হাদীস: মুয়াজ্জিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড়ের অধিকারী হবেন।
মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফইয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিনে মুয়াজ্জিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড়ের অধিকারী হবেন।”
[সহীহ] – [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]ব্যাখ্যা: মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিনে মুয়াজ্জিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড়ের অধিকারী হবেন।” হাদীসে বর্ণিত (أعناق) শব্দটি (عنق) এর বহুবচন। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমগণ এর অর্থ নির্ণয়ে মতানৈক্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা প্রকৃত উঁচু ঘাড়ই উদ্দেশ্য। কিয়ামতের দিনে মানুষ যখন ঘামে নিমজ্জিত হবে তখন মুয়াজ্জিনদের ঘাড় উঁচু হবে, ফলে কিয়ামতের দিনের সে বিপদ ও ঘাম তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারা আল্লাহর রহমত লাভের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকবেন; কেননা সাওয়াবের আকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি তার ব্যাপারে যা কিছু হয় তা জানতে ও দেখতে ঘাড় উঁচু করে রাখেন। অতএব, হাদীসের অর্থ হলো, তারা অধিক সাওয়াব দেখতে সমর্থ হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তারা কিয়ামতের দিন নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন। আরবগণ তাদের নেতৃত্বশীলকে উঁচু ঘাড়ের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদল বলেছেন, তারা বেশি অনুসারীর অধিকারী হবেন। উপরোক্ত ব্যাখ্যা ছাড়াও অনেকে অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। হাদীসে বর্ণিত (يوم القيامة) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তা‘আলা যখন মানুষদেরকে পুনরুত্থিত করে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন সেদিন মুয়াজ্জিনগণ অন্যদের থেকে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবেন। আর তা হলো তারা উঁচু ঘাড় বিশিষ্ট হবেন। তাদের সুউঁচ্চ মর্যাদা ও সম্মান সকলের কাছে প্রকাশ পাওয়ার কারণে সবাই তাদেরকে চিনতে পারবেন। কেননা মুয়াজ্জিনগণ দুনিয়াতে আল্লাহর বড়ত্ব, তাঁর তাওহীদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্য, সালাত ও কল্যাণের দিকে দাওয়াত দিতেন। তারা উঁচু স্থান থেকে এসব ঘোষণা করতেন। তাই তাদের কাজের অনুরূপ তাদের গর্দান ও মুখমণ্ডল উঁচু করে তাদেরকে পুরষ্কার প্রদান করা হবে। অতএব মানুষের উচিত মুয়াজ্জিন হতে সচেষ্ট হওয়া; এমনকি মসজিদ না পেলেও (সালাত আদায়ের জন্য) আযান দেওয়া। অতএব এ মহৎ কাজে গিয়ে আসা উচিৎ। দেখুন, শরহে মুসলিম, (৪/৯১); শরহে রিয়াদুস সালিহীন, (৫/৩২)।