Deprecated: Function jetpack_form_register_pattern is deprecated since version jetpack-13.4! Use Automattic\Jetpack\Forms\ContactForm\Util::register_pattern instead. in /home/islamicask.com/public_html/wp-includes/functions.php on line 6078
গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি ও জায়েয পদ্ধতি – আপনার জিজ্ঞাসা
পবিত্রতা

গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি ও জায়েয পদ্ধতি

প্রশ্ন: আমি নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার গোসল করি: ১. মনে মনে পবিত্র হওয়ার নিয়ত করি; মুখে উচ্চারণ করি না। ২. শুরুতে আমি “শাওয়ার” এর নীচে দাঁড়াই এবং গোটা দেহের উপর পানি প্রবাহিত করি। ৩. লুফা ও সাবান দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করি; এর মধ্যে লজ্জাস্থানও রয়েছে। ৪. শ্যাম্পু দিয়ে আমার সবগুলো চুল ধৌত করি। ৫. এরপর শরীর থেকে সাবান ও শ্যাম্পু দূর করি, তারপর ডান পার্শ্বে তিনবার পানি ঢালি। এরপর বামপার্শ্বে তিনবার পানি ঢালি। ৬. এরপর ওযু করি। সম্প্রতি আমি জেনেছি যে, আমি গোসল করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করছি না। আমি আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করছি, আমি যে এত বছর যাবৎ উপরোল্লেখিত পদ্ধতিতে গোসল করে আসছি এটা কি ভুল; নাকি ঠিক? যদি ভুল হয়, সঠিক না হয় তাহলে বিগত এত বছরের এই ভুলের সংশোধনের জন্য আমি কি করতে পারি। আমার এত বছরের নামায, রোযা কি বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য? যদি তেমনই হয় তাহলে এর সংশোধনে আমি কি করতে পারি? অনুরূপভাবে আমি আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করছি যে, আপনারা আমাকে হায়েয থেকে ও জানাবাত (অপবিত্রতা) থেকে গোসল করার সঠিক পদ্ধতি অবহিত করবেন।

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ।

উল্লেখিত পদ্ধতিতে আপনার গোসল সঠিক ও গ্রহণযোগ্য; আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার কিছু সুন্নত ছুটে গেছে; কিন্তু গোসলের শুদ্ধতার উপর এর কোন প্রভাব নেই।

গোসল দুই ধরণের হতে পারে: ন্যূনতম বা জায়েয পদ্ধতি, পরিপূর্ণ পদ্ধতি।

জায়েয পদ্ধতিতে মানুষ শুধু ফরযগুলো আদায় করে ক্ষান্ত হয়; সুন্নত ও মুস্তাহাব আদায় করে না। সে পদ্ধতিটি হচ্ছে: পবিত্রতার নিয়ত করবে। এরপর গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেওয়ার সাথে গোটা দেহে পানি ঢালবে; সেটা যেভাবে হোক না কেন; শাওয়ারের নীচে, সমুদ্রে নেমে, বাথটাবে নেমে ইত্যাদি।

আর গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে গোসল করেছেন সেভাবে গোসলের সকল সুন্নত আদায় করে গোসল করা। শাইখ উছাইমীনকে গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: গোসল করার পদ্ধতি দুইটি:

প্রথম পদ্ধতি: ফরয পদ্ধতি। সেটা হচ্ছে– গোটা দেহে পানি ঢালা। এর মধ্যে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়াও রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি যে কোনভাবে তার গোটা দেহে পানি পৌঁছাতে পারে তাহলে সে বড় অপবিত্রতা মুক্ত হয়ে পবিত্র হয়ে যাবে। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “যদি তোমরা জুনুবি হও তাহলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন কর।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]

দ্বিতীয় পদ্ধতি: পরিপূর্ণ পদ্ধতি; সেটা হচ্ছে– নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে গোসল করতেন সেভাবে গোসল করা। যে ব্যক্তি জানাবাত (অপবিত্রতা) থেকে গোসল করতে চায় তিনি তার হাতের কব্জিদ্বয় ধৌত করবেন। এরপর লজ্জাস্থান ও লজ্জাস্থানে যা লেগে আছে সেসব ধৌত করবেন। এরপর পরিপূর্ণ ওযু করবেন। এরপর মাথার উপর তিনবার পানি ঢালবেন। এরপর শরীরের অবশিষ্টাংশ ধৌত করবেন। এটাই হচ্ছে পরিপূর্ণ গোসলের পদ্ধতি।[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে সমাপ্ত, পৃষ্ঠা-২৪৮]

দুই:

জানাবাত (অপবিত্রতা) এর গোসল ও হায়েযের গোসলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে, অপবিত্রতার গোসলের চেয়ে হায়েযের গোসলে মাথার চুল অধিক প্রকৃষ্টভাবে মর্দন করা মুস্তাহাব। অনুরূপভাবে নারীর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করাও মুস্তাহাব যাতে করে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। ইমাম মুসলিম (৩৩২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আসমা (রাঃ) একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হায়েযের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পানি ও বরই পাতা নিয়ে সুন্দরভাবে পবিত্র হবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভালভাবে রগড়ে নিবে যাতে করে সমস্ত চুলের গোড়ায় পানিপৌঁছে যায়। তারপর গায়ে পানি ঢালবে। এরপর একটি সুগন্ধিযুক্ত কাপড় নিয়ে তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে। আসমা বলল: তা দিয়ে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে? তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) তাঁকে যেন চুপিচুপি বলেন দিলেন, রক্ত বের হবার জায়গায় তা ঝুলিয়ে দিবে। অতঃপর তিনি জানবাত (অপবিত্রতা) এর গোসল সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বললেন: পানি দ্বারা সুন্দরভাবে পবিত্র হবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভাল করে রগড়ে নিবে যাতে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর গায়ে পানি বইয়ে দিবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন: আনসারদের মহিলারা কতই না ভাল! দ্বীনি জ্ঞানে প্রজ্ঞা অর্জনে লজ্জাবোধ তাদের জন্য বাধা হয় না।”

এতে দেখা গেল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়েযের গোসল ও জানাবাতের গোসলের মধ্যে চুল রগড়ানো ও সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্থক্য করেছেন।

তিন:

জমহুর আলেমের মতে, ওযু ও গোসলের সময় বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়া মুস্তাহাব। আর হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: হাম্বলি মাযহাব মতে, ওযুতে বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়া ওয়াজিব। তবে এই মর্মে সরাসরি কোন দলিল নেই। কিন্তু তাঁরা বলেন: ওযুতে যেহেতু ওয়াজবি; সুতরাং গোসলে ওয়াজিব হওয়া আরও বেশি যুক্তিযুক্ত। কেননা গোসল বড় পবিত্রতা।

তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে, বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়া ওয়াজিব নয়। ওযুর মধ্যেও নয়, গোসলের মধ্যেও নয়।[আল-শারহুল মুমতি থেকে সমাপ্ত]

চার:

গোসলের মধ্যে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া অবশ্যই থাকতে হবে; যেমনটি এটি হানাফি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। ইমাম নববী এ সংক্রান্ত মতভেদ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া সম্পর্কে আলেমগণের চারটি অভিমত রয়েছে:

১। ওযু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে এ দুইটি সুন্নত। এটি শাফেয়ি মাযহাবের অভিমত।

২। ওযু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে এ দুইটি ওয়াজিব। ওযু-গোসল শুদ্ধ হওয়ার এজন্য এ দুইটি পালন করা শর্ত। এটি ইমাম আহমাদের মত হিসেবে মশহুর।

৩। গোসলের ক্ষেত্রে এ দুইটি পালন করা ওয়াজিব; ওযুর ক্ষেত্রে নয়। এটি ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর সাথীবর্গের অভিমত।

৪। ওযু ও গোসলের ক্ষেত্রে নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব; গড়গড়া কুলি করা নয়। এটিও ইমাম আহমাদের অভিমত হিসেবে বর্ণিত। ইবনে মুনযির বলেন: আমিও এ অভিমতের প্রবক্তা।[আল-মাজমু (১/৪০০) থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

অগ্রগণ্য অভিমত: দ্বিতীয় অভিমতটি। অর্থাৎ গোসলের ক্ষেত্রে গড়গড়া কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব। এ দুটি পালন করা গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন: এ দুইটি পালন করা ছাড়া ওযুর ন্যায় গোসলও শুদ্ধ হবে না। কেউ বলেছেন: এ দুইটি ছাড়াই গোসল শুদ্ধ হবে। সঠিক হচ্ছে– প্রথম অভিমত। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন কর।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] এ বাণী গোটা দেহকে অন্তর্ভুক্ত করে। নাকের ও মুখের অভ্যন্তরীণ অংশও দেহের এমন অংশ যা পবিত্র করা ফরয। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওযুর মধ্যে এ দুইটি পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহ্‌র বাণী: “তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর” এর অধীনে এ দুইটিও অন্তর্ভুক্ত হয়। সুতরাং এ দুইটি যদি মুখমণ্ডল ধোয়ার অধীনে পড়ে যায়; যে মুখমণ্ডল ধৌত করা ওযুর ক্ষেত্রে ফরয সুতরাং গোসলের ক্ষেত্রেও এ দুইটি মুখমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা গোসলের ক্ষেত্রে মুখমণ্ডলের পবিত্রতা ওযুর চেয়ে তাগিদপূর্ণ।[আল-শারহুল মুমতি থেকে সমাপ্ত]

পাঁচ:

যদি আপনি অতীতে গোসলকালে গড়গড়া কুলি করা কিংবা নাকে পানি দেয়া পালন না করে থাকেন না-জানার কারণে কিংবা যে আলেমগণ এ দুটোকে ওয়াজিব বলেন না তাদের অভিমতের উপর নির্ভর করার কারণে সেক্ষেত্রেও আপনার গোসল সহিহ এবং এ গোসলের ভিত্তিতে আপনার আদায়কৃত নামাযও সহিহ; আপনাকে সে সকল নামায পুনরায় পড়তে হবে না। যেহেতু গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া সংক্রান্ত আলেমগণের মতভেদ অত্যন্ত শক্তিশালী যেমনটি ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।

আল্লাহ্‌ সকলকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তোষজনক আমল করার তাওফিক দিন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সুত্র: Islamqa.info

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button