প্রশ্ন: কোন কোন ক্ষেত্রে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা যায়?
উত্তর : যে সকল স্থানে নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মিলিতভাবে দুহাত উত্তোলন করে দুআ করেছেন:
১) ইস্তিস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য দুআ: অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও যথারীতি বৃষ্টি না হলে
শরীয়তে ‘ইস্তিসকা’র (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করার) নির্দেশ এসেছে।
‘আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , একদিন নবী (সাঃ) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন
উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল , হে আল্লাহর রাসূল ! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ,
পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে । আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন ।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) স্বীয় হস্তদয় উত্তোলন পূর্বক দোয়া করলেন । সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না ।
(রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি , তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খণ্ড এসে একত্রিত হয়ে গেল
এবং তার মিম্বার থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল ।
এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তি জুম’আ পর্যন্ত হ’তে থাকল । অতঃপর পরবর্তি জুম’আর দিনে
সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে ,
ফসল ডুবে যাচ্ছে । অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করুন ।
তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন , ‘হে আল্লাহ ! আমাদের পার্শ্ববর্তি এলাকায় বৃষ্টি দাও , আমাদের এখানে নয় ।
এ সময় তিনি স্বীয় আঙ্গুলী দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করছিলেন ।
ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল । ( বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১২৭ , হা/৯৩৩ জুম’আর সালাত’ অধ্যায়)
একই বিষয় সম্পর্কিত আরও হাদীস দেখুন – বুখারী প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায় ।
অনুচ্ছেদ: ইস্তিস্কা বা বৃষ্টি জন্য দুআ করার সময় ইমামের সাথে অন্যান্য লোকজনের দুহাত উত্তোলন।
বৃখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৩৭ ; মুসলিম , প্রথম খন্ড , পৃঃ ২৯৩-২৯৪ ।
মুসলিম , মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ ।
বুখারী , প্রথম খন্ড , পৃঃ ১৪০ , হা/১০৩১ ; মিশকাত হা/১৪৯৯।
(২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ
উপরে এক নম্বরে আলোচিত দলীল সমূহ ।
৩) কুনুতে নাযেলা বা মুসলিম জাতির উপর বড় কোন বিপর্যয় ও সমস্যা নেমে আসলে তখন সম্মিলিতভাবে সালাতের মধ্যে সম্মিলিতভাবে দুআ করা জায়েয়। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর ৭০ জন সাহাবীকে কাফিররা ষড়যন্ত্র করে বি’রে মাউনা বা মাউনা নামক একটি কুপের কাছে নিয়ে গেয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলে তিনি ফজরের সালাতে দীর্ঘ একমাস যাবত সেই হত্যাকারী কাফিরদের উপর বদদুআ করেন।
(সহীহ বুখারী, অধ্যায়: মাগাযী বা যুদ্ধ-বিগ্রহ, হা/৪০৮৮, সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৭)
আরও বহু হাদীসে পাওয়া যায়, নবী সা. দুহাত তুলে দুআ করেছেন কিন্তু সেগুলোতে সম্মিলিতভাবে হাত উত্তোলনের বিষয়টি আসে নি।
আল্লাহু আলাম।
– উত্তর দিয়েছেন শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী।