রোজা / সিয়াম

রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিব

প্রশ্ন: আমরা কিভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিব? এই মহান মাসে কোন আমলগুলো অধিক উত্তম?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ

এক : প্রিয়ভাই, আপনি একটি ভালপ্রশ্নকরেছেন। আপনিরমজানমাসের প্রস্তুতিসম্পর্কেজিজ্ঞেসকরেছেন।এমন একটি সময়ে আপনি প্রশ্নটি করেছেন যখন সিয়ামসম্পর্কেবহু মানুষেরধ্যানধারণাপাল্টে গেছে। তারাএইমাসকেখাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্ন, রাতজাগাওস্যাটেলাইটচ্যানেল উপভোগ করার মৌসুমবানিয়েফেলেছে। এরজন্যতারারমজানমাসেরআগেথেকেইপ্রস্তুতিনিতেশুরুকরে;এইআশংকায়যে-কিছুখাদ্যদ্রব্যকেনাবাদপড়ে যেতেপারেঅথবাদ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিপেতেপারে। এভাবেতারাখাদ্যদ্রব্যকেনা, হরেকরকমপানীয়প্রস্তুতকরাএবংকীঅনুষ্ঠানদেখবে,আরকী দেখবেনাসেটাজানার জন্যস্যাটেলাইটচ্যানেলগুলোরপ্রোগ্রামসূচী অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এর জন্যপ্রস্তুতিনেয়।অথচরমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই তারা অজ্ঞ। তারা এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি ও চক্ষুবিলাসের মৌসুমে পরিণত করে। দুই :

অপরদিকে কিছু মানুষ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন।তারা শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ শাবান মাসের আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

রমজানের জন্য প্রস্তুতিরকিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হল: ১. একনিষ্ঠভাবে তওবা করা: তওবা করাসবসময়ওয়াজিব।তবেব্যক্তি যেহেতুএকমহানমাসেরদিকেএগিয়েযাচ্ছেতাই অনতিবিলম্বেনিজের মাঝেওস্বীয়রবেরমাঝেযেগুনাহগুলোরয়েছেএবংনিজের মাঝেওঅন্য মানুষেরমাঝেঅধিকার ক্ষুণ্ণের যেবিষয়গুলোরয়েছেসেগুলোথেকেদ্রুততওবাকরে নেয়া উচিত।যাতেকরেসেপূত-পবিত্রমনওপ্রশান্তহৃদয়নিয়ে এমুবারকমাসে প্রবেশকরতে পারে এবং আল্লাহরআনুগত্যওইবাদতেমশগুলহতেপারে। আল্লাহতা‘আলাবলেছেন:“আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার।”[২৪ আন-নূর : ৩১] আল-আগার্‌রইবনেইয়াসার রাদিয়াল্লাহুআনহু হতেবর্ণিতহয়েছেযে, নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামবলেছেন:

( يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ) رواه مسلم ( 2702 )

“হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা করি।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম (২৭০২)]

২. দোআ করা: কিছু কিছু সলফে সালেহীন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাঁদের আমলগুলো কবুল করে নেন। তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে, উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন। ৩. এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে খুশি হওয়া: রমজান মাস পাওয়াটা একজন মুসলিমের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান কল্যাণের মৌসুম। যে সময় জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। রমজান হচ্ছে- কুরআনের মাস, সত্যমিথ্যার মধ্যে পার্থক্য রচনাকারী জিহাদি অভিযানগুলোর মাস। আল্লাহতা‘আলাবলেন :

( قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ) [10 يونس : 58]

“বলুন, এটি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক ।এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।”[১০ ইঊনুস : ৫৮]

৪. কোন ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া: আবুসালামাহ্‌হতেবর্ণিতআছে যে, তিনিবলেন আমিআয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকেবলতেশুনেছিযে, তিনিবলেন:

كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1849 ) ومسلم ( 1146 )

“আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শা‘বান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৮৪৯) ও ইমাম মুসলিম (১১৪৬)]

হাফেয ইবনে হাজাররাহিমাহুল্লাহ বলেন:“আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।”[ফাতহুল বারী (৪/১৯১)] ৫. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেয়া এবং রমজানের ফজিলত অবগত হওয়া।

৬. যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।

৭. স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরকেও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।

৮. যে বইগুলো ঘরে পড়া যায় এমন কিছু বই সংগ্রহ করা অথবা মসজিদের ইমামকে হাদিয়া দেয়া যেন তিনি মানুষকে পড়ে শুনাতে পারেন। ৯. রমজানের রোজারপ্রস্তুতিস্বরূপ শাবানমাসেকিছু রোজা রাখা:

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلا رَمَضَانَ ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1868 ) ومسلم ( 1156 )

আয়েশারাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেবর্ণিতযেতিনিবলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম এমনভাবেসিয়ামপালনকরতেনযে, আমরাবলতাম–তিনিআরসিয়ামভঙ্গকরবেননাএবংএমনভাবেসিয়ামভঙ্গকরতেনযেআমরাবলতাম–তিনিআরসিয়ামপালনকরবেননা। আমিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম কেরমজানছাড়াঅন্যকোনমাসেরগোটাঅংশরোজা পালনকরতেদেখিনিএবংশাবানছাড়াঅন্যকোনমাসেঅধিকসিয়ামপালনকরতেদেখিনি।”[এটিবর্ণনাকরেছেনআল-বুখারী (১৮৬৮) ওমুসলিম (১১৫৬)]

عَنْ أُسَامَة بْن زَيْدٍ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ ، قَالَ : ( ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ ) . رواه النسائي ( 2357 ) وحسَّنه الألباني في ” صحيح النسائي “

উসামাহ ইবনেযায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন:“আমি বললাম : ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনিবললেন:“এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল।অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুলআলামীনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নাসা’ঈ (২৩৫৭) এবং আলবানী একে ‘সহীহুননাসা’ঈ’গ্রন্থে হাসান বলেছেন।]

এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের হেকমত (গুঢ় রহস্য) বর্ণনা করা হয়েছে। সে হেকমত হচ্ছে- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। জনৈক আলেম আরো একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের তুল্য। এই্ সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরী করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে। ১০. কুরআন তেলাওয়াত করা সালামাহইবনেকুহাইলবলেছেন:“শাবানমাসকেতেলাওয়াতকারীদেরমাসবলাহত।”শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তাঁরদোকানবন্ধরাখতেন এবং কুরআনতিলাওয়াতেরজন্যঅবসরনিতেন।

আবুবকর আল-বালখীবলেছেন:“রজবমাসহল-বীজবপনেরমাস। শাবানমাসহল-ক্ষেতেসেচপ্রদানেরমাসএবংরমজানমাসহল-ফসলতোলারমাস।”তিনি আরও বলেছেন: “রজবমাসেরউদাহরণহল-বাতাসেরন্যায়, শাবানমাসেরউদাহরণহল- মেঘেরন্যায়, রমজানমাসেরউদাহরণ হল-বৃষ্টিরন্যায়। তাইযে ব্যক্তিরজব মাসেবীজবপনকরলনা, শাবানমাসেসেচপ্রদানকরলনা,সেকিভাবেরমজানমাসেফসলতুলতেচাইতেপারে?”

এখন তোরজবমাসগতহয়ে গেছে।আপনিযদিরমজানমাসপেতেচান তাহলে শাবানমাসের জন্য আপনারকিপরিকল্পনা? এইহলএইমুবারকমাসেআপনারনবীওউম্মতেরপূর্ববর্তী প্রজন্মেরঅবস্থা। এইসমস্তআমলওমর্যাদাপূর্ণকাজেরক্ষেত্রেআপনারঅবস্থানকীহবে!! তৃতীয়ত:

রমজানমাসেএকজনমুসলিমেরকীকী আমল করাউচিতসেসম্পর্কেজানতে (26869) ও(12468)নংপ্রশ্নেরউত্তর দেখুন।

আল্লাহই তাওফিক দাতা।

সুত্র: Islamqa.info

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button