লেনদেন ও ব্যবসা

প্রশ্ন : ইটভাটার মালিককে ১ লক্ষ টাকা এক বছরের জন্য প্রদান করি এই শর্তে যে, বছর শেষে আমাকে ১৯ হাজার ইট দেবে। আর ঐ সময় প্রতি হাজার ইটের মূল্য ৭ হাজার টাকা করে নিলে সেক্ষেত্রে আমাকে দিবে ১,৩৩,০০০ টাকা। কিন্তু আমি যদি তার কাছে ইট বিক্রি করে দিই, তবে সেক্ষেত্রে আমাকে দিবে ১,২০,০০০ টাকা। উক্ত টাকা আমার জন্য হালাল হবে, না-কি সূদ হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘বাইয়ে সালাম বা সালাফ’ বলা হয়। সালাম শব্দের অর্থ অগ্রিম কেনা-বেচা। ‘বাইয়ে সালাম’, ক্রয়-বিক্রয়ের এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্যদ্রব্যের অগ্রিম মূল্য নিয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করে যে, সে ভবিষ্যতের কোন একটি নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের পণ্যদ্রব্য ক্রেতাকে সরবরাহ করবে। এখানে মূল্য নগদ কিন্তু পণ্যদ্রব্য  (বিক্রিতব্য জিনিস) পরিশোধে বিলম্বিত হয় (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৪৯)।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, واتفق العلماء على مشروعيته ‘আলিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে বাইয়ে সালাম জায়েয’ (ফাৎহুল বারী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৭৬ )। তবে এই অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য শর্ত হল নির্ধারিত পরিমাপ, নির্দিষ্ট ওযন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ করে (ছহীহ বুখারী, হা/২২৩৯, ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৪)।

হাদীছে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, (১) ক্রেতা চুক্তির সময়ই বিক্রেতাকে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। কেননা, চুক্তির সময় ক্রেতা যদি সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করে, তাহলে তা ঋণের বিনিময়ে ঋণ বিক্রির সাদৃশ্য হয়ে যাবে। যা করতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন (আল-মুগনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪; কুয়েতি ফিকহ বিশ্বকোষ, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৭৬)। (২) বাইয়ে সালাম শুধু সেই সব পণ্যে জায়েয হবে, যে সব পণ্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মান, পরিমাণ, পরিমাপ ও সংখ্যা পূর্বেই পরিপূর্ণরূপে নির্ধারণ করা সম্ভব। (৩) যে পণ্যদ্রব্যে সালাম করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তার ধরন এবং গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়াও অপিরহার্য। (৪) বিক্রিতব্য জিনিস পরিশোধের তারিখ এবং স্থান চুক্তিতে নির্ধারণ করে নেয়া অপরিহার্য।

টাকার বিনিময়ে টাকা বেশি নেয়া নিষিদ্ধ। এটা স্পষ্ট সূদ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৩০)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। আর যে বেশি দিবে বা বেশি নিবে সে সূদের লেনদেন করল’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৮০, ১৫৯৬)। উসামা ইবনু যায়দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেবল বাকীতে বৃদ্ধি করলেই সূদ হয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৮১, ৩৯৮২, ৩৯৮৩, ১৫৯৬)।

অতএব ১ লক্ষ প্রদান করে ১ লক্ষ ২০ হাজার গ্রহণ করা হালাল হবে না। প্রশ্নে বর্ণিত চুক্তি সাপেক্ষে নির্ধারিত দিনে ১৯ হাজার ইটই গ্রহণ করতে হবে। ইটের পরিবর্তে বিনিময় নেয়া যাবে না। কেননা এর মধ্যে সূদের সম্ভাবনা আছে (বাদায়িউছ ছানাঈ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২০১)।

শর্তানুযায়ী ১৯ হাজার ইট আপনার হস্তগত হয়নি। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা হারাম। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি আমাদের নিকট এ মর্মে আদেশ দিয়ে লোক পাঠাতেন যে, এ মাল বিক্রয় করার পূর্বেই যেন ক্রয়ের স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বরং নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার আগেই বিক্রয় করলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হত (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা নিজ আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রয়  করতে পারবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫; বাদায়িউছ ছানাঈ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৫১; কুয়েতী ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২১৮-২১৯)।

 

সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button