মাহে রামাযানের নির্বাচিত হাদীছ
মাহে রামাযানের নির্বাচিত হাদীছ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা কেউ রমাযানের একদিন কিংবা দুদিন আগে হতে ছিয়াম শুরু করবে না ।
তবে কেউ যদি এ সময় ছিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিদ ছিয়াম পালন করতে পারবে ।”
-[বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারামঃ ৬৫০]
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) থেক বর্ণিত । তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি সন্দেহ দিনে ছিয়াম পালন করল সে অবশ্যই আবুল কাসিম (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ করল ।”
-[আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, বুলুগুল মারামঃ ৬৫১]
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন ছিয়াম রাখবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ছিয়াম ছাড়বে । আর যদি আকাশ মেঘলা থাকে তবে সময় হিসাব করে ত্রিশ দিন গণনা করবে ।”
-[বুখারীঃ ১৯০০; মুসলিম ১০৮০]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হয়েছে “মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।”
-[বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারামঃ ৬৫৩]
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । কোন একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য লোক নাবী (সাঃ) এর সামনে এসে বললো, আমি চাঁদ দেখেছি তিনি বললেন, তুমি কি এ সত্যের সাক্ষ্য দাও যে ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই’ -সে বললো, হ্যাঁ ।
তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন -তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে ‘মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল’ -লোকটা বললো হ্যাঁ । অতঃপর নাবী (সাঃ) বললেন, হে বিলাল!
আগামীকাল ছিয়াম পালনের নির্দেশটি লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও ।
-[আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, বুলুগুল মারামঃ ৬৫৫]
হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রাত থাকতে ফরয ছিয়ামের নিয়্যাত করলো না তার ছিয়াম হয় নি ।”
-[আবু দাউদঃ ২৪৫৪; তিরমিযীঃ ২৭৩০]
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “লোকেরা যতোদিন শীঘ্র ইফতার করবে, ততোদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে ।”
-[বুখারীঃ ১৯৫৭, মুসলিমঃ ১০৯৮]
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে ।”
-[বুখারীঃ ১৯২৩, মুসলিমঃ ১০৯৫]
সুলায়মান বিন আমির আয্যাব্বী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেন- “যখন কেউ ইফতার করবে তখন সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে ।
যদি সে তা না পায় তাহলে পানি দ্বারা ইফতার করবে । কেননা সেটা পরিবত্রকারী ।”
-[আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বুলুগুল মারামঃ ৬৬১]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ “যে লোক মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করলো না, আল্লাহর নিকট তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই ।”
-[বুখারীঃ ১৯০৩; তিরমিযীঃ ৭০৭; আবু দাউদঃ ২৩৬২]
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নাবী (সাঃ) ছিয়াম অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন । তবে তিনি তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে অধিক সক্ষম ছিলেন ।
-[বুখারীঃ ১৯২৭; মুসলিমঃ ১১০৪]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেক বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ছিয়াম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার ছিয়াম পূরা করে নেয় । কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন ।
-[বুখারীঃ ১৯৩৩; মুসলিমঃ ১১৫৫]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ যার মুখ ভরে বমি হয় তাকে ছিয়াম কাযা করতে হবে না । যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করে তাকে ছিয়াম কাযা করতে হবে ।”
-[আবু দাউদঃ ২৩৮০; তিরমিযীঃ ৭২০]
হামযাহ বিন আমর আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমি সফর অবস্থায় ছিয়াম পালনের ক্ষমতা রাখি ।
ছিয়াম পালন আমার জন্য কি কোন দূষণীয় হবে । তদোত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- এটা আল্লাহর প্রদত্ত অবকাশ, যে তা গ্রহণ করবে সে তাতে উত্তম করবে, আর যে ছিয়াম পালন পছন্দ করবে তারও কোন ক্ষতি নেই ।
-[মুসলিমঃ ২৪৭৭; তিরমিযীঃ ২৮২৪]
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, অতি বৃদ্ধের জন্য ছিয়াম পালনের ব্যাপারে এই অবকাশ দেয়া হয়েছে যে, সে প্রতি ছিয়ামের বদলে একজন মিসকীনকে ইফতার করাবে ও খাওয়াবে ।
তার উপর কোন কাযা নেই ।
-[দারকুতনী, হাকিম, বুলুগুল মারামঃ ৬৭৫]
আয়িশা ও উমার সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) যৌন অপিবত্রতা বা জুনুবী অবস্হায় সকাল (সুবেহ সাদিক) করতেন, তারপর (ফজরের সালাতের পূর্বে) গোসল করতেন ও ছিয়াম পালন করতেন ।
-[বুখারীঃ ১৯২৬; মুসলিমঃ ১১০৯]
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ছিয়ামের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে ছিয়াম আদায় করবে ।”
-[বুখারীঃ ১৯৫২; মুসলিমঃ ১১৪৭]
আবু কাতাদাহ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘আরাফার দিনে ছিয়াম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন- এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ (পাপ) মোচন হয় ।
সোমবারের দিনে ছিয়াম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, এটা সেদিন যেদিন আমি জন্মেছি এবং নবুওয়াত লাভ করেছি আর আমার উপর (কুরআন) অবতীর্ণ হয়েছে।
-[মুসলিমঃ ১১৬২; তিরমিযীঃ ৬৭৬]
আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি রমাযানের ছিয়াম পালনের পর শাওয়ালেরও ৬ টি ছিয়াম পালন করল, (পুণ্যের দিক দিয়ে) সে পূর্ণ একটি বছর ছিয়াম পালন করল ।”
-[মুসলিমঃ ১১৬৪; তিরমিযীঃ ৭৫৯]
আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় একটি দিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন ।”
-[বুখারীঃ ২৮৪০; মুসলিমঃ ১১৫৩]
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একাধারে (এত অধিক) ছিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর ছিয়াম পরিত্যাগ করবেন না ।
(আবার কখনো এত বেশি) ছিয়াম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) ছিয়াম পালন করবেন না ।
আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে রমাযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের ছিয়াম পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোন মাসে অধিক (নফল) ছিয়াম পালন করতে দেখিনি ।
-[বুখারীঃ ১১৩২; মুসলিমঃ ৭৪১]
আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে প্রতি মাসে তিনটি (নফল) ছিয়াম পালনের (ঐচ্ছিক) নির্দেশ দিলেন, (চান্দ্র মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ।
-[তিরমিযী, নাসায়ী, বুলুগুল মারামঃ ৬৮৪]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন স্বামী উপস্হিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য ছিয়াম পালন বৈধ নয় ।”
-[বুখারীঃ ২০৬৬; মুসলিমঃ ১০২৬; আবু দাউদঃ ১৬৮৭]
আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । অবশ্য রাসূল (সাঃ) দুটো দিন ছিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন । -ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ।
-[বুখারীঃ১৯৯১; মুসলিমঃ ৮২৭]
আয়িশা (রাঃ) ও ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত । তাঁরা উভয়ে বলেন, যাঁর নিকট কুরবানীর পশু নেই, সে ব্যতীত অন্য কারো জন্য আইয়্যামে তাশরীকে (যিলহাজ্জের ১১ থেকে ১৩ তারিখে) ছিয়াম পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি ।
-[বুখারীঃ ১৯৯৭; মুয়াত্তা মালেকঃ ৯৭২]
উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেসব দিনে ছিয়াম পালন করতেন তার মধ্যে শনি ও রবিবারেই বেশি ছিয়াম পালন করতেন ।
আর তিনি বলতেন- এ দুটি দিন মুশরিকদের ‘ঈদ (খুশীর) উদযাপনের দিন, আমি তাদের বিপরীত করতে চাই ।
-[নাসায়ী কুবরাঃ ২/১৪৬; ইবনু খুজাইমাহঃ ২১৬৭]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহ্ সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে ।”
-[বুখারীঃ ২০০৯; মুসলিমঃ ৭৬০; তিরমিযীঃ ৬৮৩]
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, যখন রমাযানের শেষ দশক আসত তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদাতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন ।
-[বুখারীঃ ২০২৪; মুসলিমঃ ১১৭৪]
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) এর কতিপয় সাহাবী স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয় ।
(তা শুনে) আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে । (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে । অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে ।
-[বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারামঃ ৭০৪]
রাসূল(সা:) বলেন,রমজান মাস যখন শুরু হয় তখন এই রমজান মাসেই জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।
-[বুখারী-৩০৩৫, আ: প্রকাশনী]
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, যার নিকট রমাযান মাস এসে চলে গেল কিন্তু নিজের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না ।”
-[আত তিরমিযীঃ ৩৫৪৫]
সংকলন: Assirat Mission