ। আর এখন অধিকাংশ মানুষ “কীভাবে” প্রশ্নের জবাবের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত এবং “কেন” প্রশ্নের জবাবের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন; আর এই জন্য তুমি তাদের অধিকাংশকে পাবে যে, তারা ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার দিকটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না; অথচ অনুসরণের ব্যাপারে তারা সুক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে।
সুতরাং বর্তমান সময়ে মানুষ এই দিকটির প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে; অথচ তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকটির প্রতি তারা উদাসীন; আর সেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল আকিদা (মৌলিক বিশ্বাস), ইখলাস (একনিষ্ঠতা বা ঈমান) ও তাওহীদের (আল্লাহর একত্ববাদের) দিক। এই জন্য তুমি কোনো কোনো মানুষকে দুনিয়া সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ বিষয়ে প্রশ্ন করতে দেখতে পাবে, অথচ তার অন্তর দুনিয়াদারীতে নিমগ্ন এবং তার বেচাকেনা, উঠাবসা, বসবাস ও পোষাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে সাধারণত আল্লাহ বিমুখ।
তাছাড়া বর্তমান সময়ে কিছু কিছু মানুষ এমনভাবে দুনিয়া পূজারী হয়ে গেছে যে, সে বিষয়টি বুঝতেও পারছে না। কেননা আফসোসের বিষয় হল, তাওহীদ ও আকিদার দিকটির প্রতি শুধু সাধারণ জনগণ যে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা নয়; বরং কিছু কিছু তালেবে ইলমও তাদের সাথে রয়েছে। আর এটা এমন বিষয়, যার কতগুলো মারাত্মক প্রভাব রয়েছে, যেমনিভাবে আ‘মাল ব্যতীত শুধু আকিদার উপর গুরত্বারোপ করাটাও ভুল— অথচ আমলকে শরী‘য়ত প্রবর্তক আকিদার হেফাযতকারী ও প্রতিরক্ষা-দেয়ালের মতো করেছেন। কেননা, আমরা গুরুত্বের সাথে প্রচারমাধ্যমের সাহায্যে শ্রবণ করি এবং পত্রপত্রিকায় পাঠ করি যে, ‘দীন হচ্ছে সহজ আকীদার নাম’ ইত্যাদি। অথচ মূলত এটা উদ্বেগজনক এ-জন্য যে, এটি হয়তো এমন একটি দরজা হবে, যে দরজা দিয়ে এমন ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটবে, যে ব্যক্তি হারাম জিনিসকে হালাল করে ফেলে বলবে, আমার আকীদা তো ঠিক আছে!
তাই সম্মিলিতভাবে দু’টি বিষয়ের প্রতিই মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন, যাতে “কেন” এবং “কিভাবে” উভয় প্রশ্নের জবাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
জবাবের সারসংক্ষেপ: ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল, তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ) ও আকিদা বিষয়ে পড়াশুনা করা, যাতে সে তার ইলাহ ও মা‘বুদ আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে যথাযথ উপলব্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি হতে পারে; আর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে পারে আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলী এবং তাঁর কর্মকাণ্ডসমূহের ব্যাপারে; দূরদর্শী হতে পারে তাঁর কলাকৌশল এবং শরী‘য়ত ও সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে, যার ফলে সে নিজেকে পথভ্রষ্ট করবে না অথবা অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে না। আর শ্রেষ্ঠ সত্ত্বার সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে ইলমুত তাওহীদ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান; আর এই জন্য বিজ্ঞ আলেমগণ তার নামকরণ করেছেন ‘আল-ফিকহুল আকবর’ ( الفقه الأكبر) বা শ্রেষ্ঠ ফিকহ। আর নবী (ﷺ) বলেন:
« من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين » . (أخرجه الترمذي ).
“আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তিনি তাকে দীন সম্পর্কে সুক্ষ্ম জ্ঞান (ফিকহ) দান করেন।” – (তিরমিযী, হাদিস নং- ২৬৪৫) এই জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম বিষয় হল তাওহীদ ও আকিদা সংক্রান্ত জ্ঞান।
কিন্তু ব্যক্তির উপর এটাও আবশ্যক যে, সে চিন্তাভাবনা করবে কীভাবে এবং কোন উৎস থেকে সে এই জ্ঞান অর্জন করবে। সুতরাং তার জন্য উচিত হবে এই জ্ঞান থেকে সর্বপ্রথম যা নির্ভেজাল ও সন্দেহমুক্ত, তাই গ্রহণ করা; অতঃপর দ্বিতীয় পর্যায়ে সে ঐসব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেবে, যাতে বিদ‘আত ও সন্দেহ-সংশয়ের আমদানি হয়েছে; ফলে সে তা প্রতিরোধ ও প্রত্যাখ্যানে ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারবে ইতোপূর্বে লব্ধ নির্মল আকিদার আলোকে। আর যে উৎস থেকে সে তাওহীদ ও আকিদা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করবে, সেই উৎস হতে হবে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ, অতঃপর সাহাবা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুমের বক্তব্য, অতঃপর তাঁদের পরবর্তীকালে তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনদের মধ্যকার ইমামগণ কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য, অতঃপর জ্ঞান ও আমানতদারীতায় নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত আলেমগণ কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য, বিশেষ করে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কায়্যিম (তাঁদের ও সকল মুসলিম ইমামগণের উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও সন্তুষ্টি)।

সুত্রঃ শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
মাজমু‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল (مجموع فتاوى و رسائل ): ২ / ৭৭
(ঈষৎ পরিবর্তিত)

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button