সালাত / নামায
ট্রেন্ডিং

সালাতের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি।

1.সালাতের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি :(তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত)

১. সালাতের শুরুতে মুখে নিয়ত (নাওয়াইতুয়ান…) বলা বিদআত। মনে মনে নিয়ত করতে হবে (বুখারী-১ মিশকাত-১)
***জায়নামাজে দাঁড়িয়ে “ইন্নি ওয়াজ্জাহতু…পড়া বিদআত। (তবে সানা হিসেবে নিয়ত বাধাঁর পর পড়া যাবে)

২.ক্বিবলামুখী হয়ে “আল্লাহু আকবার” বলে দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠাবে (কিন্তু কান স্পর্শ করবে না)(বুখারী ৭৩৫ মিশকাত ৭৯০,৭৯৩)

৩.বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর রাখবে (আবু দাউদ ৭৫৯ বুখারী ৭৪০)

৪.জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে কাতারের মাঝে পরস্পরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। (দুইজন মুছল্লীর মাঝে ফাঁক রাখা সুন্নাত বিরুধী) (বুখারী ৭২৫ মিশকাত ১১০২)

৫.সিজদার স্থান বা তার কাছাকাছি সীমার মধ্যে দৃষ্টি রাখবে।(হাকেম ১৭৬১)

৬.ছানা পাঠ করবে “আল্লাহুম্মা বাইদ বায়নী”(বুখারী ৭৪৪) অথবা “সুবাহানাকা” (মুসলিম) অথবা “ইন্নি ওয়াজ্জাহতু”

৭..ক))আঊযুবিল্লাহ -বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব (একাকী হোক বা ইমামের পিছনে হোক, জেহরী সালাতে হোক বা সের্কী সালাতে হোক)(বুখারী ৭৫৬ ইবনে মাজাহ ৮৪৩ মুসলিম ৯০৪ মিশকাত ৮২৩)

খ)).পরের রাক’আত গুলোতে বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

গ))মুছল্লী একাকী হলে বা যোহর ও আছর সালাতে ইমামের পিছনে প্রথম দুই রাক’আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করবে।পরের দুই রাক’আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

ঘ))মাগরিব, এশা, ফজর ও জুমার সালাতে প্রত্যেক রাক’আতে মুছল্লি ইমামের পিছনে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।(বুখারী ৭৫৬ ইবনে মাজাহ ৮৪৩ মুসলিম ৯০৪ মিশকাত ৮২৩)

৮.সূরা ফাতিহা শেষে আমিন বলবে।ইমামের পিছনে জেহরী সালাতে সূরা ফাতিহা শেষে উচ্চস্বরে আমিন বলবে।(আস্তে আমিন বলার হাদিস দুর্বল)(আবু দাউদ ৯৩২,৯৩৩ তিরমিযী ২৪৮ ইবনে মাজাহ ৮৫৬ বুখারী ৭৮০)

৯.ক্বিরা’আত শেষে “আল্লাহু আকবার” বলে দুই হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠিয়ে (রাফউল ইয়াদায়েন করে) রুকুতে যাবে।(বুখারী ৭৩৫-৭৩৯)

১০.দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু শক্ত করে ধরে ভর দিয়ে পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে। হাঁটুসহ দুই পা ও সোজা রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখবে।(বুখারী ৮২৮ মিশকাত ৭৯১,২)

১১.অত:পর কমপক্ষে ৩ বার সুবহানা রব্বিয়াল আযীম পড়বে।(মিশকাত ৮৮১)

১২.রুকু থেকে উঠার সময় “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবে।(বুখারী ৭৯৫)

১৩.অত:পর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে এবং কাঁধ বা কান বরাবর দুই হাত উঠিয়ে “রাফউল ইয়াদায়েন ” করবে।(বুখারী ৭৩৫-৭৩৯)

১৪.তারপর বলবে “রব্বানা লাকাল হামদ”(বুখারী ৭৩৩) অথবা “রব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বাইয়িবাম মুবারাকা ফীহি (মিশকাত ৮৭৭)

১৫.রাসূল (সা:) রুকু থেকে উঠে এমনভাবে দাঁড়াতেন যে মেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসত।(বুখারী ৮০০)

১৬.রাসূল (সা:) এর রুকু, সিজদা,রুকু থেকে মাথা উঠানো,দুই সিজদাহের মধ্যবর্তী সময় প্রায় সমান হত।(বুখারী ৮০১)

১৭.তারপর আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে দুই হাত ও পরে দুই হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে।(আগে দুই হাঁটু দেওয়ার হাদিস দুর্বল)(মিশকাত ৮৯৯ আবু দাউদ ৮৪০)

১৮.হাত দুইটি ক্বিবলামুখী করে মাথার দুই পাশে কাঁধ বরাবর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে।(বুলগুল মারাম ২৯৭)

১৯.কনুই উঁচু রাখবে ও বগল ফাঁকা রাখবে।(বুখারী ৮০৭) হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না।(বুখারী ৮২২)

২০.সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।(মিশকাত ৮৯০)

২১.দুই পা খাড়া করে এক সাথে মিলিয়ে রাখবে (মিশকাত ৮৯৩) এ সময় আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করে রাখবে (বুখারী ৮২৭)
২২.কমপক্ষে ৩ বার “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” বলবে (ইবনু মাজাহ ৮৮৮)

২৩.সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় প্রশান্তির সাথে বসবে।

২৪. দুই সিজদাহের মাঝখানে বলবে “রব্বিগফিরলী,রব্বিগফিরলী(মিশকাত ৯০১) অথবা “আল্লাহুম্মা গফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াদিনী, ওয়াআফিনী, ওয়ারযুক্বনী” (মিশকাত ৯০০ তিরমিযী ২৮৪)

২৫.তারপর “আল্লাহু আকবার” বলে ২য় সিজদায় যাবে ও দু’আ পড়বে।২য় ও ৪র্থ রাক’আতে দাঁড়ানোর সময় সিজদা থেকে উঠে শান্তভাবে বসবে।তারপর মাটিতে দুই হাত রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।(বুখারী ৮২৩)

২৬.রাসূল (সা:) ২য় সিজদাহ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দাড়াতেন না (বুখারী ৮০২)

২৭.২য় রাক’আত শেষ করার পর বৈঠকে বসবে। ১ম বৈঠক হলে কেবল ”আত্তাহিয়াতু ” পড়বে।(মিশকাত ৭৯১)

২৮.১ম বৈঠক শেষে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধ বা কান বরাবর দুই হাত উঠিয়ে “রাফউল ইয়াদায়েন ” করবে।(বুখারী ৭৩৫-৭৩৯)

২৯.শেষ বৈঠক হলে ‘আত্তাহিয়াতু ,দরুদ, দু’আয়ে মাছূরা পড়বে।(বুখারী ৮৩৫)

৩০.১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপরে বসবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে ও আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করবে। (বুখারী ৮২৮ মিশকাত ৭৯২)

৩১.বৈঠকে ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের পিঠে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করবে।(মুসলিম ১১৯৪-৯৮, মিশকাত ৯০৬,৮,১১,১৩,১৭)

***‘আশহাদু আল্লাহ ইলাহা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে আবার ইল্লাল্লাহু বলে টুপ করে নামিয়ে ফেলার কোন দলিল নেই।

৩২.এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখবে। (নাসাঈ ১২৭৫)

৩৩.তারপর “আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।(বুখারী ৮৩৪)

৩৪.সালাম ফিরিয়ে প্রথমে সরবে ১বার “আল্লাহু আকবার” ও ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলবে এবং হাদিসে বর্ণিত দু’আ গুলো পড়বে।

***ফরয নামায শেষে সম্মিলিত মুনাজাতের দলিল নেই।

৩৫.সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।(বুখারী ৬৩১ মিশকাত ৬৮৩)

৩৬.সহো সিজদার নিয়ম: ১.শেষ বৈঠকে “আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দু’আ আছুরা পড়ে দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সিজদাহ দিবে এবং পুনরায় সালাম ফিরাবে।(মুসলিম ১১৮০ মিশকাত ১০২১)অথবা ২.শেষ বৈঠকে “আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দু’আ আছুরা পড়ে সালাম ফিরানোর পূর্বেই দুইটি সিজদাহ দিবে এবং সালাম ফিরাবে। (বুখারী ১২৩০ মুসলিম ১১৫৬-৭৪ মিশকাত ১০১৮)

***১.সহো সিজদার জন্য শুধু ডান দিকে সালাম ফিরানোর কোন দলিল নেই।

২.দুইটি সিজদা দেওয়ার পর পুনরায় “আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দু’আ আছুরা পড়ার কোন দলিল নেই।

৩৭.ইমামের ভুল সংশোধনের জন্য মুক্তাদীরা “সুবহানাল্লাহ ” বলবে।(বুখারী ১২০৩ মিশকাত ৯৮৮ মুসলিম ৮৩৫,৪০)

***”আল্লাহু আকবার” বলার কোন দলিল নেই।

৩৮.সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নড়াচড়া করা যাবে না বলে যে ধারনা প্রচলিত। তা সঠিক নয়। প্রয়োজনে ডানে,বামে,সামনে,পিছনে সরানো যাবে।(বুখারী ৬৯৯ মিশকাত ১১০৮)

৩৯.জামায়াত চলা অবস্থায় অন্য নামায পড়া বিশেষ করে ফজরের সুন্নাত নামায পড়া হারাম।(বুখারী ৬৬৩ মুসলিম ১৬৭৮ মিশকাত ১০৫৮)

***ফজরের সুন্নাত ছুটে গেলে ফজরের ফরয সালাতের পরে পড়া যাবে।(মিশকাত ১০৪৪ আবু দাউদ ১২৬৭)।

৪০.উমরী কাযা আদায় করা বিদআত।

৪১.সুন্নাত না পড়ার জন্য মসজিদে লাল বাতি জ্বালানো বিদআত।

৪২.সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু’আ পড়া বিদআত।

৪৩.মাগরিবের আযান ও ইক্বামতের মাঝে দুই রাকআত সুন্নাত নামায রয়েছে (বুখারী ১১৮৩ মুসলিম ১৯৭৫ মিশকাত ১১৬৫)

৪৪.মসজিদের একপাশে আল্লাহ ও অন্য পাশে মুহাম্মদ লিখা হারাম(শিরকি আক্বীদা)(বুখারী ৩৪৪৫ মিশকাত ৪৮৯৭)

৪৫.এক ওয়াক্ত ছালাত কাযা হলে এক হুকবা বা ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বছর জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এটা সঠিক নয়।

৪৬.উচ্চস্বরে জিকির করা হারাম।(সূরা আরাফ ২০৫ বুখারী ২৯৯২ মিশকাত ২৩০৩)

৪৭.জামাতে অংশগ্রহণ করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করা হারাম।(বুখারী ৯০৮ মুসলিম ১২৪৬)

৪৮.মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ (বছর/মাস/দিন) বসে থাকা উত্তম (বুখারী ১৩০৪ মিশকাত ১৭২৪)


***নামাযের স্থানের প্রায় ১ হাত দুর থেকে যাওয়া যাবে।(বুখারী ৪৯৬,৫০৬)

৪৯.সবচেয়ে বড় চোর হল সে যে নামাযে রুকু ও সিজদাহ পূর্ণ করে না।(মিশকাত ৮৮৫)

1.সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।(মিশকাত ৮৭৮)।।

2.যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না তার নামায বাতিল বলে গণ্য হবে।

3.নামায কবুল হওয়ার ৩ টি শর্ত পবিত্রতা, রুকু ও সিজদাহ।

৫০.মুমিন ও কাফেরদের পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।(মিশকাত ৫৬৯)

***সাহাবীগণ নামায ছাড়া অন্য কোন ‘আমাল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না। (মিশকাত ৫৭৯)

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button