অন্যান্য

প্রশ্ন: আমরা কাউকে যদি পছন্দ করি তাহলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট চাইতে পারি কি?বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের মধ্যে কোন কোন বৈশিষ্ট দেখা জরুরি?

উত্তর: কোনো পুরুষের মাঝে দ্বীনদারী, উন্নত চরিত্র, জ্ঞান-গরিমা, মেধা, যোগ্যতা, সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখে পছন্দ হলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করায় কোনো দোষ নেই।
কারণ একজন ভালো স্বামী একজন নারীর জীবনের বিশাল প্রাপ্তি- তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে লাভবান হবে।

🌀 মহান আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এ দুআ শিক্ষা দিয়েছেন:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে থেকে রক্ষা কর জাহান্নামের আগুন থেকে।”
(সূরা বাকারা: ২০১)

আর ভালো স্বামী/স্ত্রী, সুসন্তান, অর্থ-সম্পদ, ভালো চাকুরী, উপকারী বন্ধু, সৎ প্রতিবেশী, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি সবই দুনিয়াবি কল্যাণ।
সুতরাং এ সব কল্যাণকর বিষয় পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করায় কোনো দোষ নেই।

🌀 তাছাড়া হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে:

احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجَزْ ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا ، وَلَكِنْ قُلْ : قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ ”

“যাতে তোমার উপকার হয় তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। দুর্বলতা প্রদর্শন করো না।

তবে যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।”

বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।”
কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।”

(মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।

তবে এ জন্য দুটি শর্ত রয়েছে:

▪১) আপনি যাকে স্বামী হিসেবে পেতে চান অবশ্যই তার দ্বীনদারী ও চরিত্র সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হবেন তারপর দুআ করবেন।

▪২) সে ব্যক্তির সাথে আপনার বিবাহ বৈধ কি তা নিশ্চিত হতে হবে। যদি তার সাথে আপনার বিবাহ বন্ধন বৈধ হয় অর্থাৎ তাকে বিয়ে করতে শরীয়তের কোন বাধা না থাকে তাহলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করতে পারবেন।

যেমন: সে যেন বংশগত, দুগ্ধ পান বা বৈবাহিক সূত্রে আপনার মাহরামদের অন্তর্গত না হয়। কেননা মাহরাম হলে আপনার সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ নয়।

– অথবা আপনি যদি অন্য কারো স্ত্রী হয়ে থাকেন তাহলে তো তার নিকট থেকে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে তালাক হওয়া পর্যন্ত অন্য কারো সাথে আপনার বিবাহ বন্ধন অবৈধ।

🔰 তবে সবচেয়ে উত্তম হল, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করার চেয়ে অনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর কাছে ভালো ও উপযুক্ত স্বামী পাওয়ার জন্য দুআ করা।

কেননা আমরা মানুষের বাহ্যিক গুণ-বৈশিষ্ট্য দেখে মুগ্ধ হলেও তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অথবা সে আপনার জন্য উপযুক্ত কি না তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

তাই এ বিষয়টি আল্লাহর উপর সমর্পণ করা উত্তম। অর্থাৎ এভাবে দুআ করা উত্তম হে, আল্লাহ, তুমি আমার জন্য দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর এবং উপযুক্ত ব্যক্তির সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করো।

অথবা এভাবে বলা যে, হে আল্লাহ, যদি উমুক ব্যক্তি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে তাকে আমার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও।

আর যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর না তাহলে তার পরিবর্তে যে আমার জন্য অধিক কল্যাণকর তার সাথে বিয়ের সুব্যবস্থা করো।

🔰 কোনো ব্যক্তির সাথে বিয়ের পূর্বে তার ব্যাপারে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণ এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা করা (দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করার পর ইস্তিখারা এর দোয়া পাঠ করা) কতর্ব্য।

এতে সে আল্লাহর রহমতে সঠিক সিন্ধান্তে উপনিত হতে পারে এবং আল্লাহ সাহায্য লাভ করে।

বিয়ের ক্ষেত্রে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য, কোন বিষয়ে যোগ্যতা, অর্থ-সম্পদ, খ্যাতি এ সব বিষয়কে কখনো অগ্রাধিকার দেয়া সমীচীন নয়-যতক্ষণ না তার আল্লাহ ভীরুতা, দ্বীনদারী, উন্নত চরিত্র ও নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

কেননা বিয়ের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের দুটি বিষয় দেখার জন্য বলেছেন। সেগুলো হল, দ্বীনদারী ও চরিত্র। যেমন:

আবু হাতিম মুযানী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ وَفَسَادٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ كَانَ فِيهِ قَالَ ‏”‏ إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ ‏”‏ ‏.‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ

“যখন তোমাদের কাছে এমন কারো প্রস্তাব আসে যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তা যদি না কর তবে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসা’দ সৃষ্টি হবে।

সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, যদি তার মাঝে (কুফূ বা সমতার দিক থেকে) কিছু ত্রুটি থাকে? তিনি বললেন, “যখন তোমাদের কাছে এমন কারো প্রস্তাব আসে যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।”

এ কথা তিনি তিনবার বললেন। (তিরমিযী, পরিচ্ছদ: যার দীন তোমাদের কাছে পছন্দনীয় হয় তাকে বিয়ে কর।

হাদিস নম্বর: ১০৮৫, হাসান)

⛔ কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে মানুষ হাদিসে উল্লেখিত মানদণ্ডের আলোকে পাত্র খুঁজে না।

তারা খুঁজে অর্থ-সম্পদ, ভালো চাকুরী, আয়-ইনকাম, প্রভাব-প্রতিপত্তি, হ্যান্ডসাম দৈহিক গঠন ইত্যাদি!

কিন্তু তারা ভুলে যায়, আল্লাহ ভীরুতা, দ্বীনদারী নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সম্পদ, সৌন্দর্য ও প্রভাবপত্তি সম্পন্ন মানুষের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এগুলো তাকে অহংকারী ও উদ্ধত করে তোলে।

আল্লাহর দ্বীনের পথে না চললে সে শয়তানের সঙ্গী হয়ে পাপ-পঙ্গিলতার মধ্যে ডুবে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে মারাত্মক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা।

এমন দ্বীন হীন স্বামীর সান্নিধ্য একজন দ্বীনদার, চরিত্রবান নারীর জীবন হয়ে যায় সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক।

আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

▬▬▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button