প্রশ্ন : বর্তমানে বাংলাদেশে ‘রেডিয়াম ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি কোম্পানী ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগে’র আহবান জানাচ্ছে। তাদের নিয়ম অনুযায়ী ১০ ইউএস ডলার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এর বিনিময়ে তারা ‘রিপটন কয়েন’ নামে দুইশ’ কয়েন দিচ্ছে। যেটা একদিনে দেওয়া হয় না। বরং ন্যূনতম ছয় মাসে মাইনিং হিসাবে প্রতিদিন ১/২টা করে ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করা হয়। তাদের দাবী অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে এর রেট একটা উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। আনুমানিক প্রতি কয়েন ১০ ডলার থেকে ১০০ ডলার হ’তে পারে। দ্বিতীয়তঃ তাদের সাথে কাজ করলে অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তিকে রেফার করলে কোম্পানির পক্ষ থেকে ঐ ব্যক্তির বিনিয়োগের ৫% হারে মুনাফা প্রদান করবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের কোন কমতি হবে না। এইভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে তারা আরো পারসেন্টেজ লাভের ব্যবস্থা রাখছে। আবার এই কারেন্সির বিনিময় মূল্য রয়েছে এবং তারা বলছে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে ভার্চুয়াল কারেন্সির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হবে। ইতিপূর্বে ‘বিটকয়েন’ নামে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বাযারে এসেছিল ২০০৯ সালে। তখন তার মূল্য ছিল ৮/৯ টাকা। বর্তমানে ২০২০ সালে সেই কয়েনের মূল্য ৮ লক্ষ টাকা (১৩১১৯ সিঙ্গাপুরী ডলার)। ঠিক তেমনি ‘রিপটন কয়েন’ থেকে আয় আসবে বলে দাবী করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হ’ল অধিক মুনাফা লাভের আশায় এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে কি? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
এর দর মারাত্মক ওঠানামা করে। যেহেতু গোটা বিষয়টি অজ্ঞাত, অনিশ্চয়তাপূর্ণ ও প্রতারণার ঝুঁকিপূর্ণ, অতএব এরূপ অনিয়মিত ও অপ্রকৃত মুদ্রার আদান-প্রদানে জড়িত হওয়া জায়েয নয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘হাছাহ’ ও ‘গারার’ ব্যবসা হ’তে নিষেধ করেছেন’ ( আহমাদ হা/৭৪০৫; বায়হাক্বী হা/১০৩৯০, সনদ ছহীহ)।
‘হাছাহ’ ব্যবসা বলতে যখন বিক্রেতা ক্রেতার কাছে কাপড় বিক্রির সময় বলে, ‘আমি আপনার কাছে তা-ই বিক্রি করব যার উপর আমার ছোড়া পাথরটি পড়বে’। অথবা ‘আমি আপনাকে সেই জমিই বিক্রি করব যার উপর আমার ছোড়া পাথরটি পড়বে’। অর্থাৎ কোন দ্রব্যটি বিক্রি করা হচ্ছে তা জ্ঞাত নয়। ফলে এটি নিষিদ্ধ। আর ‘গারার’ হ’ল যা অনিশ্চিত বা অনুমাননির্ভর। অর্থাৎ হ’তেও পারে, নাও হ’তে পারে।
যেমন পানির মাছ বিক্রি করা, গরুর বাঁটের দুধ বিক্রি করা কিংবা গর্ভবতী পশুর গর্ভে যা আছে তা বিক্রি করা ইত্যাদি। এটি নিষিদ্ধ। কারণ এতে ‘গারার’ বা প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে।
সুতরাং যেহেতু এটি পরিষ্কার যে, ডিজিটাল কারেন্সি একটি অজ্ঞাত উৎস হ’তে এবং অকর্তৃত্বশালী পক্ষ হ’তে প্রচলন করা হয়; আর এতে গারার বা অস্পষ্টতা রয়েছে এবং সেই সাথে ফটকামূলক লেনদেনের কারণে এতে জুয়ারও সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু এর ক্রয়-বিক্রয় বা এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া
বৈধ নয়। তুরস্কের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আরব আমিরাত, মিসর ও ফিলিস্তীনের কেন্দ্রীয় ফৎওয়া বিভাগ, দারুল উলূম দেওবন্দের ফৎওয়া বিভাগসহ বিভিন্ন দেশের অধিকাংশ ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে ক্রিপ্টো কারেন্সিকে নাজায়েয ফৎওয়া দিয়েছে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হালাল স্পষ্ট, হারামও স্পষ্ট। এর মধ্যবর্তী বিষয়সমূহ অস্পষ্ট, যা অনেক মানুষ জানে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বস্ত্তসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে ব্যক্তি তার দ্বীন ও সম্মানকে
পবিত্র রাখল। আর যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ কাজে লিপ্ত হ’ল, সে হারামে পতিত হ’ল’ (বুখারী হা/২০৫১; মুসলিম হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/২৭৬২)।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।