রোজা / সিয়াম

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে সালমান (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসটি যয়ীফ (দুর্বল)

প্রশ্নঃ এই অঞ্চলের এক মসজিদের জনৈক খতিব তাঁর খোতবার মধ্যে সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সে হাদিসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষদিন তাঁদের উদ্দেশ্যে খোতবা দিয়েছিলেন…।

জনৈক ভাই প্রকাশ্যে মানুষের সামনে ইমাম সাহেবের পেশকৃত হাদিসের বিরোধিতা করে বলেন যে, সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি মাওজু বা বানোয়াট। অনুরূপভাবে “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়ায় আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাউছার থেকে এক ঢোক পানি পান করাবেন। যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না।”

অনুরূপভাবে “যে ব্যক্তি তার কৃতদাসের কাজকে সহজ করে দিবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে মুক্তি দিবেন।” সেই ভাই বলেন: “এই কথাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপকৃত। আর যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন স্বীয় স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়…।” এই হাদিসটি কি সহীহ; নাকি সহীহ নয়?

উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত এ হাদিসটি ইবনে খুযাইমা তাঁর “সহীহ”নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।তিনি বলেন: “রমজান মাসের ফযিলত শীর্ষক পরিচ্ছেদ;যদি এ হাদিসটি সহীহ সাব্যস্ত হয়”। এরপর তিনি বলেন: আমাদের নিকট আলী ইবনে হুজর আল-সাদী হাদিস বর্ণনা করেছেন;তিনি বলেন: আমাদের নিকট ইউসুফ ইবনে যিয়াদ হাদিস বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেন: আমাদের নিকট হুমাম ইবনে ইয়াহইয়া হাদিস বর্ণনা করেছেন আলী বিন যায়িদ বিন জাদআন হতে; তিনি সাঈদ ইবনে আল-মুসাইয়্যিব হতে, তিনি সালমান (রাঃ) হতে;তিনি বলেন:

خطبنارسولاللهصلىاللهعليهوسلمفيآخريوممنشعبانفقال : (أيهاالناس،قدأظلكمشهرعظيم،شهرمبارك،شهرفيهليلةخيرمنألفشهر،جعلاللهصيامهفريضة،وقيامليلهتطوعاً ،منتقربفيهبخصلةمنالخيركانكمنأدىفريضةفيماسواه،ومنأدىفيهفريضةكانكمنأدىسبعينفريضةفيماسواه،وهوشهرالصبر،والصبرثوابهالجنة،وشهرالمواساة،وشهريزدادفيهرزقالمؤمن،منفطرفيهصائماًكانمغفرةلذنوبه،وعتقرقبتهمنالنار،وكانلهمثلأجرهمنغيرأنينتقصمنأجرهشيء. قالوا : ليسكلنانجدمايفطرالصائم،فقال : يعطياللههذاالثوابمنفطرصائماًعلىتمرةأوشربةماءأومذقةلبن،وهوشهرأولهرحمة،وأوسطهمغفرة،وآخرهعتقمنالنار،منخففعنمملوكهغفراللهله،وأعتقهمنالنار،فاستكثروافيهمنأربعخصال : خصلتينترضونبهماربكم،وخصلتينلاغنىبكمعنهما: فأماالخصلتاناللتانترضونبهماربكم : فشهادةأنلاإلهإلاالله،وتستغفرونه،وأمااللتانلاغنىبكمعنهما : فتسألوناللهالجنة،وتعوذونبهمنالنار،ومنأشبعفيهصائماًسقاهاللهمنحوضيشربةًلايظمأحتىيدخلالجنة)

একবার শাবান মাসের শেষ দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। খোতবা দিতে গিয়ে তিনি বলেন: “হে লোকেরা! আপনাদের নিকট এক মহান মাস হাজির হয়েছে। এক বরকতময় মাস এসেছে। এ মাসে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

এমাসে সিয়াম পালন করা আল্লাহ ফরজ (আবশ্যকীয়) করেছেন এবং এ মাসের রাতে কিয়াম (নামায আদায়) করা নফল (ফজিলতপূর্ণ) করেছেন। এ মাসে যে কোন একটি (নফল)ভালো কাজ করা অন্য মাসে একটি ফরজ কাজ করার সমান। আর এ মাসে কোন একটি ফরজ আমল করা অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আমল করার সমান। এটি হল- ধৈর্য্যের মাস; ধৈর্য্যের প্রতিদান হচ্ছে- জান্নাত।

এটি হল- সহানুভূতির মাস। এটি এমন এক মাস যাতে একজন মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি পায়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার সমূহ গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে,সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে এবং তাকে সেই রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে;কিন্তু রোজাদারের সওয়াবে কোন কমতি করা হবে না।

তাঁরা বললেন- আমাদের মধ্যে সবার তো একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর মত সামর্থ্য নেই।তিনি বললেন: কোন ব্যক্তিযদি একজন রোজাদারকে একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি অথবা এক চুমুক দুধ দিয়েও ইফতার করায় আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দিবেন। এটি এমন মাস এর প্রথম ভাগে রহমত, দ্বিতীয় ভাগে মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে রয়েছে জাহান্নাম হতে নাজাত।

আর যে ব্যক্তি তার কৃতদাসের দায়িত্ব সহজ করে দিবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দিবেন। সুতরাং এ মাসে আপনারা চারটি কাজ বেশি করে করুন। দুটি হল যা দিয়ে আপনারা আপনাদের রব্বকে সন্তুষ্ট করবেন। আর দুটি কাজ এমন যা আপনাদের না করলেই নয়।

যে দুটি কাজ দ্বারা আপনারা আপনাদের রব্বকে সন্তুষ্ট করবেন: (১) এ বলে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং (২) তাঁর কাছে ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। আর যে দুটো কাজ আপনাদের না করলেই নয় (৩) আপনারা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবেন এবং (৪) জাহান্নামের আগুন থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।

আর এইমাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তাঁকে আমার হাউজ থেকে এক ঢোক পানি পান করাবেন যার ফলে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না।”উল্লেখিত হাদিসের সনদে একজন রাবী হচ্ছেন- আলী বিন যায়েদ বিন জাদআন।তিনি একজন যয়ীফ বা দুর্বল রাবী। যেহেতু তার মুখস্থ শক্তি দুর্বল ছিল।

হাদিসটির সনদে আরও একজন রাবী হচ্ছেন-ইউসুফ বিন যিয়াদ আল-বসরী।তিনি “মুনকারুল হাদিস”।হাদিসটির সনদে আরও একজন রাবী হচ্ছেন- হুমাম বিন ইয়াহইয়া বিন দীনার আল-আউদী।তার সম্পর্কে ইবনে হাজার ‘আত-তাক্বরীব’গ্রন্থে বলেছেন:ثقة ربما وهم।(তিনি ছিকাহ, তবে কখনো কখনো ভুল করেন)।[“ছিকাহ” পরিভাষাটির মাধ্যমে মুখস্তশক্তি ও দ্বীনদারি দুটো বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া হয়]

এই পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, এ সনদে হাদীসটি মিথ্যা বা বানোয়াট নয়; তবেযয়ীফ বা দুর্বল। এটি দুর্বল হলেও রমজানের ফযিলত বিষয়ক সহীহ হাদিস তো যথেষ্টরয়েছে। আল্লাহই তাওফিক দাতা।আমাদের নবীর প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তিবর্ষিত হোক।”সমাপ্ত। গবেষণাও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি

শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ ইবনে বায্‌। শাইখ আব্দুর রায্‌যাক আফীফি, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন গুদাইইয়্যান, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন কুঊদ।ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ আদ্‌দায়িমা

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

আবু রায়হান

আসসালামুআলাইকুম, আমি একজন প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র। আমি এটা মনে করিনা যে, আমার টাই সঠিক আর বাকি সবারটা ভুল। আমি এই পথে হাটছি, আমি আপনার কাছে দো'আ প্রার্থী, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার ও বড় আলেম হয়ে ইসলামের খেদমত করার তাওফিক দান করেন এবং সঠিকটা বুঝে সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করেন। আর আমার ভুল ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিবেন।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button