অন্যান্য

প্রশ্নঃ স্ত্রীদেরকে কি স্বামীর বাম পাজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে?

উত্তরঃ  সূরা আন নিসা’র ১নং আয়াতে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।


আবার অন্য এক জায়গায় আল্লাহপাক বলেছেন:
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلاً خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَت دَّعَوَا اللّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحاً لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর “তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া”, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করল, তখন, সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা গর্ভ। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকল যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদিগকে সুস্থ ও ভাল দান কর তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করব।
(সূরা: আল আ’রাফ | আয়াত: ১৮৯)

উপরের আয়াত দুটি বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, “তোমাদেরকে/তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে/একটি মাত্র সত্তা থেকে”। এখানে তোমাদেরকে/তোমাদিগকে বলতে সমগ্র মানবজাতিকে বুঝিয়েছেন। কেবলমাত্র পুরুষজাতিকে নয়। তাহলে সমগ্র মানবজাতিকে তিনি একটি মাত্র সত্তা বা ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন
আর “বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী” এই কথাটি দ্বারা তো পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সমগ্র পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করে বিস্তার করেছেন অর্থাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি একথা বলেননি যে প্রত্যেক পুরুষ থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই ধর্মীয় দিক থেকে এব্যাপারটি পরিষ্কার যে আল্লাহ হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টির পর তার পাঁজরের হাড় থেকে হযরত হাওয়া (আ:) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে পর্যায়ক্রমে সকল পুরুষ-নারী সৃষ্টি করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

এবার একটি হাদিস শুনি:
আবু হুরায়রা সূত্রে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ
তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড্ডি সবচেয়ে বেশী বাঁকা, যদি তা সোজা করতে চাও ভেঙ্গে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।এখানেও বলা হয়নি যে প্রত্যেক নারী তার স্বামীর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি।(মুসলিম ১৪৬৮)

একটি কথা বলা যায়, যেসব মহিলা তালাক প্রাপ্ত হয়ে বা স্বামী মারা যাওয়ার কারনে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে করেন, তাদের ব্যাপরে কোরআন বা হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাহলে তারা কিসের থেকে সৃষ্টি বা কতজন পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি?
তাই কোরআন ও হাদিসের আলোকে একথা বলা যায় যে, আল্লাহপাক সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার পাঁজরের হাড় থেকে হযরত হাওয়া (আ:) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দু’জন থেকে পর্যায়ক্রমে সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি করে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে ছিয়েছেন। প্রত্যেক নারীকে তার স্বামীর (বা পুরুষের) পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেননি।

আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button