সালাত / নামায

নামাযের গুরুত্ব

নামায ও তার গুরুত্বের কথা কুরআন মাজীদের বহু জায়গাতেই আলোচিত হয়েছে। কোথাও নামায কায়েম করার আদেশ দিয়ে, কোথাও নামাযীর প্রশংসা ও প্রতিদান এবং বেনামাযীর নিন্দা ও শাস্তি বর্ণনা করে, আল্লাহ তাআলা নামাযের প্রতি বড় গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক স্থানে তিনি বলেন,

فإنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ

অর্থাৎ, তারপর তারা যদি তওবা করে নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (নচেৎ নয়।) (কুরআন মাজীদ/১১)

অন্যত্র বলেন,

 مُنِيْبِيْنَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَأَقِيْمُوا الصَّلاَةَ وَلاَ تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

অর্থাৎ, বিশুদ্ধচিত্তে তাঁর অভিমুখী হও; তাঁকে ভয় কর, যথাযথভাবে নামায পড়, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হ্‌য়ো না। (কুরআন মাজীদ৩০/৩১)

কুরআন মাজীদে নামাযকে মহান আল্লাহ ‘ঈমান’ বলে আখ্যায়ন করেছেন, তিনি বলেন,

وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ: (১৪৩) سورة البقرة

অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের (কা’বার দিক ছাড়া বায়তুল মাকদেসের দিকে মুখ করে আদায়কৃত পূর্বের) ঈমান (নামায)কে বরবাদ করবেন না। (কুরআন মাজীদ/১৪৩)

নামায মু’মিনের ঈমান ও মুসলিমের ইসলামের নিদর্শন। মহানবী (সাঃ) বলেন, “ইসলাম ও শির্ক এবং কুফরের মাঝে পার্থক্য নির্বাচনকারী হল এই নামায।” (মুসলিম, সহীহ৮২নং, মিশকাত৫৬৯নং)

কোন আমল ত্যাগ করার ফলে কেউকাফে র হয়ে যায় না। কিন্তু সাহাবাগণ নামায ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন। (তিরমিযী, সুনান, মিশকাত৫৭৯নং)

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে তার দ্বীনই নেই।” (ইবনেআবীশাইবাই, ত্বাবারানীরকাবীর, সহীহতারগীব৫৭১নং)

হযরত আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, “যার নামায নেই তার ঈমানই নেই।” (ইবনেআব্দুলবার, প্রমুখ, সহীহতারগীব৫৭২নং)

প্রিয় নবী (সাঃ) আরো বলেন, “আমাদের ও ওদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তিই হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে (বা কুফরী করবে।) (তিরমিযী, সুনান২৬২১, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান১০৭৯নং)

তিনি আরো বলেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ বান্দাগণের উপর ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থরুপে আদায় করবে এবং তাতে গুরুত্ব দিয়ে তার কিছুও বিনষ্ট করবে না, সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি আছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি তা আদায় করবে না, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন, নচেৎ ইচ্ছা হলে জান্নাতেও দিতে পারেন।” (মালেক, মুঅত্তা, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব৩৬৩নং)

পূর্বোক্ত আয়াত ওহাদীসের ভিত্তিতে বড় বড় বহু উলামাগণ বলেছেন যে, বেনামাযী কাফের। কোন মুসলিম (নামাযী) নারীর সাথে তার বিবাহ্‌ হতে পারে না, তার যবাইকৃত পশুর গোশতহালাল হয় না, সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া হবে না, মুসলিম (নামাযী) ছেলেরা তার ওয়ারিস হবে না বা সেও নামাযী বাপের ওয়ারিস হবে না এবং তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না — ইত্যাদি।

অবশ্য শেষোক্তহাদীস এবং অনুরুপ অন্যান্যহাদীসের ভিত্তিতে অন্যান্য আলেমগণ বলেন যে, ‘বেনামাযী কাফের নয়, তবে নামায ত্যাগ করা কাফেরের কাজ বটে।’ (ইবনেবায, ইবনেউসাইমীনআলবানীরফতোয়াদ্রষ্টব্য)

যাইবা হোক উক্ত আয়াত ওহাদীসসমূহে নামাযের বিরাট গুরুত্ব স্পষ্ট। নামায হল দ্বীনের খুঁটি। (তিরমিযী, সুনান২১১০, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান৩৯৭৩নং) দ্বীনের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে এটাই হল দ্বিতীয় বুনিয়াদ। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত৪নং)তাই তো প্রিয় নবী (সাঃ) জীবনের শেষ মুহূর্তে মরণ-শয্যায় শায়িত অবস্থাতেও নামাযের জন্য ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। ইন্তেকালের পূর্বে শেষ উপদেশে তিনি নামাযের গুরুত্ব সম্বন্ধে উম্মতকে সচেতন করে গেলেন। বললেন, “নামায! নামায! আর ক্রীতদাস-দাসী (এর ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো।) (জামে৩৮৭৩নং)

সাবালক হলেই মুসলিমের উপর নামায ফরয হয়। তবুও অভ্যস্ত করার উদ্দে শ্যে ই আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের বয়স ৭ বছর হলেই নামাযের আদেশ দাও। ১০ বছর বয়সে নামাযে অ ভ্যা সী না হলে তাদেরকে প্রহার কর। আর তাদের প্রত্যেকের বিছানা পৃথক করে দাও।” (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত৫৭২নং)

সব ওয়াক্তের নামায নয়, কেবলমাত্র এক ওয়াক্তের আসরের নামায ছুটে গেলে বা না পড়া হলে তার ক্ষতির পরিমাণ বুঝাতে প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করে, সে ব্যক্তির আমল পন্ড হয়ে যায়।” (বুখারী৫৫৩, নাসাঈ)

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে গেল, তার যেন পরিবার ও ধন-মাল লুণ্ঠন হয়ে গেল।” (মালেক, বুখারী৫৫২, মুসলিম৬২৬নংপ্রমুখ)

মহান আল্লাহ বলেন,

فخلفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا

অর্থাৎ, ওদের পর এল এমন (অপদার্থ) পরবর্তীদল; যারা নামায নষ্ট করল ও কুপ্রবৃত্তি-পরবশ হল। সুতরাং ওরা অচিরেই কঠিন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (কুরআন মাজীদ১৯/৫৯)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاؤُوْنَ)

 অর্থাৎ, সুতরাং দুর্ভোগ সেই সকল নামাযীদের, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায পড়ে। (কুরআন মাজীদ১০৭/)বলা বাহুল্য, নামাযী হয়েও নামাযে গাফলতি করার কারণে যদি দোযখের দুর্ভোগ ভোগ করতে হয়, তাহলে বেনামাযী হয়ে কত বড় দুর্ভোগ ভোগ করতে হবে তা অনুমেয়।

মরণের পরপারে মধ্যজগতে নামাযে উদাসীন ও শৈথিল্যকারী ব্যক্তির মাথায় কিয়ামত অবধি পাথর ঠুকে ঠুকে মারা হবে। (বুখারী১১৪৩নং)

নামায আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্কের এক সেতুবন্ধ। “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে সর্বাগ্রে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। সুতরাং তা সঠিক হয়ে থাকলে তার অন্যান্য আমলও সঠিক বলে বিবেচিত হবে। নচেৎ অন্যান্য সকল আমল নিষ্ফল ও ব্যর্থ হবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব৩৬৯নং)

নামায এত গুরুত্বপূর্ণ যে, তার শর্তাবলী বর্তমান থাকা কালে তা (নাবালক শিশু, পাগল ও ঋতুমতী মহিলা ছাড়া) কারো জন্য কোন অবস্থাতেই মাফ নয়। এমন কি যুদ্ধের ময়দানে প্রাণহ্‌ন্তা রক্ত-পিপাসু শত্রুদলের সামনেও নয়!(কুরআন মাজীদ ৪/১০২) অসুস্থ অবস্থায় খাড়া হয়ে না পারলে বসে, বসে না পারলে কাৎ হয়ে শুয়েও নামায পড়তেই হবে। (বুখারী, মিশকাত ১২৪৮ নং) ইশারা-ইঙ্গিতে রুকু-সিজদা না করতে পারলে মনে মনে নিয়তেও নামায পড়তে হবে। চেষ্টা সত্ত্বেও পবিত্র থাকতে অক্ষম হলেও ঐ অবস্থাতেই নামায ফরয। (ইবনে উসাইমীন, কাইফা য়্যাতাত্বাহ্‌হারুল মারীযু অয়্যুসাল্লী দ্রষ্টব্য)

সূত্র: স্বালাতে মুবাশশির
লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button