তাওহীদ

শয়তান মুমিনদের অন্তরে যে অসঅসা (কুমন্ত্রণা) দেয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?

প্রশ্নঃ শয়তান মুমিনদের অন্তরে যে অসঅসা (কুমন্ত্রণা) দেয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?

উত্তর: শান্ত চিত্তে ধৈর্য অবলম্বন করে শয়তানের অসঅসা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। সহীহাইনে (বুখারী ও মুসলিম) বর্ণিত আছে;  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  

” يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ “

‘‘শয়তান তোমাদের কাছে এসে বলবে; ‘এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে? আর অবশেষে বলবে তোমাদের প্রতিপালকের স্রষ্টা কে? শয়তান যখন এ অবস্থায় পৌঁছবে তখন তোমরা আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে থেমে যাবে’’। (বুখারী, ৩২৭৬; মুসলিম, ১৩৪)

অন্য এক বর্ণনায় আছে যে; 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلُوهُ: إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ، قَالَ: «وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ؟» قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ»

‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করেন যে, আমাদের মনের মধ্যে বড় ধরনের এমন কিছুর উদ্ভব ঘটে যা বলার সাহস আমরা পাই না। অতঃপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, তোমাদের মধ্যে হয়ত ওগুলোর উদ্ভব হয়েছে? তারা বললেন, হ্যাঁ। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন; ওরকম হওয়াটাই (ব্যক্ত না করাটাই) সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ’’। (মুসলিম, ১৩২)

 আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন: তিনি বলেন: 

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَحَدَنَا يَجِدُ فِي نَفْسِهِ، يُعَرِّضُ بِالشَّيْءِ، لَأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ، فَقَالَ: «[ص:330] اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ كَيْدَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ»

‘এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মনের মধ্যে কিছু বিষয়ে কথোপকথন হয় ফলে আমাদের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে অস্বস্তিকর এ অবস্থার কথা ব্যক্ত করার চেয়েও পুড়ে অঙ্গার হওয়া তার কাছে বেশি পছন্দ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি শয়তানের ষড়যন্ত্রকে অসঅসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১১২; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৪০ হাদীস: ৩১৬১)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: অসঅসাকে জোরালোভাবে অপছন্দ করে এড়িয়ে থাকতে চাওয়া সত্বেও অসঅসায় আক্রান্ত হওয়া, অতঃপর অন্তর থেকে তা প্রতিরোধ করা সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ। যেমন: একজন মুজাহিদের কাছে শত্রু আসলে তাকে সে প্রতিরোধ করে, আর এটাই জিহাদের ‘‘মহত্ব’’। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে এধরনের অসঅসা প্রতিরোধ করা এবং মানসিক যন্ত্রনা-মুক্ত থাকা। আরও জ্ঞাতব্য যে, অসঅসায় তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 

«إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ»

‘‘অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের মধ্যে তাদেরকে পাকড়াও করবেন না যাদের অন্তরে অসঅসার উদ্ভব হয় যতক্ষণ সে তা অনুযায়ী কোনো কাজ না করবে কিংবা অসঅসার কথা কারো কাছে বলে বেড়াবে’’। (মুত্তাফিকুন আলাইহ, বুখারী, ৫২৬৯; মুসলিম, ১২৭)

সূত্রঃ প্রশ্নোত্তরে তাওহীদ
লেখকঃ ড. ইবরাহীম ইবন সালেহ আল-খুদ্বায়রী

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button