বিবাহ ও দাম্পত্য

প্রশ্নঃ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার হুকুম কি?

উত্তরঃ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেন, “তালাক দেওয়ার ব্যপারে শরীয়তের মূলনীতি হচ্ছেঃ তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ।
তালাক দেওয়া শুধুমাত্র তখনই জায়েজ হবে, যখন তালাক দেওয়ার ‘উপযুক্ত কারণ’ থাকা সাপেক্ষে তালাক দেওয়ার ‘প্রয়োজনীয়তা’ থাকে।”
(মাজমু আল-ফাতওয়াঃ ৩৩/৮১)

উপযুক্ত কারণ কি?

সংসারে চলতে গিয়ে অনেক কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হতে পারে। বা স্বামী-স্ত্রী একজন আরেক জনের উপর অনেক কারণেই অসন্তুষ্ট হতে পারে।
তাই বলে মন চাইলেই কি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেবে?

আল্লাহ তাআ’লা স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের “পোশাক” বলেছেন। আমাদের পোশাকে যদি একটু ময়লা লাগে, আমরা কি পোশাকটা ফেলে দেই?
না।
বরং, আমরা সেটা সুন্দর করে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করি।
ঠিক তেমনি ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, সামান্য মনোমালিন্য বা বাঁধা-বাঁধির কারণে সংসার ভেঙ্গে না দিতে।
এতে যেমন দুইটা মানুষের জীবনের উপরে আঘাত আসে, আবার তাদের সাথে তাদের ছেলেমেয়ে ও দুইটি পরিবারের উপরেও অনেক দুঃখ নেমে আসে।

যে কারণগুলোর কারণে তালাক দেওয়া বৈধ হতে পারেঃ

(১) স্ত্রী যদি চরিত্রহীনা, ব্যভিচারী হয়, কিংবা ফাহেশা কাজে লিপ্ত থাকে।
(২) স্ত্রী যদি বেনামাযী, দ্বীনদার না হয়, অথবা তার কারণে স্বামীর দ্বীন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
(৩) স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী বা সন্তানদের জীবনের কোন ক্ষতির কোনো আশংকা থাকে।
(৪) স্ত্রী অবাধ্য, অহংকারী, কটুভাষী হয়, এবং স্বামীর হক্ক আদায় করতে অস্বীকার করে।

বোঝাই যাচ্ছে, এরকম গুরতর কোন কারণ থাকলে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া বৈধ হতে পারে।
কিন্তু কেউ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার কি শাস্তি হবে?

প্রথম কথাঃ এর দ্বারা কি একজন মানুষ উপর যুলুম করা হচ্ছেনা?
একজনের জীবন বিপন্ন করে দেওয়া হচ্ছেনা?
যুলুমের কি শাস্তির কথা কুরআন-হাদীসে বলা হয়েছে?
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা স্বয়ং নিজের উপর যুলুম করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন, সেইখানে আমাদের মতো তুচ্ছ একজন বান্দার কোনো অধিকার আছে কারো উপর যুলুম করার?
একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “হে আমার বান্দারা! আমি নিজের ওপর যুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করে দিয়েছি।
সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর যুলুম করো না।”

(মুসলিম, তিরমিজী)

তালাক সম্প্রর্কিত প্রশ্ন উত্তর

তালাক কি?

তালাক শব্দের অর্থ ‘বিচ্ছিন্ন’, ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়।

তালাক দেওয়ার কারন কি?

(১) স্ত্রী যদি চরিত্রহীনা, ব্যভিচারী হয়, কিংবা ফাহেশা কাজে লিপ্ত থাকে।
(২) স্ত্রী যদি বেনামাযী, দ্বীনদার না হয়, অথবা তার কারণে স্বামীর দ্বীন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
(৩) স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী বা সন্তানদের জীবনের কোন ক্ষতির কোনো আশংকা থাকে।
(৪) স্ত্রী অবাধ্য, অহংকারী, কটুভাষী হয়, এবং স্বামীর হক্ক আদায় করতে অস্বীকার করে।

স্ত্রী কর্তৃক তালাক আইন

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেন, “তালাক দেওয়ার ব্যপারে শরীয়তের মূলনীতি হচ্ছেঃ তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ।
তালাক দেওয়া শুধুমাত্র তখনই জায়েজ হবে, যখন তালাক দেওয়ার ‘উপযুক্ত কারণ’ থাকা সাপেক্ষে তালাক দেওয়ার ‘প্রয়োজনীয়তা’ থাকে।”
(মাজমু আল-ফাতওয়াঃ ৩৩/৮১)

মোবাইলে তালাক

স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক উচ্চারণ করার দ্বারাই স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে যায়।এজন্য তালাক শব্দটি স্ত্রীর নিজে শোনা যেমন জরুরী নয়, তেমনি সংবাদ স্ত্রীর কাছে পৌছানোও জরুরী নয়। এমনিতেই তালাক পতিত হয়ে যায়। বাকি স্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া জরুরী যেন স্ত্রী ইদ্দত পালন করে স্বাধীন হয়ে যেতে পারে।

এক বৈঠকে তিন তালাক

এক সাথে প্রদত্ত তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে।
ইবনু আব্বাস রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু রুকানা রা: যখন তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন তখন রাসূল (ছা:) বললেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নাও’। তিনি বললেন, ‘আমি তাকে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূল (ছা:) বললেন, ‘আমি তা জানি, তুমি তাকে ফিরিয়ে নাও’ (আবুুদাউদ হা/২১৯৬)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

আবু রুকানা (রা:) যখন তাঁর স্ত্রীকে এক সাথে তিন তালাক দেন, তখন তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাসূল (ছা:) তাঁর স্ত্রীকে তাঁর কাছে ফেরৎ দেন এবং বলেন, এটি এক তালাক হিসাবে গণ্য।
(আহমাদ হা/২৩৮৭; ফাতাওয়া
ইবনে তায়মিয়াহ ২২/২৭৪ পৃঃ)।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button