হাদিস ও হাদিসের জ্ঞানসমূহ

হাদীস: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ভালো কাজ করা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা ও মিসকিনদের ভালোবাসা প্রার্থনা করছি। আরো প্রার্থনা করছি, আপনি আমাকে ক্ষমা ও রহম করুন। আর যদি কোনো কওমকে ফেতনায় ফেলতে চান, আমাকে ফিতনা ছাড়াই মৃত্যু দান করুন এবং আপনার ভালোবাসা, যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা এবং এমন আমলের তাওফিক প্রার্থনা করছি, যা আপনার ভালোবাসার দিকে নিয়ে যায়।

মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দিন সকালে ফজরের সালাতে আমাদের থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আড়ালে থাকলেন। এক পর্যায়ে আমরা সূর্যের চোখ দেখার উপক্রম হলাম। ইত্যবসরে তিনি দ্রুত এলেন এবং সালাতের আযান দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত পড়লেন এবং সংক্ষিপ্ত করলেন। সালাম ফিরিয়ে আমাদেরকে ডেকে বললেন, “তোমরা তোমাদের স্থানে যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো।” অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, “যে বিষয় ভোরে আমাকে তোমাদের থেকে আটকে রেখেছিল সে সম্পর্কে বলছি। আমি রাতে ঘুম থেকে উঠেছি। অতঃপর অযু করে সালাত পড়েছি, যতটুকু আমার তাওফিকে ছিল। আমি সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম এবং আমার নিকট খুব কঠিন মনে হল। ইত্যবসরে আমি আমার রবকে সবচেয়ে উত্তম আকৃতিতে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আমার রব। তিনি বললেন, উর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি বললাম, জানি না, হে আমার রব। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তিনি বলেন, অত:পর আমি তাকে দেখলাম তিনি তাঁর হাতের তালু আমার দুই কাধের মাঝখানে রেখেছেন। আমি বুকের মধ্যে তার আঙ্গুলের শীতলতা অনুভব করেছি। ফলে আমার সামনে সব কিছুই উন্মুক্ত হল এবং আমি জানলাম। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ, আমি বললাম, হাযির আছি হে আমার রব। তিনি বললেন, উর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি বললাম, কাফফারার ক্ষেত্রে। তিনি বললেন, কাফফারা কী? আমি বললাম, জামাতের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা। আর কষ্টের সময় ভালো করে অযু করা। তিনি বলেন, অতঃপর কিসের ব্যাপারে? আমি বললাম, খাদ্য দান করা ও নরম কথা বলা এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত পড়া। তিনি বলেন, চাও। আমি বললাম, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ভালো কাজ করা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা ও মিসকিনদের ভালোবাসা প্রার্থনা করছি। আমি আপনার ক্ষমা ও রহম প্রার্থনা করছি। আর যদি কোনো কওমকে ফেতনায় ফেলতে চান, আমাকে ফিতনা ছাড়াই মৃত্যু দান করুন এবং আপনার ভালোবাসা, যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা এবং এমন আমলের তাওফিক প্রার্থনা করছি, যা আপনার ভালোবাসার দিকে নিয়ে যায়।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটাই সত্য, তোমরা এটা পড় ও ভালো করে শিখে নাও।

[সহীহ] – [এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। – এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।]

ব্যাখ্যা: মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু সংবাদ দিচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক দিন ফজরের সালাতের জন্য তাদের কাছে আসতে দেরি করেন, প্রায় সূর্য উদিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি তাদের কাছে দ্রুত আসলেন এবং ইকামত দিতে বললেন। অতঃপর তাদের সাথে সালাত পড়লেন ও হালকা করলেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, তাদেরকে তাদের কাতারে নিজ নিজ জায়গায় থাকতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাদেরকে ফজর সালাতে দেরি করার কারণ বর্ণনা করলেন যে, তিনি রাতে উঠেছেন ও অযু করেছেন, অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সালাত পড়েছেন। এক সময় তিনি সালাতেই ঘুমিয়ে যান। ইত্যবসরে তার রবকে সব চেয়ে সুন্দর আকৃতিতে দেখতে পান। তার রব তাকে প্রশ্ন করেন, নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা কোন বিষয়ে কথাবার্তা বলছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, আমি জানি না। এরূপ প্রশ্ন ও উত্তর তিনবার ঘটেছে। অতঃপর রব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’কাধের উপর নিজের হাত রাখেন। এমন কি তিনি আল্লাহর আঙ্গুলের শীতলতা বুকে অনুভব করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রবের যেরূপ বিশেষণ বর্ণনা করেছেন সেটাই হক ও সত্য। বস্তুত আল্লাহ নিজেকে যেভাবে বিশেষিত করেছেন কোনো সাদৃশ্য পেশ করা ছাড়া সেভাবেই ঈমান আনা ও তার প্রতি বিশ্বাস করা ওয়াজিব। আর যার কাছে এগুলো থেকে কোনো কিছু কঠিন ও অস্পষ্ট মনে হবে তার উচিত সেই বিজ্ঞ লোকদের মত বলা, যাদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তারা অস্পষ্ট অর্থবোধক শব্দের ক্ষেত্রে বলে, “সব কিছুই আমাদের রবের পক্ষ থেকে আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত:৭) যে ব্যাপারে ইলম নেই সে ব্যাপারে কিছু বলতে চেষ্টা না করাই শ্রেয়। কারণ এরূপ হলে তার উপর ধ্বংসের আশঙ্কা রয়েছে। অতএব মুমিনরা যখনই এ জাতীয় কোনো কথা শোনে, তখন তারা বলে, এটা হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূলের সংবাদ এবং আল্লাহ ও তার রাসূল সত্যই বলেছেন। ফলে তাদের ঈমান ও আনুগত্য বেড়ে যায়। আর রব যখন স্বীয় হাত তার কাঁধের উপর রেখেছেন তখন তার সামনে সব খুলে গেছে এবং তিনি উত্তর জেনে গেছেন। তাই তিনি বলেছেন, তারা কথা বলছিল, আলোচনা করছিল ও বিতর্ক করছিল পাপ মোচন করা সম্পর্কে। আর তাদের বিতর্ক করার অর্থ হচ্ছে, এই আমলগুলো তারা জোড়ালোভাবে সমর্থন করেন এবং এগুলো নিয়ে আসমানে ওঠে যান। অথবা তার ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে কথা বলছিলেন। আর সেই স্বভাবগুলো হচ্ছে, জামাতের সালাতে হেঁটে চলা, সালাত শেষে যিকির, তিলাওয়াত, ইলম শিখা ও তা শিখানোর উদ্দেশে মসজিদে বসে থাকা। অযু পূর্ণ করা এবং যখন নফস অযু করতে চায় না, যেমন কঠিন শীতের সময়, তখন শরীয়তের নির্দেশিত জায়গায় পানি পৌঁছানো। অতঃপর রব তাকে বলেন, কোন বিষয়ে নৈকট্যশীল ফেরেশতারা বিতর্ক করছিল? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মানুষদের খাবার খাওয়ানো, মানুষদের সাথে সুন্দর কথা বলা এবং রাতে যখন মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় করা। অতঃপর রব তাকে বললেন, তোমার মন যা চায়, তা আমার নিকট প্রার্থনা কর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট প্রার্থনা করলেন, তাকে যেন প্রত্যেক ভালো কাজ করা ও খারাপ ত্যাগ করার তাওফিক দেওয়া হয় এবং তার নিকট যেন মিসকিন ও ফকিরদের প্রিয় করে দেওয়া হয় এবং তাকে যেন ক্ষমা ও রহম করা হয়। আল্লাহ যখন কোনো কওমকে ফিতনায় নিমজ্জিত ও গোমরাহ করতে চান, তখন তাকে যেন বিনা ফিতনা ও গোমরাহ করা ছাড়াই মৃত্যু দেন এবং তাকে যেন তার ভালোবাসা এবং যারা তাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা এবং এমন আমল করার তাওফিক দান করেন, যা তাকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দিবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথীদের সংবাদ দিলেন যে, এই স্বপ্ন সত্য এবং তাদেরকে এটা নিয়ে আলোচনা করতে এবং তার অর্থ ও বিধান ভালো করে শিখতে নির্দেশ দিলেন।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button