প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত

প্রশ্ন : ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়াদের ব্যাপারে একজন মুমিনের কেমন ধারণা থাকা উচিত?

উত্তর : শরী‘আতের পরিভাষায় হিজড়া বলা হয়, যার পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টি রয়েছে অথবা কোনটিই নেই, শুধু পেশাবের জন্য একটিমাত্র ছিদ্রপথ রয়েছে। সংক্ষেপে একই দেহে স্ত্রী এবং পুংচিহ্ন যুক্ত অথবা উভয় চিহ্নবিযুক্ত মানুষই হল লিঙ্গ প্রতিবন্ধী বা হিজড়া (কামূসুল ফিক্বহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৭৭)।

তবে যে সকল হিজড়ার মাঝে দাড়ি গোঁফ গজানো, স্বপ্নদোষ জাতীয় নরচিহ্ন প্রকাশিত হয় তারা পুরুষ শ্রেণীভুক্ত হিজড়া। আর যে সকল হিজড়ার মাঝে স্তন, ঋতুস্রাব এবং নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তারা নারী শ্রেণীভুক্ত হিজড়া। এদের খুনসা গায়ির মুশকিলা অর্থাৎ যাদের সহজে চিনতে পারা যায় বলা হয়। অন্যদিকে যে সকল হিজড়ার মাঝে নারী-পুরুষের কোন নিদর্শনই পরিলক্ষিত হয় না অথবা উভয় ধরনের নিদর্শনই সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়, শরী‘আতের পরিভাষায় তাদেরকে খুনসায়ে মুশকিলা তথা জটিল হিজড়া বলা হয় এবং এরাই প্রকৃত হিজড়া’ (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ২১-২৩)।

ভালো মন্দের মানদণ্ডে হিজড়া দুই প্রকার। যথা : (ক) যারা সৃষ্টিগতভাবে হিজড়া, যারা অসহায়। (খ) যারা সৃষ্টিগতভাবে হিজড়া নয়, বরং কৃত্রিম উপায়ে বা আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গে পরিণত হয়েছে, কথা-বার্তায় এবং আচরণে নারীদের বৈশিষ্টের সঙ্গে সাদৃশ্য স্থাপন করে। এরা মহাপাপী এবং অভিশপ্ত। কেননা লিঙ্গ পরিবর্তন করা হারাম এবং সে ছালাত আদায়কারী হলে তাকে নির্বাসন দিতে হবে, অন্যথা হত্যা করতে হবে (আবূ দাঊদ, হা/৪৯২৮; মিশকাত, হা/৪৪৮১, সনদ ছহীহ)।

যুদ্ধে থাকাকালীন ছাহাবীগণের সঙ্গে তাদের বিবিগণ না থাকায় তারা খাসি হতে চাইলে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিষেধ করেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০৪)। এমনকি পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৬; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৩০; মিশকাত, হা/৪৪২৮; বিস্তারিত দ্র. : সুবুলুস সালাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৯; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, প্রশ্ন নং-১১৪৬৭০)।

ইসলামী শরী‘আতে লিঙ্গ প্রতিবন্ধী বা হিজড়ারা অন্যদের ন্যায় সমান মর্যাদার অধিকারী। কেননা মর্যাদা-অমর্যাদার মাপকাঠি পরিপূর্ণ মানুষের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং তাক্বওয়াই হল সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি (সূরা আল-হুজুরাত :১৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪)। তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে আখ্যায়িত করা যাবে না। ভিন্ন সম্প্রদায় হিসাবে আখ্যায়িত করে বঞ্চিত করা যাবে না। তাদের যে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অধিকার রয়েছে, সেগুলো থেকেও তাদেরকে মাহরূম করা যাবে না। তাদেরকে অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, ঘৃণা, তিরস্কার, ভৎর্সনা করার কারণে সবকিছু থেকে তারা বিচ্ছন্ন। ফলে অধিকাংশই অন্যের কাছে হাত পেতে কিংবা চাঁদাবাজি করে জীবনযাপন করে থাকে। অথচ ইসলাম তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। কোনভাবেই ইসলামে তাদের অবহেলা করা হয়নি (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৩২০০৮৯)।

 

সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button