নিয়তের মধ্যে সনদ লাভের ইচ্ছা কি নিন্দনীয় হবে?
প্রশ্ন: শর‘য়ী জ্ঞান অর্জনকারী কোনো কোনো ছাত্র তাদের জ্ঞান অর্জন ও সনদ (সার্টিফিকেট) লাভের নিয়তের বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোধ করে, সুতরাং এই বিব্রত অবস্থা থেকে ছাত্রগণ কিভাবে মুক্তি লাভ করবে?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ। এর উত্তর দেয়া হয় কয়েকভাবে:
প্রথমত: মৌলিকভাবে এই সনদ (সার্টিফিকেট) লাভ করাটাই তাদের উদ্দেশ্য হবে না; বরং মানব জাতির সেবার ময়দানে কাজ করার উপায় হিসেবে এই সনদকে গ্রহণ করবে; কারণ, বর্তমান সময়ে কাজকর্ম সনদের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষ এই উপায় অবলম্বন করা ব্যতীত সৃষ্টির উপকারের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে সক্ষম হবে না; আর এই পদ্ধতিতে নিয়ত বিশুদ্ধ হবে।
দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে চাইবে, সেই ব্যক্তি এসব স্কুল ও কলেজ ব্যতীত অন্য কোথাও তা অর্জন করতে পারবে না; সুতরাং সে তাতে জ্ঞান অর্জনের নিয়তে ভর্তি হবে এবং তার উপর সনদ বা সার্টিফিকেটের মত কোন বিষয়ের প্রভাব পড়বে না, যা পরবর্তী সময়ে সে অর্জন করবে।
তৃতীয়ত: মানুষ যখন তার কর্মের মাধ্যমে দু’টি কল্যাণ লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে, একটি দুনিয়ার কল্যাণ এবং অপরটি আখিরাতের কল্যাণ, তখন এই ক্ষেত্রে তার কোনো অপরাধ হবে না; কারণ, আল্লাহ বলেন:
﴿… وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ …﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“… আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন; …।” – (সূরা আত-তালাক: ২, ৩); এখানে দুনিয়া সংক্রান্ত উপকারিতা উল্লেখের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয়: যে ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে দুনিয়া লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে, তাহলে কিভাবে তাকে মুখলিস বা একনিষ্ঠ বলা হবে?
উত্তরে আমি বলব: সে তার ইবাদতের উদ্দেশ্যকে নির্ভেজাল ও একনিষ্ঠ করেছে এবং এর দ্বারা কোন সৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে নি; ইবাদতের দ্বারা মানুষকে দেখানো বা মানুষের প্রশংসা অর্জন করার উদ্দেশ্যও করে নি। তবে সে ইবাদতের একটি পার্থিব ফলাফল উদ্দেশ্য করেছে। তাই সে ঐ লোক-দেখানো আমলকারী ব্যক্তির মতো নয়, যে এমন কিছু আ‘মাল দ্বারা মানুষের নিকটবর্তী হয়, যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার কথা এবং যে এর দ্বারা মানুষের প্রশংসা অর্জন করতে চায়।
কিন্তু এই দুনিয়াবী উদ্দেশ্যের ফলে তার ইখলাসে কমতি হবে; এতে করে সে এক ধরনের শির্কে পতিত হবে এবং তার মর্যাদা ঐ ব্যক্তির নীচে চলে যাবে, যিনি আ‘মাল দ্বারা আখিরাতকেই একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আর এই প্রসঙ্গে আমি কিছু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যারা ইবাদতের উপকারিতার ব্যাপারে কথা বলার সময় একে পুরোপুরি দুনিয়াবী উপকারিতায় রূপান্তরিত করে। উদাহরণস্বরূপ তারা বলে: ‘স্বলাতের মধ্যে শরীরচর্চা ও স্নায়ুর জন্য উপকার রয়েছে’; ‘সাওমের (রোযার) মধ্যে ফায়দা হল: এর কারণে শরীরের মেদ কমে এবং খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম-শৃঙ্খলা অর্জিত হয়’। অথচ এই শুধু দুনিয়াবী উপকারিতা বর্ণনা করাই প্রধান আলোচ্য বিষয় করা উচিৎ নয়; কারণ, তা ইখলাসকে দুর্বল করে দেয় এবং আখেরাতকে চাওয়া থেকে মানুষকে অমনোযোগী করে। আর এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের মধ্যে সাওমের তাৎপর্য সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, সাওম হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপায়। সুতরাং দীনী উপকারিতাই হল মূখ্য, আর দুনিয়াবী (পার্থিব) উপকারিতা গৌণ। আর যখনই আমরা সাধারণ জনগণের নিকট কথা বলব, তখন আমরা দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের নিকট আলোচনা পেশ করব; আর যখন আমরা এমন ব্যক্তির নিকট কথা বলব, যে ব্যক্তি বস্তুগত ফায়দা ছাড়া পরিতৃপ্ত হবে না, তার নিকট আমরা দীনী ও দুনিয়াবী উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা পেশ করব। আর স্থান, কাল ও পাত্রভেদেই কথা বলতে হয়।
সূত্রঃ শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন ; ফতোয়ায়ে আকিদা (فتاوى العقيدة): পৃ. ২০২