যে ব্যক্তি কোন এক দেশে সফরে যাচ্ছেন যেখানে তিনি আটদিন থেকে একটি কোর্সে অংশ গ্রহণ করবেন; যে কোর্সে গভীর মনোযোগ দিতে হবে; এমতাবস্থায় কি তার জন্যে রোযা না রাখা বৈধ?
প্রশ্নঃ আমি জেদ্দাতে মুকীম। লণ্ডনে যাচ্ছি। সেখানে আটদিন থাকব। সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষা পাস করার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ গ্রহণ করা। কোর্সটির সময় হচ্ছে ইফতারের চার ঘণ্টা আগে থেকে। মাগরিবের আযান পর্যন্ত কোর্স চলবে। এ কোর্স করতে কিছু রোগীদের অবস্থার উপর নিবিড় মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায় আমার জন্য রোযা না-রাখা কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ
এক:
আপনার সফরের দিন ও ফিরে আসার দিন শহরের ঘরবাড়ী অতিক্রম করার পর রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয। উদাহরণতঃ যদি আপনার সফর হয় জেদ্দা থেকে দুপুরে। তাহলে রাত থেকে রোযার নিয়ত করা ও পানাহার থেকে বিরত থাকা আপনার উপর ওয়াজিব; যতক্ষণ না আপনি শহরের ঘরবাড়ী অতিক্রম করেন। অতিক্রম করলে রোযা ভেঙ্গে ফেলা আপনার জন্য জায়েয হবে।
অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য আপনার ফেরত আসার দিনও। আপনি যদি দিনের বেলায় সফর করেন তাহলে শহরের ঘরবাড়ী অতিক্রম করার আগে রোযা ভাঙ্গবেন না।
যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সফর করেন তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয। এটি ইমাম আহমাদের মাযহাব এবং শাফেয়ি, ইসহাক ও দাউদের অভিমত। এবং এটাই অগ্রগণ্য অভিমত।
আর জমহুর আলেমের মতে, যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সফর করেন তার জন্য সেই দিনের রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়।
ইবনে কুদামা (রহঃ) অগ্রগণ্য অভিমতের দলিল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “যেহেতু উবাইদ বিন জুবাইর (রহঃ) বলেন: আমি আবু বাসরা আল-গিফারীর সাথে রমযান মাসে ফুসতাত থেকে জাহাজে উঠেছিলাম। জাহাজ রওয়ানা হল। এরপর দুপুরের খাবারের সময় হল। তখনও বাড়ীঘর অতিক্রম করেনি। কিন্তু তিনি দস্তরখান বিছানোর নির্দেশ দিলেন। এরপর বললেন: কাছে আস। আমি বললাম: আপনি বাড়ীঘর দেখছেন না? তিনি বললেন: তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত থেকে বিমুখ হতে চাও? এরপর তিনি খেয়েছেন। [সুনানে আবু দাউদ] এরপর তিনি বলেন: যদি এটি সাব্যস্ত হয় তাহলে বাড়ীঘরগুলোকে পেছনে ফেলার আগে রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে না। অর্থাৎ বাড়ীঘরগুলোকে অতিক্রম করা এবং এগুলোর মধ্য থেকে বের হয়ে যাওয়া।
আল-হাসান বলেন: যেই দিনে সফর করতে ইচ্ছুক সেই দিন সে চাইলে নিজ বাসাতেই ইফতার করতে পারে। অনুরূপ কথা আতা থেকেও বর্ণিত আছে। ইবনে আব্দুল বার বলেন: হাসানের উক্তিটি বিরল। নিজ গৃহে থাকাবস্থায় রোযা ভাঙ্গার পক্ষে কারো অভিমত নেই। কোন আকলি দলিলেও নেই, নকলি দলিলেও নেই। হাসান থেকে এর বিপরীত অভিমতও বর্ণিত আছে।[আল-মুগনী (৩/১১৭) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
মুসাফির ব্যক্তি যদি কোন শহরে চারদিনের বেশি থাকার নিয়ত করে তাহলে মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমদের মতে, তথা জমহুর আলেমদের মতে, সে মুকীমের হুকুমে পড়ে। একজন মুকীমের উপর যা যা অনিবার্য; যেমন রোযা রাখা ও নামায পরিপূর্ণভাবে আদায় করা তার উপরেও সেগুলো আদায় করা অনিবার্য।
ইবনে কুদামা বলেন: যদি মুসাফির ব্যক্তি কোন শহরে ২১ ওয়াক্ত নামায পড়ার নিয়ত করে তাহলে সে নামাযগুলো পূর্ণভাবে আদায় করবে। ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে: যেটুকু সময়কাল অবস্থান করার নিয়ত করলে মুসাফির ব্যক্তিকে নামায পরিপূর্ণ সংখ্যায় পড়তে হবে সেটা হচ্ছে- ২১ ওয়াক্তের চেয়ে বেশি নামায। আল-আসরাম, আল-মারযুকী ও অন্যান্য আলেমগণ এটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে এটিও বর্ণিত আছে যে, যদি কেউ চারদিন থাকার নিয়ত করে তাহলে সে ব্যক্তিও নামায পূর্ণভাবে আদায় করবেন। আর যদি এর চেয়ে কম সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর করে পড়বে। এটি ইমাম মালেক, শাফেয়ি ও আবু ছাওরের অভিমত।[আল-মুগনী (২/৬৫) থেকে সমাপ্ত]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (৮/৯৯) এসেছে: “যে সফরে বের হলে সফরের ছাড়গুলো গ্রহণ করা যায় সেটা হলো প্রথাগতভাবে যেটাকে সফর বলা হয়। এর দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ৮০ কিঃমিঃ। যে ব্যক্তি এ পরিমাণ দূরত্ব বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করবেন তিনি সফরের ছাড়গুলো ভোগ করতে পারেন; যেমন- তিনদিন তিনরাত মোজার উপর মাসেহ করা, নামাযগুলো একত্রিত করে ও কসর করে আদায় করা, রমযানের রোযা ভঙ্গ করা। এই মুসাফির যদি কোন শহরে চারদিনের বেশি সময় থাকার নিয়ত করেন তাহলে তিনি সফরের ছাড়গুলো নিতে পারবেন না। আর যদি চারদিন বা চারদিনের চেয়ে কম সময় থাকার নিয়ত করেন তাহলে তিনি সফরের ছাড়গুলো নিতে পারবেন। আর যে মুসাফির এমন কোন দেশে অবস্থান করছেন কিন্তু তিনি জানেন না যে, কবে তার প্রয়োজন শেষ হবে এবং তিনি অবস্থান করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধার্য্য করেননি; তাহলে তিনি সফর অবস্থার সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারবেন; এমনকি যদি সে সময়টা অনেক লম্বা হয় তবুও। এক্ষেত্রে স্থল পথে সফর বা জল পথে সফর এ দুটোর মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে আপনি যেহেতু লন্ডনে আটদিন থাকার নিয়ত করছেন তাই এ অবস্থানকালে আপনার জন্য নামায কসর করা ও রোযা ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
আপনি যে কষ্ট ও মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো রোযা ভাঙ্গার বৈধতা দেয় না।
আরও জানতে দেখুন: 132438 নং ও 141646 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সুত্রঃislamqa