রোজা / সিয়াম

প্রশ্নঃ আমি যদি কোন দেশে স্বাওম পালন করি এবং রামাদ্বান মাসেই অন্য দেশে ভ্রমণ করি যেখানে রামাদ্বান এক দিন পর শুরু হয়েছে এবং তারা ৩০ দিন স্বাওম পালন করেছে, তবে কি আমাকে তাদের সাথে স্বিয়াম পালন করতে হবে?

উত্তরঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর।

যদি কোন ব্যাক্তি এক দেশে রামাদ্বান শুরু করার পর অন্য দেশে যায় যেখানে ‘ঈদুল ফিত্বর এক দিন দেরিতে আসে তাহলে সে স্বিয়াম পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না দ্বিতীয় দেশের লোকেরা স্বিয়াম পালন শেষ করে।

শাইখ ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ- এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-
আমি পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি যেখানে হিজরি মাস সউদি আরব এর চেয়ে একদিন দেরিতে শুরু হয়।
রামাদ্বান মাসে আমি আমার দেশে যাব। আমি যদি সউদি আরবে স্বিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি তাহলে আমার ৩১ দিন স্বাওম পালন করা হবে। আমাদের স্বিয়ামের ব্যাপারে হুকমটা কি?
আমি কতদিন স্বাওম পালন করব?

তিনি উত্তরে বলেন-
“আপনি যদি সউদি আরব বা অন্য কোন দেশে স্বিয়াম পালন শুরু করেন কিন্তু নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনি নিজের দেশের লোকদের সাথেই স্বিয়াম ভঙ্গ করবেন যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়।

কারণ নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ
“স্বাওম হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) স্বাওম পালন কর, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) ইফত্বার কর।”

কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করেন,তাহলে আপনাকে পরে একটি স্বাওম এর ক্বাদ্বা’(কাযা) আদায় করে নিতে হবে কারণ রামাদ্বান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারেনা।”
[মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি বায, (১৫/১৫৫)]

শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-‘উসাইমীন-রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-
এক মুসলিম দেশ থেকে যদি আরেক দেশে যাওয়া হয় যেখানে লোকজন প্রথম দেশের চেয়ে এক দিন দেরিতে রামাদ্বান আরম্ভ করেছে, তবে স্বিয়াম পালনের বিধান কি হবে যখন দ্বিতীয় দেশের লোকজনকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বিয়াম পালন করতে হয় ?

এবং এর বিপরীত ক্ষেত্রে কী হবে?
তিনি উত্তরে বলেনঃ

“যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে আরেক মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রামাদ্বান দেরিতে শুরু হয়, তবে তিনি ওই দেশের লোকরা স্বাওম ভঙ্গ না করা পর্যন্ত স্বিয়াম পালন করে যাবেন কারণ স্বাওম হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) স্বাওম পালন করে, আর

‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) ইফত্বার করে আর ‘ঈদুল ’আদ্বহা (আযহা) হল সেদিন যেদিন লোকেরা তোমাদের আযহা (পশু যবেহ)পালন করে।

সে এই কাজ করবে যদিও বা এজন্য তাকে এক বা এর বেশি দিন স্বিয়াম পালন করতে হয়।

এটা সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যখন সে এমন দেশে যায় যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বাওম পালন করবে যদিও বা এর ফলে দুই বা তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্বাভাবিক দিন (চব্বিশ ঘন্টা) থেকে বেড়ে যায়।

একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে যদি সে এমন কোন দেশে যায় যেখানে নতুন চাঁদ এখনও দেখা যায়নি, কারণ

নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে স্বাওম শুরু করতে বা ইফত্বার করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষন না আমরা তা দেখি। তিনি বলেছেনঃ

“তা (নতুন চাঁদ) দেখে স্বাওম শুরু কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে ইফত্বার (স্বাওম শেষ) কর।”

আর বিপরীত অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন একজন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় যেখানে রামাদ্বান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের

সাথেই স্বাওম ভঙ্গ করবেন এবং যেসব স্বাওম বাদ পড়েছে সেগুলো পরে ক্বাদ্বা’ (কাযা) আদায় করে নিবেন।

যদি একদিন বাদ পরে, তবে একদিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা)করবেন, যদি দুই দিন বাদ পড়ে, তবে দুই দিনের;যদি তিনি ২৮ দিন পর স্বাওম ভঙ্গ করেন,তাহলে দুই দিনের ক্বাদ্বা’(কাযা) করবেন যদি উভয় দেশেই মাস ৩০

দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা) করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন একটি দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।”

[মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)]

ওনার কাছে আরো জানতে চাওয়া হয়েছিল-

কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’(কাযা) পালন করতে হবে?

তিনি উত্তরে বলেন-
“দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’ (কাযা) স্বাওম পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না আর সে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায় নি।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব স্বাওম ভঙ্গ কর যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে আর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর স্বাওম ভঙ্গ করা বাধ্যতামূলক, শাউওয়াল মাসের প্রথম দিন স্বাওম পালন করা নিষিদ্ধ।

আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে।

এটা প্রথম অবস্থার চেয়ে ভিন্ন কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রামাদ্বান চলছে, নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রামাদ্বান চলছে সেখানে কিভাবে স্বাওম ভঙ্গ করা যেতে পারে?

তাই স্বাওম পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।”
[মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)]

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button