জ্ঞানের কল্যাণ
জ্ঞানের কল্যাণ
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
“আপনি যা জানতেন না, আল্লাহ আপনাকে তা শিখিয়েছেন। আর আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ চির মহান।” (সূরা-৪ আন নিসা: আয়াত-১১৩)
মূর্খতা মানুষের বিবেক ও আত্মাকে হত্যা করে।
إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
“আমি আপনাকে সতর্ক করছি, আপনি যেন একজন মূর্খ না হন।” (১১-সূরা হুদ: আয়াত-৪৬)
জ্ঞান এমন এক আলো, যা প্রজ্ঞার দিকে নিয়ে যায়। এটি মানুষের আত্মার প্রাণ ও চরিত্রের ইন্ধন।
“যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি ও মানুষের মধ্যে চলার জন্য একটি আলো দিয়েছি, সে কি তার মতো, যে অন্ধকারে আছে এবং সেখান থেকে সে কখনও বের হয়ে আসতে পারবে না?” (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-১২২)
সুখ ও মনের তেজ শিক্ষার মাধ্যমে আসে। (২২তম সংস্করণের মূল আরবী কিতাবে আছে: আনন্দ ও প্রফুল্লতা জ্ঞানের মাধ্যমে আসে।) কারণ জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ তার উদ্দেশ্য পুরো করতে পারে এবং পূর্বে তার থেকে যা গোপন করা হয়েছিল, তা আবিষ্কার করতে পারে। আত্মা স্বভাবগতভাবেই মনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে।
মূর্খতা হলো বিরক্তি ও বিষন্নতা। কেননা মূর্খ ব্যক্তি এমন জীবন যাপন করে, যা কখনও নতুন বা মন-উত্তেজক কিছু উৎসর্গ করে না। গতকাল আজকের মতোই, আজও পালাক্রমে আগামীকালের মতোই। (অর্থাৎ মূর্খদেরর সময় জ্ঞান নেই, তাদের কাছে সময়ের মূল্য নেই। তারা মূর্খতার কারণে অতীতকে যেভাবে নষ্ট করেছে, বর্তমানকেও সেভাবে নষ্ট করে ও একইভাবে ভবিষ্যৎকেও নষ্ট করবে -অনুবাদক)।
আপনি যদি সুখ চান তবে জ্ঞান ও শিক্ষার সন্ধান করুন, তাহলেই দেখবেন, দুশ্চিন্তা, হতাশা ও দুঃখ-বেদনা আপনাকে ছেড়ে পালাবে।
“এবং বলুন: প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” (সূরা-২০ ত্বাহা: আয়াত-১১৪)
“তোমার প্রভু- যিনি (তোমাকে এবং সবকিছু) সৃষ্টি করেছেন, তোমার সে (মহান) প্রভুর নামে পড়।” (৯৬-সূরা আল আলাক: আয়াত-১)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে তিনি দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।”
অতএব, কেহ মূর্খ হলে সে যেন তার সম্পদ ও তার সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বড়াই না করে : তার জীবন অর্থহীন এবং তার কৃতিত্ব শোচনীয়ভাবে অসম্পূর্ণ।
“আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য বলে যে জানে তবে কি সে তার মতো যে অন্ধ?” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-১৯)
কুরআনের প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা যামাখশারী (রহঃ) কবিতাকারে বলেছেন-
سهري لتنقيح العلوم ألذ لي * من وصل غانية وطيب عناق
وتمايلي طربا لحل عويصة * أشهى وأحلى من مدامة ساقي
وصرير أقلامي على أوراقها * أحلى من الدوكاء والعشاق
وألذ من نقر الفتاة لدفها * نقري لألقي الرمل عن أوراقي
يا من يحاول بالأماني رتبتي * كم بين مستغل وآخر راقي
أأبيت سهران الدجى وتبيته * نوما وتبغي بعد ذاك لحاقي
১. “ইলম শিক্ষায় আমি যে বিনিদ্র রজনী যাপন করি তা আমার কাছে সম্মোহনকারিনী রমণীর সঙ্গ বা আলিঙ্গনের চেয়েও বেশি প্রিয়।
২. কোন জটিল বিষয় বুঝার সময় আমার হৃদয়ের গভীরে আনন্দ উল্লাস হয় তা আমার নিকট সর্বাপেক্ষা চমৎকার পানীয়ের চেয়েও বেশি সুস্বাদু।
৩. কাগজের উপরে (লিখার সময়ে) আমার কলমে যে খসখস্ শব্দ হয় তা প্রেমিক-প্রেমিকার (আলিঙ্গনের শব্দের) চেয়েও বেশি মজাদার।
৪. কাগজের ধুলি ঝাড়ার সময় আমার হাতে যে শব্দ হয় তা ঢোল বাজানোর সময় নারীর হাতে যে শব্দ হয় তার চেয়েও বেশি আনন্দদায়ক।
৫. ওহে! যে শুধু বৃথা আশার মাধ্যমে আমার সমান মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা করে, অনেক বেশি উচ্চ বলে যে চড়তে কষ্ট পায় তার মাঝে আর অন্যজন যে চড়ে ও চূড়ায় পৌছে তার মাঝে কতইনা বেশি পার্থক্য!
৬. আমি রাতভর জেগে থাকি আর তুমি তখন ঘুমিয়ে থাক, অথচ তুমি আমাকে ছাড়িয়ে যেতে চাও! শিক্ষা কতই না মহৎ! আর এর মাধ্যমে আত্মা কতই না সুখী হয়!
“যে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আসা সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপর আছে সে কি তার মত, যার জন্য তার মন্দ কাজকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে আর যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে?” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল: আয়াত-১৪)