অন্যান্য

ভয়ভীতি ও বিরক্তিকর স্বপ্ন

প্রশ্ন: আমি ষোল বছর বয়সের ছাত্র; আমার একটি সমস্যা আছে, যা আমাকে অশান্ত করে তোলে; আর তা হল- আমি খুব ভয় পাই, এমনকি আমি যদি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যেও অবস্থান করি; আর আমার এই ভয়ের কারণ হল, আমি মনে মনে অনেক কিছু ভাবি এবং কল্পনা করি; আর যখন রাতের আগমন ঘটে, তখন আমার ভয় আরও প্রকট হতে থাকে; সুতরাং বিরক্তিকর ও ভীতিকর স্বপ্নের আধিক্যতার কারণে আমার ঘুমে স্বস্তিবোধ করতে পারি না। তবে আমি আল্লাহকে স্মরণ করি এবং তার নিকট আশ্রয় চাই; এ সত্ত্বেও ভয় আমার পিছু ছাড়ছে না; আমি আপনাদের নিকট দিকনির্দেশনা কামনা করছি; আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ্‌।

কোনো সন্দেহ নেই যে, মানুষ ভয়, ভীতি ও শঙ্কা দ্বারা আক্রান্ত হয়; কখনও আক্রান্ত হয় বাস্তব জিনিসের কারণে, তখন সে যদি তার মোকাবিলায় ভীরুতার পরিচয় দেয়, তাহলে সে তা থেকে মুক্ত হতে পারবে না; অথবা সে এই ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হয় শয়তান তার অন্তরে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়, তার কারণে; কিন্তু আল-হামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য) এর নিরাময় হল, সে আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে এবং তাঁর উপর ভরসা করবে; আর এটা এইভাবে যে, তুমি তোমার সকল বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার উপর নির্ভর করবে এবং বর্ণিত দো‘আসমূহ পাঠ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যেমন: আয়াতুল কুরসী পাঠ করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥] 

“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে, তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোন কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দু’টোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”- ( সূরা আল-বাকারা: ২৫৫); কেননা, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় তা পাঠ করবে, তার উপর সার্বক্ষণিক আল্লাহর পক্ষ থেকে পাহরাদার নিযুক্ত থাকে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান তার নিকটবর্তী হতে পারে না।

অনুরূপভাবে সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦ ﴾ [البقرة: ٢٨٥، ٢٨٦] 

 “রাসূল তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের উপর।

আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে: আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। আল্লাহ কারও উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই, আর মন্দ যা কামাই করে তার প্রতিফল তার উপরই বর্তায়। ‘হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের উপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দিবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।”- ( সূরা আল-বাকারা: ২৮৫ ও ২৮৬); কারণ, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এই দু’টি আয়াত পাঠ করবে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।

আর এই জন্য রাসূল (ﷺ)-এর শিখানো দো‘আ হচ্ছে:

« اللهم أني أعوذ بك من الهم والحزن». (أخرجه الترمذي ) .

“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা ও অতীতের দুশ্চিন্তা থেকে আশ্রয় চাই।” – (ইমাম তিরমিযী তার ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে হাদিসখানা বর্ণনা করেন, হাদিস নং- ৩৪৮৪); সুতরাং ” الهم ” শব্দের অর্থ: ভবিষ্যতের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা; আর ” الحزن “শব্দের অর্থ: অতীতে ঘটে যাওয়া বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা। 

সুত্রঃ শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন; ফতোয়া মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ৩ / ৭০৫

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মোঃ মামুনূর রশিদ (বকুল)

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button