রোজা / সিয়াম

যে নারী অসুস্থ; যার রোযা রাখার শক্তি নেই

আমার স্ত্রী নিম্ন রক্তচাপ (Low Blood Pressure) এ ভুগছেন। যে রোগ তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং রোযা রাখার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে। যদি সে রোযা রাখে তাহলে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে; এমনকি বেহুঁশ হওয়ার অবস্থা হয়ে যায়। রোযাগুলো কাযা পালন করার ক্ষেত্রে তার উপর কি করা আবশ্যক। যে কি গরীবদেরকে খাদ্য দেয়ার জন্য কিছু অর্থ পরিশোধ করবে? যদি সেটা করা যায় তাহলে কি সে ঐ অর্থ একটা ইসলামী দাতব্য সংস্থাকে দিতে পারবে; যারা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম দেশে মুসলমানদের জন্য খাদ্য ও সহযোগিতা সরবরাহ করে থাকে। কারণ আমার স্ত্রী বিশ্বের এমন এক উন্নত দেশে থাকেন যেখানের গরীবদেরকে মুসলিম দেশগুলোতে বসবাসকারীদের সাথে তুলনা করলে তারাও ধনী লোক হিসেবে গণ্য হবেন।

উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ।

এক:

এ রোগটি যদি দীর্ঘস্থায়ী রোগ না হয় এবং সুস্থ হওয়ার আশা থাকে; তাহলে তিনি সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করবেন এবং যে দিনগুলোর রোযা রাখতে পারেননি সে দিনগুলোর রোযা কাযা পালন করবেন।

আর যদি রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে; তাহলে তার উপর থেকে কাযা পালনের আবশ্যকতা মওকুফ হয়ে যাবে এবং রমযান মাসের প্রতিদিনের বদলে একজন করে মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব হবে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াকে এমন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ব্যক্তি রোযা রাখতে গেলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। জবাবে তিনি বলেন: যদি রোযা রাখা তার জন্য এ ধরণের রোগের কারণ হয় তাহলে সে রোযা না রেখে কাযা পালন করবেন। যদি যে কোন সময় রোযা রাখলেই তার এ অবস্থা হয় তাহলে তিনি রোযা পালনে অক্ষম হিসেবে গণ্য হবেন এবং প্রতিদিনের বদলে একজন করে মিসকীন খাওয়াবেন। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২১৭) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

“অক্ষম ব্যক্তির উপর রোযা ফরয নয়। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য দিনগুলোতে সংখ্যা পূরণ করবে”।[সূরা বাক্বারা, ২:১৮৫]

তবে গবেষণার মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, অক্ষমতা দুই প্রকার: সাময়িক অক্ষমতা ও স্থায়ী অক্ষমতা। সাময়িক অক্ষমতা হল: যা দূর হওয়ার আশা রয়েছে। আয়াতে সে অক্ষমতার কথায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অক্ষম ব্যক্তির অক্ষমতা দূর হলে সে রোযাগুলো কাযা করবে। যেহেতু আল্লাহ্‌ বলেছেন: “সে অন্য দিনগুলোতে সংখ্যা পূরণ করবে” । আর স্থায়ী অক্ষমতা হল যা দূর হওয়ার আশা নেই। এমন ব্যক্তির ওপর প্রতিদিনের বদলে একজন করে মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব।”[আল-শারহুল মুমতি (৬/৩২৪-৩২৫) সমাপ্ত]

দুই:

রোযার কাফ্‌ফারা হিসেবে যে পরিমাণ খাদ্য দেয়া ওয়াজিব: প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া। এর পরিমাণ হচ্ছে– স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রধান খাদ্যদ্রব্যের অর্ধ সা’। অর্ধ সা’-এর ওজন প্রায় দেড় কিলোগ্রাম।

ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ্‌-দায়িমা, প্রথম খণ্ডে (১০/১৬৭) এসেছে: “আপনি যে কয়দিনের রোযা রাখেননি সে কয়দিনের প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাদ্য ফিদিয়া হিসেবে প্রদান করলে হবে। একদিনের খাদ্যের পরিমাণ হচ্ছে অর্ধ সা’। অর্থাৎ প্রায় দেড় কিলোগ্রাম চাল, গম বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য সাধারণত স্থানীয়রা যে খাদ্য খেয়ে থাকে।”[সমাপ্ত]

তিন:

এমন মিসকীনকে খাওয়ানো ওয়াজিব যে মিসকীনের কাছে তার নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য নেই। তাই আপনাদের দেশে যদি মিসকীন না থাকে তাহলে অন্য যে দেশে মিসকীন আছে সেখানে খাদ্য প্রদান করার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া জায়েয হবে। আমরা যতটুকু পারি আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ততটুকু পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অনুরূপভাবে আপনারা যে দেশে থাকেন সে দেশের চেয়ে যদি অন্য কোন দেশে ক্ষুধাগ্রস্ততা ও প্রয়োজন বেশি হয় তাহলে কাফ্‌ফারা ও সদকা সেই দেশে স্থানান্তরিত করা জায়েয আছে।

আরও জানতে দেখুন: 4347 নং ও 43146 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সুত্রঃ islamqa

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য লিখা

Back to top button