দৈনন্দিন

প্রশ্ন : জনৈকা দ্বীনদার মহিলা স্বপ্নে কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং এটাকে ভাল স্বপ্ন মনে করেন। স্বপ্নে তিলাওয়াতকৃত আয়াতের অর্থ পড়ে তিনি বলেন, আয়াতে বর্ণিত কাজটি আল্লাহ তাকে পালন করতে আদেশ করেছেন। তার উক্ত দাবী কি সঠিক?

উত্তর : ইমাম ইবনু সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বপ্নে কুরআন তিলাওয়াত করেন, তিনি যদি দ্বীনদার হয়ে থাকেন, তবে এটা তার মযবুত ঈমান ও তাক্বওয়ার নিদর্শন। সত্যিই যদি ঐ মহিলা আল্লাহর অনুগত বান্দী হয়, তবে তা তার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির প্রতিও ঈঙ্গিত বহন করে। আর যদি ঐ মহিলা দ্বীনদার না হয়ে গুনাহগার হয়, তবে এর মাধ্যমে তাকে তওবাহ ও সৎকর্মের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে। পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছ ও পবিত্র জীবনযাপন করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। শরী‘আত ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরতে বলা হচ্ছে। স্বপ্নে যে আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা হয়েছে সেগুলো যদি কুরআনের সাথে মিলে যায়, তবে তার উপর আমাল করা উচিত। আর যদি ভুল হয় তবে তা বর্জনীয়। এর মাধ্যমে শয়তান তাকে ভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত করতে চাইছে (https://www.coffeear.com/woman-reads-koran-dream.htm)।

উল্লেখ্য যে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা শরী‘আত সম্মত। কিন্তুু সব ব্যাখ্যাকে শরী‘আত মনে করা উচিত নয়। কেননা ব্যাখ্যা ভুলও হতে পারে। যেমনটি আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। তিনি একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে চাইলে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি এর ব্যাখ্যা দাও’। ব্যাখ্যা করার পর যখন তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বললেন, আচ্ছা আমাকে বলুন, আমি ঠিক ব্যাখ্যা করেছি, না ভুল? নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কিছু ঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন যা আমি ভুল করেছি। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কসম কর না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৪৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৬৯)। এ জন্যই ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘ভুল ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যাকে প্রথমেই চূড়ান্ত বলে মনে না করা’ মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন (অধ্যায় নং-৯১, অনুচ্ছেদ নং-৪৭)।

ইসলামী শরী‘আতে স্বপ্ন তিন প্রকার। যথা : মনের কল্পনা, শয়তানের তরফ থেকে ভয় দেখানো এবং আল্লাহর তরফ হতে সুসংবাদ। তাই কেউ যদি অপসন্দনীয় কিছু দেখে তবে সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। বরং উঠে যেন ছালাত আদায় করে নেয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০১৭)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই এ সময় আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তখন তা অন্যের কাছে প্রকাশ না করে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হয় (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৪৫)।

 

সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
Back to top button