অন্যান্য

প্রশ্ন: নামাজে দুনিয়াবী চিন্তা আসলে কি করণীয়?

প্রশ্ন: ইবাদতে আর আগের মত মন বসে না। কুরআন তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি ইবাদতে তৃপ্তি পাই না। শুধু দুনিয়াবী বিষয়ে মাথায় চিন্তা আসে।

কে কি বলল, কে কি করল এসব নিয়েই ভাবি। সামান্য কারণেই হঠাৎ খুব বেশি রাগ হয়। মনে হচ্ছে আমি ধীরে ধীর আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির কোনো উপায় আছে কি?

উত্তর: ইবাদতে মন না বসা বা ইবাদতে স্বাধ অনুভব না করা, সামান্য কারণে দ্রুত রাগ হওয়া, মানসিক অস্থিরতায় ভোগা ইত্যাদিকে বিজ্ঞ আলমগণ ঈমান দুর্বলতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এ ব্যাপারে শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ আর বিখ্যাত ‘ঈমান দুর্বলতার আলামত, কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন:

“ইবাদতে অলসতা করা ঈমান দুর্বলতার অন্যতম আলামত। দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইবাদত করলেও তা হয় অন্তঃসার শূন্য নড়াচড়া-যার মধ্যে প্রাণের স্পর্শ থাকে না। মূলত: এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّـهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّـهَ إِلَّا قَلِيلًا

“অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত: তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।”
(সূরা নিসা: ১৪২)
ইবাদতে অলসতার কয়েকটি দিক হল, সুন্নতে রাতেবা (পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের আগে ও পরে যে সকল সুন্নত নিয়মিতভাবে পড়া হয়),
তাহাজ্জুদ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ নফল সালাত যেমন, সালাতুত তাওবা, সালাতুল ইস্তিখারা, সালাতুয যুহা (চাশতের সালাত) ইত্যাদি আদায়ের ব্যাপারে অলসতা করা।
এমনকি জানাযার সালাতেও অংশ গ্রহণ করতে অবহেলা প্রদর্শন করা। আগেভাগে মসজিদে না যাওয়া ইত্যাদি।

দুর্বল ঈমানের একটি দিক হল অন্তরে সংকীর্ণতা অনুভব করা এবং মন-মস্তিষ্ক ও আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া।

এ অবস্থায় একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে এতটাই অস্থিরতা অনুভব করে যে, তার কাছে মনে হয়, বিরাট একটি বোঝা তার মাথার উপর চেপে আছে।

এ ধরণের মানুষ দ্রুত রেগে যায়। সামান্যতেই কষ্ট পায়। তার ধৈর্য, সহনশীলতা ও মানসিক উদারতা বিদায় নেয় এবং চারপাশের মানুষের আচরণে সে খুবই সংকীর্ণতা অনুভব করে। অথচ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” عَنِ الإِيمَانِ ، قَالَ : الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: ঈমান হল: ধৈর্য ও উদারতা।” (মাকারিমুল আখলাক-ইবনে আবিদ দুনিয়া, হা/ ৫৬, সিলসিলা সহীহা, হা/৪২৭)

এর কারণ কি?

তিনি ঈমান দুর্বলতার অনেকগুলো কারণ উল্লেখ করেছেন। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

১) দীর্ঘ সময় ঈমানী পরিবেশ থেকে দূরে থাকা।

২) সৎ, আদর্শবান ও অনুসরণীয় মানুষের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা।

৩) দ্বীনের ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ থেকে দূরে থাকা।

৪) পাপ-পঙ্কিল পরিবেশে বসবাস করা এবং পাপে লিপ্ত থাকা।

৫) দুনিয়াবি ব্যস্ততায় নিমগ্ন থাকা।

৬) অতিরিক্ত পানাহার,অতিরিক্ত ঘুম অথবা নিঘূর্ম রাত কাটানো। অনুরূপভাবে মানুষের সাথে মেলামেশা ও উঠবসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় অপচয় করা ইত্যাদি।

এর প্রতিকার কী?

শাইখ ঈমান দুর্বলতা এবং এ সব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অনেকগুলো উপায় বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

❂ ১) আল কুরআন অধ্যয়ন করা।

❂ ২) মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব অনুধাবন করা,তাঁর নাম ও গুণাবলীগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার পর সেগুলোর মর্মার্থ জেনে-বুঝে সেগুলোকে অন্তরে গেঁথে নেয়া এবং কাজে-কর্মে তার প্রতিফলন ঘটানো।

❂ ৩) দ্বীনের ইলম অন্বেষণ করা।

❂ ৪) যে সকল বৈঠকে আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহ এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সেগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া।

❂ ৫) অধিক পরিমাণে নেকীর কাজ করা এবং সব সময় নেকীর কাজে লেগে থাকা।

❂ ৬) বিভিন্ন প্রকারের ইবাদত করা।

❂ ৭) অধিক পরিমাণে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা।

❂ ৮) ঈমান নবায়নের অন্যতম উপায় হল,আখিরাতের বিভিন্ন মনজিলের কথা স্মরণ করা।

❂ ৯) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘটনাবলীতে প্রভাবিত হওয়া।

❂ ১০) আল্লাহর যিকির করা।

❂ ১১) আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের দুর্বলতা তুলে ধরে দুয়া করা।

❂ ১২) বেঁচে থাকার লম্বা আশা না করা।

❂ ১৩) এ কথা চিন্তা করা যে, পার্থিব জীবন খুবই নগণ্য।

❂ ১৪) আল্লাহর বিধি-বিধান ও-নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

❂ ১৫) আল ওয়ালা ওয়াল বারা (ঈমানদারদের সাথে বন্ধুত্ব এবং কাফেরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা)।

❂ ১৬) আচরণে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করা।

❂ ১৭) আত্মসমালোচনা করা।

আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের ঈমান মজবুত করে দেন, আমাদের সকল মানসিক অস্থিরতা ও সমস্যা দুর করে দেন-
যেন আমরা তাঁর ইবাদত-বন্দেগীতে সত্যিকারের স্বাভ অনুভব করতে পারি। তার ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকার, তাঁর ভয়ে অশ্রু বিগলিত করা এবং তার পথে চলার মধ্যে প্রকৃত মানসিক তৃপ্তি, প্রশান্তি ও আনন্দ নিহীত রয়েছে।
আল্লাহ যেন এগুলো আমাদের অন্তরে ঢেলে দেন এবং আমাদের অন্তরগুলোকে কেবল তাঁর পথেই অবিচল রাখেন মৃত্যু অবধি।। নিশ্চয় তিনি সর্বময় কতৃত্বের অধিকারী।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার,

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button