অন্যান্য

মাতা কর্তৃক তার সন্তানদেরকে বদদো‘আ করা

প্রশ্ন: জনৈক মহিলা বলেন: আমার একটা সমস্যা আছে, আর তা হল- আমার পাঁচটি কন্যা সন্তান ও তিনটি ছেলে সন্তান আছে, তাদের মধ্য থেকে কিছু বিবাহিত, আবার কিছু মাদরাসার ছাত্র; কিন্তু তারা পড়ালেখার সাথে তাল মিলাতে না পেরে পড়াশুনা বাদ দিয়ে দিয়েছে; আর আমার সবগুলো ছেলের মধ্যে বড় রকমের বিরোধ রয়েছে, তারা কেউ কারও সাথে কথা বলে না এবং একে অপরকে ঘৃণা করে; আর তাদের মধ্য থেকে একজন ছাড়া বাকিরা স্বলাত আদায় করে না; আর আমি আমার মন থেকে তাদের জন্য বদদো‘আ করি, এমনকি স্বলাতের মধ্যে পর্যন্ত। সুতরাং আমি তাদের সাথে কী আচরণ করব, সেই ব্যাপারে আমাকে দিকনির্দেশনা প্রদান করুন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে আমর মন চাচ্ছে ঐসব ছেলেদের প্রতি উপদেশ বা নসিহত পেশ করি, যাতে তারা তাদের পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করে এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করে; আর তারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করবে; সুতরাং তারা যখন এই কাজটি করবে, তখন আল্লাহ তাদের জন্য সকল বিষয় সহজ করে দেবেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿… وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ …﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

“… আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন; …।” – (সূরা আত-তালাক: ২, ৩); আর যখন তারা এই কাজটি করবে, তখন তাদের হৃদয় খুলে যাবে, তাদের মন প্রশান্তি অনুভব করবে এবং তাদের অস্থিরতা, আত্মার সংকীর্ণতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর হবে; আর তারা উপলব্ধি করবে যে, তারা প্রকৃতভাবে জীবনযাপন করছে।

আর যখন তাদের হৃদয়-মন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্য করা থেকে দূরে সরে যাবে (না‘উযুবিল্লাহ), তখনই তার সাথে অস্থিরতা ও অবস্থার সংকীর্ণতা যোগ হয়ে যাবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত তাদের উপর দুনিয়ার অবস্থা এমন হবে যে, মনে হবে তারা যেন কাঁচের ঘরে অবস্থান করছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي مَنۡ أَسۡرَفَ وَلَمۡ يُؤۡمِنۢ بَِٔايَٰتِ رَبِّهِۦۚ وَلَعَذَابُ ٱلۡأٓخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبۡقَىٰٓ ١٢٧ ﴾ [طه: ١٢٤، ١٢٧] 

“আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, ‘হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় জমায়েত করলেন? অথচ আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন, ‘এরূপই আমাদের নিদর্শনাবলী তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে। আর এভাবেই আমরা প্রতিফল দেই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার রবের নিদর্শনে ঈমান না আনে। আর আখেরাতের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী।” – ( সূরা ত্বা-হা: ১২৪ – ১২৭)।

আর আপনার প্রশ্নের ব্যাপারে কথা হল, আপনার পক্ষ থেকে যা হয়েছে, তা ছিল ভুল; আর তা হল, তাদের জন্য বদদো‘আ করা; সুতরাং আপনার জন্য উচিত হল, আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করবেন, তিনি যেন তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, তাদেরকে হকের (সত্যের) দিকে ফিরিয়ে দেন এবং তাদেরকে সংশোধন করে দেন; আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার হাতে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের নিয়ন্ত্রণ; আর তিনি এসব অবাধ্য জাতিকে সঠিক পথের অনুসারী জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম।

সুতরাং আপনার উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ হল, আপনি তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট স্বলাতের মধ্যে সিজদায় গিয়ে, শেষ তাশাহুদের মধ্যে, আযান ও ইকামতের মধ্যকার সময়ে এবং রাতের শেষ অংশে দো‘আ করবেন; আর প্রতিটি উপযুক্ত সময়ে আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের জন্য হেদায়াত ও তাওফীক চেয়ে প্রার্থনা করবেন; আর আপনি দো‘আ কবুলের প্রত্যয় নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের জন্য প্রার্থনা করবেন; কেননা আল্লাহ সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান; সুতরাং হয়তো আল্লাহ আপনার দো‘আ কবুল করবেন; ফলে তা হবে তাদের জন্য যথাযথ এবং আপনার জন্য হবে দুনিয়া ও আখিরাতে চোখের প্রশান্তি। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানকারী। 

সুত্রঃ শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন; ফতোয়া মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ৩ / ৭২৫ (ঈষৎ পরিবর্তিত)

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মোঃ মামুনূর রশিদ (বকুল)

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button