রোজা / সিয়াম

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা: সারা বছর রোযার ছোয়াব পাওয়ার একটি সূবর্ণ সূযোগ

লেখক : আলী হাসান তাইয়েব

শাওয়ালের ছয় রোযা:

পূর্ণ এক বছরের সওয়াব !

আবু আইয়ুব আনছারী(রা:) হতে বর্ণিত,তিনি রাসূল (সা:) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন যে,রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,
যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলো, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখলো ,সে যেন পূর্ণ এক বছর রোযা রাখল

(মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৭)।

রাসূল(সা) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান।

সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা। অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।

(যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। সূরা আন‘আম) আহমদ : ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫
হাদিস থেকে যা শিখলাম:

এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল।

এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।

দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন।

তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরূপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব।

যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

চার. এ রোজা করা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে।

কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি।

আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।

মুগনি : ৪/৪৪০ তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে।

ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমনঃ ফরজ সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমজানের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা।

সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে।

কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।

সমাপ্ত

7858: শাওয়ালের ছয় রোযা কি লাগাতরভাবে রাখা শর্ত?

প্রশ্ন: শাওয়াল মাসের ছয় রোযা কি লাগাতরভাবে রাখা শর্ত নাকি আমি আলাদা আলাদাভাবে রাখতে পারি?

কেননা আমি চাচ্ছি, প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিনে তিন ধাপে রোযাগুলো রাখতে?

Published Date: 2017-07-02

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ।
শাওয়ালের রোযাগুলো লাগাতরভাবে রাখা শর্ত নয়। তাই এ রোযাগুলো কেউ আলাদা আলাদাভাবে রাখুক কিংবা লাগাতরভাবে রাখুক এতে কোন অসুবিধা নেই।

তবে যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যায় তত ভাল। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমরা ভাল কাজে অগ্রণী হও।”

আল্লাহ্ আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত ছুটে আস।”

মুসা আলাইহিস সালাম বলেন: “আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।”

[সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৮৪]

তাছাড়া দেরী করলে নানা বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। এটি শায়েফি মাযহাবের আলেমগণ ও হাম্বলি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত।

কিন্তু, অবিলম্বে আদায় না করে মাসের মাঝখানে কিংবা শেষে আদায় করলেও কোন অসুবিধা নেই।

ইমাম নববী বলেন:

“আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এ হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখা মুস্তাহাব।

শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে লাগাতরভাবে রোযাগুলো রাখা মুস্তাহাব।

আর যদি আলাদাভাবে রাখে কিংবা শাওয়াল মাসের পরে রাখে তবুও জায়েয হবে এবং এ সুন্নত পালনকারী হিসেবে গণ্য হবে এ হাদিসের ব্যাপকতার কারণে।

এ বিষয়ে আমাদের আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। ইমাম আহমাদ ও দাউদও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।”

[আল-মাজমু শারহুল মুহায্যাব]

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button