প্রশ্ন : মূর্তি ও ভাষ্কর্যের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? বর্তমানে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে সৌন্দর্য বা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য আবক্ষ বা পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। এটা কি শিরকের পর্যায়ভুক্ত? কেউ কেউ বলেন ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি স্থাপন করা সেটাই কেবল অবৈধ হবে। এটা কি সঠিক?
বা প্রতিকৃতি। আর প্রস্তরাদি খোদাই করে যে মূর্তি তৈরী হয় তা-ই ভাষ্কর্য।
ইসলামী শরী‘আতে মূর্তি ও ভাষ্কর্য দু’টির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি।নকোনটি পূজনীয়, আর কোনটি পূজনীয় নয়- এমন কোন ভাগও করা হয়নি।
রাসূল (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের পর আলী (রাঃ)-কে লোকালয়ে পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোন ভাষ্কর্য পেলেই তা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। আর কোন কবর উঁচু পেলেই তা ভেঙ্গে মাটি সমান করে দিবে (মুসলিম হা/৯৬৯; মিশকাত হা/১৬৯৬)।
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলতে বলেছেন এই কারণে যে, এর মাধ্যমে শিরক হয়ে থাকে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৭/৪৬২ পৃ.)।
মূলতঃ অপূজনীয় ভাষ্কর্যের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়।
ইবনু আববাস (রাঃ) সূরা নূহে বর্ণিত ওয়াদ, সুয়া‘ ইয়াগূছ, ইয়াঊক, নাসর প্রভৃতি মূর্তি সম্পর্কে বলেন, এগুলি হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তির নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে
কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলির নামকরণ কর। তখন তারা তাই করল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি, কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করল এবং লোকেরা মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলির ইবাদত বা পূজা শুরু হ’ল (বুখারী হা/৪৯২০)।
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সম্মান প্রদর্শনের জন্য মূর্তি বা ভাষ্কর্য বানানোকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে বড় শিরক বা ছোট শিরক হ’তে পারে (ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২/৩৩৪ পৃ.)।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ) কা‘বাগৃহে প্রবেশের আগে ভিতর থেকে সমস্ত মূর্তি ও প্রতিকৃতি বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি তার মধ্যে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দু’টি প্রতিকৃতি দেখেন। তখন তিনি বলেন,
‘ইব্রাহীম কখনো ইহূদী বা নাছারা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)।
এভাবে তিনি সকল মূর্তি-প্রতিকৃতি মিটিয়ে না ফেলা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করেননি (বুখারী হা/৩৩৫২; আহমাদ হা/৩৪৫৫)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, মারিয়াম, ঈসা, জারজিস প্রমুখ সৎ ব্যক্তির ভাষ্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে মানুষ মূর্তিপূজার ন্যায় বড় শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে (ইগাছাতুল লাহফান ২/২৯২ পৃ.)।
ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে কোন প্রকার প্রাণীর মূর্তি বা মূর্তির অনুরূপ অবয়ব, চাই সেটা ভাষ্কর্য হৌক বা ছবি হৌক এবং তা পূজার জন্য হৌক বা না হৌক, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এগুলিকে কুরআনে অপবিত্র ও অরুচিকর বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মূর্তির অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক’ (হজ্জ ৩০)।
রাসূল (ছাঃ) ছবি বা প্রতিকৃতি নির্মাণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক আযাবপ্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৯৭)।
তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে, তা জীবিত কর’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৯২)।
হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘আমার সৃষ্টির মত করে যে ব্যক্তি (প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে? পারলে তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা বা একটি যবের দানা সৃষ্টি করুক তো দেখি!’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪৯৬; ফাৎহুল বারী ১০/৩৯৮ পৃ.; দ্র. ‘ছবি ও মূর্তি’ বই)।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।