রোজা / সিয়াম

রমজান মাসের ৩০ আমল (২য় পর্ব)

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা

রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা,

﴿ ﻟَﻴۡﻠَﺔُ ﭐﻟۡﻘَﺪۡﺭِ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻟۡﻒِ ﺷَﻬۡﺮٖ ٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻘﺪﺭ : ٣ ]

‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’

[সূরা কদর : ৪]

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻣَﻦْ ﻳَﻘُﻢْ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ ».

‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’

[সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]

এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

« ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣَﺎ ﻻَ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻰ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ».

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’

[সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]

লাইলাতুল কদরের দো‘আঃ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ?

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বলবেঃ

« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﻛَﺮِﻳﻢٌ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻰ »

‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’

[সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩][১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা

দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে,

« ﺇِﻥَّ ﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋِﻨْﺪَ ﻛُﻞِّ ﻓِﻄْﺮٍ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻞّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ »

‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’

[আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]

অন্য হাদীসে এসেছে,

« ﺇِﻥَّ ﻟﻠﻪَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀ ﻓِﻲْ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟِﻜُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻓِﻲْ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺩَﻋْﻮَﺓ ﻣُﺴْﺘَﺠَﺎﺑَﺔ »

‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন।

প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’

[সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২][১৮] ইফতার করা

সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা ।

কেননা হাদীসে এসেছে,

« ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ﻓَﻠْﻴُﻔْﻄِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮِ ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪِ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮَ ﻓَﻌَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻃَﻬُﻮﺭٌ »

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’

[সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]l

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন :

« ﺫَﻫَﺐَ ﺍﻟﻈَّﻤَﺄُ ﻭَﺍﺑْﺘَﻠَّﺖِ ﺍﻟْﻌُﺮُﻭﻕُ ﻭَﺛَﺒَﺖَ ﺍﻷَﺟْﺮُ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ».

“পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।”

[সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

অপর বর্ণনায় যে এসেছে

« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻟَﻚَ ﺻُﻤْﺖُ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺭِﺯْﻗِﻚَ ﺃَﻓْﻄَﺮْﺕُ »l

“হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।”

[সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮]

এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা।

[১৯] ইফতার করানো

অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার।

কেননা হাদীসে এসেছে,

« ﻣَﻦْ ﻓَﻄَّﺮَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﻣِﺜْﻞُ ﺃَﺟْﺮِﻫِﻢْ ، ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ . »

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’

[সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ][২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা

তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া।

এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮۡﺑَﺔٗ ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﻭَﻳُﺪۡﺧِﻠَﻜُﻢۡ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﺗَﺠۡﺮِﻱ ﻣِﻦ ﺗَﺤۡﺘِﻬَﺎ ﭐﻟۡﺄَﻧۡﻬَٰﺮُ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٨ ]

‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’

[সূরা আত-তাহরীম : ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺈِﻧِّﻰ ﺃَﺗُﻮﺏُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﺎﺋَﺔَ ﻣَﺮَّﺓٍ ».

‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’

[সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]

তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে,

« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ »

‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই।

তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি।

আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’

ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’

[সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬][২১] তাকওয়া অর্জন করা

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে।

আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে,

﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ١٨٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٣ ]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’

[সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

﴿ۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﻖِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺠۡﻌَﻞ ﻟَّﻪُۥ ﻣَﺨۡﺮَﺟٗﺎ ٢ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻄﻼﻕ : ٢ ]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন।

[সূরা তালাক : ০২][২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা

ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ।

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻐَﺪَﺍﺓَ ﻓِﻲ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻗَﻌَﺪَ ﻳَﺬْﻛُﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ، ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻪُ ﻛَﺄَﺟْﺮِ ﺣَﺠَّﺔٍ ﻭَﻋُﻤْﺮَﺓٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺗَﺎﻣَّﺔٍ ﺗَﺎﻣَّﺔٍ ﺗَﺎﻣَّﺔٍ »

যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে।

[সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬][২৩] ফিতরাহ দেয়া

এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

« ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺰَﻛَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ ﻗَﺒْﻞَ ﺧُﺮُﻭﺝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ »

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন।

[সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩][২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো

রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ ।

কুরআনে এসেছে,

﴿ ﻭَﻳُﻄۡﻌِﻤُﻮﻥَ ﭐﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻋَﻠَﻰٰ ﺣُﺒِّﻪِۦ ﻣِﺴۡﻜِﻴﻨٗﺎ ﻭَﻳَﺘِﻴﻤٗﺎ ﻭَﺃَﺳِﻴﺮًﺍ ٨ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ : ٨ ]

অর্থ: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।

[সূরা আদ-দাহর: ৮]

এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে,

« ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ، ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻱُّ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺗُﻄْﻌِﻢُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻭَﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻋَﺮَﻓْﺖَ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﺗَﻌْﺮِﻑْ ».

‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি?

তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’

[সহীহ আল-বুখারী : ১২

অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,

« ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ ﺃَﻃْﻌَﻢَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺟُﻮﻉٍ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻪُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻦْ ﺛِﻤَﺎﺭِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ »

‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।

[বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান][২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা

আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺗَﺴَﺎٓﺀَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺣَﺎﻡَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺭَﻗِﻴﺒٗﺎ ١ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١ ]

‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও।

আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।

[সূরা আন-নিসা: ১]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,ল

« ﺑُﻠُّﻮﺍ ﺃَﺭْﺣَﺎﻣَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻠَﺎﻡِ »

“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।”

[সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩][২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা

কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন।

তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে,

﴿ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺤۡﻦُ ﻧَﺰَّﻟۡﻨَﺎ ﭐﻟﺬِّﻛۡﺮَ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻪُۥ ﻟَﺤَٰﻔِﻈُﻮﻥَ ٩ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺠﺮ : ٩ ]

‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ –

[সূরা আল-হিজর: ৯]

যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।

আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟِﺼَﺎﺣِﺐِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺍﺭْﺗَﻖِ ﻭَﺭَﺗِّﻞْ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﺗُﺮَﺗِّﻞُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﻣَﻨْﺰِﻟَﻚَ ﻋِﻨْﺪَ ﺁﺧِﺮِ ﺁﻳَﺔٍ ﺗَﻘْﺮَﺅُﻫَﺎ ».

‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে।

কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে”

-[সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪][২৭] আল্লাহর যিকর করা

এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা। সময় পেলেই

ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ পড়া।

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﺻْﻄَﻔَﻰ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜَﻼَﻡِ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ : ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ، ﻭَﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ، ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ، ﻓَﻤَﻦْ ﻗَﺎﻝَ : ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻛُﺘِﺐَ ﻟَﻪُ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺣَﺴَﻨَﺔً ، ﻭَﺣُﻄَّﺖْ ﻋَﻨْﻪُ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺳَﻴِّﺌَﺔً ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻓَﻤِﺜْﻞُ ﺫَﻟِﻚَ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﻤِﺜْﻞُ ﺫَﻟِﻚَ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﻗِﺒَﻞِ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﻛُﺘِﺐَ ﻟَﻪُ ﺛَﻼَﺛُﻮﻥَ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﺣُﻄَّﺖْ ﻋَﻨْﻪُ ﺛَﻼَﺛُﻮﻥَ ﺳَﻴِّﺌَﺔً »

অর্থ: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ যে ব্যক্তি ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।

যে ব্যক্তি ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।

যে ব্যক্তি ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।

আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’।

[মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]l

[২৮] মিসওয়াক করা

মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে,

« ﺍﻟﺴِّﻮَﺍﻙُ ﻣَﻄْﻬَﺮَﺓٌ ﻟِﻠْﻔَﻢِ ﻣَﺮْﺿَﺎﺓٌ ﻟِﻠﺮَّﺏِّ »

অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।

[সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।

[২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো

রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল।

এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻳَﻠْﻘَﺎﻩُ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﺴَﻠِﺦَ ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ »

জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন।

[সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা

কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,

﴿ ﭐﺗَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِۦٓ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀَۗ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣَّﺎ ﺗَﺬَﻛَّﺮُﻭﻥَ ٣ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٣ ]

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ –

[সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

« ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺘَﻌَﻠَّﻢُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﻤَﺎ ﻧَﻌْﻠَﻢُ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺑَﻌْﺪَﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﺘَﻌَﻠَّﻢَ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ »

‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’

[শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

যা করণীয় নয়
রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

  1. বিলম্বে ইফতার করা।
  2. সাহরী না খাওয়া।
  3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা।
  4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা।
  5. অপচয় ও অপব্যয় করা।
  6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা।
  7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা।
  8. বেশি বেশি খাওয়া।
  9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা।
  10. বেশি বেশি ঘুমানো।
  11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য।
  12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা।
  13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা।
  14. বিদ‘আত করা ।
  15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা।

প্রিয় পাঠক!
রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে!

আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে।
কেননা হাদীসে এসেছে,

« ﻭَﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻐْﻔَﺮْ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ »

‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক’’

[শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯]।

প্রথম পর্ব পেতে:-

https://m.facebook.com/photo.php?fbid=1118358611844817&id=100010120657944&set=a.1116957605318251&source=48

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমীন!

ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻟﻪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ – ﻭﺃﺧﺮ ﺩﻋﻮﺍﻧﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ

লিখেছেনঃ হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল |

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।

ওয়েব সম্পাদনাঃ মুহাম্মাদ মাহমুদ ইবন গাফফার।

সমাপ্ত।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button