প্রশ্ন : মসজিদে কথা বললে ছাওয়াব কর্তন করা হবে কি? শুনা যায়, আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয় তেমনি মসজিদে কথা বলা ছওয়াবকে পুড়িয়ে দেয়’। মসজিদে ইসলামী নাটক করা যাবে কি?
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, চতুষ্পদ জন্তু যেমন তৃণলতা খেয়ে ফেলে তেমনি মসজিদে কথা-বার্তা বলা ছওয়াবকে খেয়ে ফেলে’ সেটিও ভিত্তিহীন (যঈফাহ হা/০৪; আছ-ছামারুল মুস্তাতাব ৬৮৩ পৃ:)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মসজিদে কথা বললে চল্লিশ বছরের আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’। সেটিও ভিত্তিহীন (আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব ৬৮৩ পৃ:)।
সুতরাং মসজিদে কথা বললেই ছওয়াব কর্তন করা হবে- এ কথা ঠিক নয়। কারণ মসজিদে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা জায়েয (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ২/১৮৭; তোহফাতুল আহওয়াযী ২/২৩২)।
আর মসজিদে শরী‘আত সম্মত কোন অনুষ্ঠান করায় বাধা নেই। জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর নবী ও ছাহাবীগণের সাথে একশরও অধিকবার মসজিদে মিলিত হয়েছি। তাদেরকে দেখেছি, তারা পরস্পরে কবিতা ও জাহেলী যুগের কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আর তিনি মাঝে-মধ্যে তাদের সাথে মুচকি হাসতেন (আহমাদ হা/২০৮৮৫; আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব ৮৩২ পৃ:, সনদ ছহীহ)।
রাসূল (ছাঃ) প্রায়ই ফজরের ছালাতের পর ছাহাবীদের নিয়ে জাহেলী যুগ সম্পর্কে আলোচনা করতেন। এতে ছাহাবীগণ হাসাহাসি করতেন ও তিনি মুচকি হাসতেন (মুসলিম হা/৬৭০; মিশকাত হা/৪৭৪৭)।
হাস্সান বিন ছাবিত (রাঃ)-কে মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখে ওমর (রাঃ) বাধা দিলে হাসসান বলেন, আমি রাসূলের যুগে কবিতা আবৃত্তি করতাম। তিনি আমাকে বাধা দেননি’ (বুখারী হা/৩২১২; মুসলিম হা/২৪৮৫)।
অতএব মুছাল্লীদের কষ্ট না দিয়ে এবং মসজিদের আদব বিরোধী কথা-বার্তা না থাকলে যেকোন ইসলামী অনুষ্ঠান মসজিদে করা যাবে। আর যা নিষিদ্ধ তা হ’ল মসজিদে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, হারানো বস্ত্ত খোঁজ করা, পরনিন্দা করা, চোগলখুরি করা, গোলাকৃতি হয়ে বসে অর্থহীন দুনিয়াবী গল্প-গুজব করা, চিৎকার করে কথা বলা ইত্যাদি (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৭৭; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২০০; তাফসীরে কুরতুবী সূরা নূর ৩৭ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।