রোজা / সিয়াম

রমযান মাসের কিয়ামুল লাইলের ফযিলত পাওয়ার জন্য রমযানের সব রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করা কি শর্ত?

প্রশ্নঃ আমার কাছে রমযানের কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে একটি প্রশ্ন আছে। “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশা নিয়ে রমযান মাসে কিয়াম পালন করবে…” এ হাদিসের অর্থ কি গোটা রমযান মাসের প্রতি রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে হবে? যদি ত্রিশরাতের মধ্যে একটি রাত কেউ বাদ দেয় হাদিসে বর্ণিত পুরস্কার ও ক্ষমা কি সে পাবে না? কিয়ামুল লাইল এর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কোনটি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।

এক:

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশা নিয়ে রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল আদায় করবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে[সহিহ বুখারী (২০০৯) ও সহিহ মুসলিম (৭৫৯)]

রমযান মাস ব্যবহার করায় কথাটি রমযানের সকল রাতকে অন্তর্ভুক্ত করছে। তাই হাদিসের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে— মাসের সকল রাতে কিয়াম পালন করার সাথে উল্লেখিত সওয়াবটি সম্পৃক্ত। আস-সানআনী (রহঃ) বলেন: “হাদিসের এমন একটি অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি মাসের সকল রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করাকে উদ্দেশ্য করেছেন। যে ব্যক্তি কিছু রাত কিয়ামুল লাইল পালন করবে সে ব্যক্তির জন্য উল্লেখিত ক্ষমা হাছিল হবে না। এটাই হাদিসের প্রত্যেক্ষ অর্থ।”[সুবুলুস সালাম (৪/১৮২) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি রমযানে কিয়াম আদায় করবে” অর্থাৎ রমযান মাসে এ কথাটি গোটা মাসকে শামিল করছে; মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত[শারহু বুলুগুল মারাম (৩/২৯০)]

যে ব্যক্তি মাসের কিছু রাতে বিশেষ কোন ওজরের কারণে কিয়াম পালন করতে পারেনি তার ব্যাপারে আশা করা যায় যে, হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব তার জন্যে অর্জিত হবে।

আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যদি কোন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে তার জন্য সে মুকীম (গৃহ অবস্থানকারী) থাকা অবস্থায় কিংবা সুস্থ থাকাবস্থায় যে আমলগুলো করত সেগুলো লিখে দেয়া হবে[সহিহ বুখারী (২৯৯৬)]

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোন ব্যক্তির যদি রাতের নামাযের অভ্যাস থাকে; কিন্তু কোনদিন যদি তাকে ঘুমে কাবু করে ফেলে; তাহলে তার জন্য নামায পড়ার সওয়াব লিখে দেয়া হবে আর তার ঘুম হবে তার জন্য সদকা[সুনানে আবু দাউদ (১৩১৪); আলবানী ইরওয়াউল গালিল গ্রন্থে (২/২০৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আর যদি অলসতা করে কিছু রাতের নামায না পড়ে তাহলে হাদিসের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে সে ব্যক্তি উল্লেখিত সওয়াব পাবে না।

দুই:

রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল এর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা: শরিয়ত কিয়ামুল লাইলের নির্দিষ্ট কোন রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করেনি।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “রমযানের কিয়াম: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন সংখ্যা নির্ধারণ করেননি…”।

যে ব্যক্তি মনে করছে যে, রমযান মাসে কিয়ামুল লাইলের নির্ধারিত সংখ্যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত; এ সংখ্যার মধ্যে বাড়ানো বা কমানো যাবে না— সে ব্যক্তি ভুলের মধ্যে আছেন…। কখনও কখনও কেউ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠলে তার ক্ষেত্রে ইবাদত দীর্ঘ করা উত্তম। আবার কখনও কখনও কেউ যদি কর্মচঞ্চলতা না পায় তখন তার ক্ষেত্রে ইবাদতকে সংক্ষিপ্ত করা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামায ছিল ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি যদি কিয়াম (দাঁড়ানো) কে দীর্ঘ করতেন তাহলে রুকু-সেজদাও দীর্ঘ করতেন। আর যদি কিয়াম (দাঁড়ানো)কে সংক্ষিপ্ত করতেন তখন রুকু-সেজদাও সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি ফরয নামায, কিয়ামুল লাইল কিংবা কুসুফ (সূর্য গ্রহণ)-এর নামায ইত্যাদি সবক্ষেত্রে এভাবে করতেন।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২২/২৭২-২৭৩)]

সারকথা: কিয়ামুল লাইলের সর্বোচ্চ কোন সীমারেখা নাই। একজন মুসলিম যত রাকাত ইচ্ছা পড়বেন।

পক্ষান্তরে, একজন মুসলিমের কিয়ামুল লাইলের সর্বনিম্ন সীমা: এক রাকাত বিতিরের নামায।

এর মাধ্যমে রমযানের কিয়ামুল লাইল পড়া অর্জিত হওয়া জানা যায় সুস্পষ্ট কিয়াসের ভিত্তিতে। যেহেতু শরিয়ত রমযান মাসে বিশেষ কিয়ামুল লাইলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে যেটি বছরের অন্য রাত্রিগুলোর কিয়ামুল লাইলের চেয়ে তাগিদপূর্ণ। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সলফে সালেহীনের অবস্থা। এমনকি এক পর্যায়ে নির্ধারিত ইমামের পেছনে মসজিদে কিয়ামুল লাইল আদায় করার বিধান আসে; অন্য নামাযের ক্ষেত্রে যে বিধান আসেনি। ইমাম সম্পূর্ণ নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় যদি কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত নামায পড়ে তাহলে তার জন্য গোটা রাত কিয়ামুল লাইল আদায় করার সওয়াব হিসাব করা হবে[সুনানে আবু দাউদ (১৩৭২), সুনানে তিরমিযি (৮০৬); তিরমিযি বলেন: এটি একটি হাসান সহীহ হাদিস]

পক্ষান্তরে, কেউ যদি একাকী কিয়ামুল লাইল আদায় করে তার ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে আদায় করতেন সেভাবে মনোযোগের সাথে ১১ রাকাত আদায় করা; যাতে করে সে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় নামায পড়া বাস্তাবায়ন করতে পারেন।

আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন: রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামায পড়া কেমন ছিল? তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া ১১ রাকাতের বেশি নামায আদায় করতেন না। তিনি চার রাকাত নামায আদায় করতেন; এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। এরপর তিনি আরও চার রাকাত নামায পড়তেন এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। এরপর তিনি তিন রাকাত নামায পড়তেন।”[সহিহ বুখারী (১১৪৭) ও সহিহ মুসলিম (৭৩৮)]

যদি কেউ এর চেয়ে বাড়ায় তাতেও কোন অসুবিধা নেই।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button