রোজা / সিয়াম

প্রশ্নঃ রোযা রেখে রক্ত দেয়া যাবে কি না????

উত্তরঃ- রোযা অবস্থায় রক্ত দেয়া জায়েজ আছে। বাকি যদি রক্ত দেবার কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয়ে যায়, তাহলে রক্ত দেয়া মাকরূহ হবে।

আর তারাবী নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। যদি রক্ত দেয়া জরুরী হয়।

তাহলে তারাবী পড়তে না পারলেও রক্ত দেয়াটাই উচিত হবে।

বাকি রোযা রাখতে না পারলে রক্ত দেয়া যাবে না।বাকি কোন সূরতেই রক্ত দেবার কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।

সাবেত আলবুনানী রাহ. বলেন, হযরত আনাস রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরূহ মনে করতেন?

তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।’-

সহীহ বুখারী হাদীস ১৯৪০

রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না
রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না।

তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, রক্ত দিলে সে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে- তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরুহ।

-আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৪৩৫

হজরত আকরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) হজের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন।

অন্য হাদিসে হজরত সাবিত আল বানানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আনাস বিন মালেককে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, রোজাদারের জন্য শরীর থেকে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করাকে আপনি কি অপছন্দ করেন?

জবাবে তিনি বলেন, না, আমি অপছন্দ করি না। তবে দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে ভিন্ন কথা।

-সহিহ বোখারি: ১/২৬০

তাছাড়া রক্তদান একজন রোগীর সেবার অন্তর্ভুক্ত। কারণ পবিত্র কোরআনে আছে, যে ব্যক্তি কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করল।

অতএব রোজা ভেঙে যাওয়ার কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মানবসেবার তরে রমজান মাসে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকা উচিত।

এতে করে রোজার সওয়াবের পাশাপাশি মানবসেবার সওয়াবও পাওয়া যাবে।

আমাদের অনেকে মধ্যে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে রোজা রেখে রক্ত দিলে নাকি রোজা ভেঙে যায়।

এটা আসলে কুসংস্কার।

★ হাদীস শরীফ মোতাবেক শরীয়তের সাধারণ উসুল হলো “শরীরের ভিতর থেকে কোন কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয় এবং বাইর থেকে কোন কিছু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।”

★ রোজার ব্যাপারে ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি–এর যে উসুল, অর্থাৎ “বাইরে থেকে রোজাবস্থায় যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, যদি তা পাকস্থলী অথবা মগজে প্রবেশ করে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।”

শারীরিকভাবে সমর্থ হলে রোজা রেখে রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই।

রক্ত দিলে রক্ত বের করা হয় তা সেলাইন বা সিরিঞ্জ এরমাধ্যমে ।

প্রশ্ন হল রক্ত বের হলে/ করলে রোজা ভাঙবে কিনা?

এই জবাবে যুক্তি দেয়া যায় রোজা রাখা অবস্থায় শিংগা লিগিয়ে দু:ষিত রক্ত বের করে চিকিৎসা সম্পর্কিত হাদিস সমুহ :-

★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ – ৭৭৩ বিশর ইবনুূু হিলাল আল-বাসরী (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম এবং সিয়াম অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।

★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ – ৭৭৪ আবূ মূসা মুহাম্মদ ইবনুূু মূসান্না (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (র:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই সনদে হাদীসটি হাসান-গারীব

★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ – ৭৭৫ আহমাদ ইবনুূু মানী (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ও মদীনার মাঝে ইহরাম এবং সিয়াম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন। এই বিষয়ে আবূ সাঈদ, জাবির ও আনাস (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

★ ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ।

কতক সাহাবী ও আলিম এই হাদীস অনুসারে অভিমত গ্রহণ করেছেন।

তাঁরা সাওম পালনকারীর জন্য শিংগা লাগানোতে কোন দোষ আছে বলে মনে করেন না।

এ হল ইমাম সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনুূু আনাস ও শাফেঈ (রহঃ) এর অভিমত।

★ আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনুূু হারব ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় শিংগা লাগিয়ে ছিলেন।

(মুসলিম ২৭৫৬)

★ আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনুূু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় মক্কায় যাওয়ার পথে নিজের মাথার মধ্যস্হলে শিংগা লাগিয়েছিলেন।

(মুসলিম ২৭৫৭)

★ হযরত আকরামা (রা) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘নবী করিম (স) হজের জন্যে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিংগার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিংগার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন।’

★ হযরত সাবিত আল বানানী থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, রোজাদারের জন্যে শিংগা লাগিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করাকে আপনি কি অপছন্দ করেন?

জবাবে তিনি বলেন, না আমি অপছন্দ করি না। তবে দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে ভিন্ন কথা।’

(সহীহ আল বোখারী ১:২৬০)

★ একইভাবে শিংগা লাগানোও অপছন্দ নয়। অর্থাৎ দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় না থাকলে রোজা অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়ে রক্ত বের করা যায়।

[শামী কিতাব ২:৩৯৯]

★ রোজা অবস্থায় তেল ও সুগন্ধী ব্যবহার করলে রোজা ভাঙেনা। একইভাবে শিংগা লাগালেও রোজার ক্ষতি হয় না।

[হেদায়া কিতাব ১:২১৭]

এটাও জেনে রাখা ভাল –

★★★ শিংগা কি? শিংগা লাগালে কি গোসল করতে হয়?
জবাব ১:

★ শিংগা হলো গরু বা মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বিশেষ এক রকম নল যা দিয়ে মানবদেহের দুষিত রক্ত, পুঁজ বের করা হতো দেহকে ব্যথামুক্ত করার জন্য।

জবাব ২ : জ্বি হ্যা।

★ সুনানে আবু দাউদ এর ১/ পবিত্রতা অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ – ৩৪৮। উছমান ইবনুূু আবূ শায়বা আবদুল্লাহ্ ইব্নুয-যুবায়ের (রাঃ) থেকে আয়িশা (রাঃ) -র সূরে বর্ণিত। তিনি (আয়শা) তাকে ইবনুূু যুবায়ের) বলেনঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি কাজের জন্য গোসল করতেন- স্ত্রী সহবাসের পর, জুমুআর দিন, শিংগা লাগানোর পর এবং মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়ার পর (তা ছাড়াও তিনি ইহ্রাম, কা’বায় প্রবেশের পূর্বে ও অন্যন্য কাজের জন্যও গোসল করতেন।)

তাই মুমুর্ষ রোগীকে রক্ত দেয়া পুন্যের কাজ যদি নিজের ক্ষতি না হয় শক্তিশালী হয় তবে পারবে।l

কারন রক্ত দিলে পানি পিপাসা পায়। অনেকে মাথা ঘুরে পরেও যায়।

আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button