অন্যান্য

প্রশ্ন: কাফের কাকে বলে?

উত্তর:  কাফির শব্দটি কুফর থেকে উৎকলিত। ‘কুফর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা অথবা গোপন করা।
বাংলাতে ‘কাফের’ শব্দের অর্থ করা হয় অবিশ্বাসী।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলাম বা ইসলামের কোন অংশকে, ক্বুরানুল কারীম বা এর কোন আয়াত, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা
কোন একজন নবী অথবা রাসূলকে অস্বীকার করে, ইসলামি আকিদাহ বা এর মৌলিক কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমানিত ইসলামের কোন বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে,
অবিশ্বাস করে, প্রত্যাখ্যান অথবা এইগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা অবজ্ঞা করে, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি একজন কাফের। কাফের চির জাহান্নামী, সে কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা।
অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে থাকবে।

 

💠 উদাহরণঃ ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে ‘রাসুল’ বা আল্লাহর দূত হিসেবে বিশ্বাস করেনা, ক্বুরানুল কারীম ‘আল্লাহর কালাম’ বিশ্বাস করেনা,
একারণে তারা কাফের, তারাও চির জাহান্নামী যদিওবা তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। অনুরূপভাবে নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা তারাও কাফের।
হিন্দুরাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করেনা, সুতরাং একদিক থেকে তারা যেমন মুশরেক, অন্যদিক থেকে তারা কাফেরও বটে।

ফাসেক কাকে বলে?

যে ব্যক্তি ইসলাম বিশ্বাস ও স্বীকার করে অথচ ইসলামের আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে বা তা মেনে চলে না, তাকে ফাসেক বলে ।

‘ফিসক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে অবাধ্যতা। বাংলাতে ‘ফাসেক’ শব্দের অর্থ করা হয় পাপীষ্ঠ। 

মুশরেক কাকে বলে?

‘শিরক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কোন কিছুতে কাউকে শরিক বা অংশীদার বানানো। যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে মুশরেক বলা হয়,

বাংলাতে ‘মুশরেক’ শব্দের অর্থ করা হয় অংশীবাদী। মুশরেক বলা হয় তাকে যে কোন কিছুকে আল্লাহর অপ্রতিদ্বন্দ্বী একক সত্ত্বা, মর্যাদা বা ক্ষমতার সমান বা অংশীদার বলে বিশ্বাস করে, মনে করে অথবা দাবী করে। মুশরেক চির জাহান্নামী, সে কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে থাকবে।  

উদাহরণঃ হিন্দুরা তাদের মাটির তৈরী দেব-দেবীদেরকে আল্লাহর সমান মনে করে, সুতরাং জাতিগতভাবে হিন্দুরা মুশরেক। মারেফাতে বিশ্বাসী সূফীবাদী অজ্ঞ লোকেরা যারা নিজেদের মুসলমান বলেই মনে করে, কিন্তু তারা তাদের জিন্দা-মুর্দা পীর-ফকিরদেরকে আল্লাহর সমান সম্মান ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভয় করে, তাদেরকে সেজদাহ করে, তাদের কাছে দুয়া করে, বিপদে আপদে উদ্ধার করার জন্য গায়েবী সাহায্য চায়, তাদেরকে আলেমুল গায়েব ও হাজির-নাযির মনে করে. .

এই সবগুলো কাজ ডাহা শিরক। যারা এইগুলো করবে তারাও মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে যদিওবা তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে, যদিওবা তারা লোক দেখানো কিছু নামায-রোযা করে। খ্রীস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম কে আল্লাহর পুত্র মনে করে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), একারণে তারা মুশরেকও বটে।   

মুনাফেক কাকে বলে?

‘নিফাক’ অর্থ কপটতা, ভন্ডামি বা দ্বিমুখী নীতি। যার মধ্যে নিফাক থাকে তাকে মুনাফেক বলা হয়।

যে ব্যক্তি মুখে নিজেকে ঈমানদার, মুসলমান বলে দাবী করে কিন্তু যার অন্তরে ঈমান নেই, যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম আল্লাহর নাযিল করা একমাত্র সত্য ধর্ম, ক্বুরানুল কারীম আল্লাহর বাণী, নবী মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল, এগুলো বিশ্বাস করেনা বা এগুলো নিয়ে সন্দেহ করে, তাকে মুনাফেক বলা হয়।

উদাহরণঃ যারা ‘সেকুলারিজম’ বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মতবাদে বিশ্বাসী, যারা ইসলামের নামায, রোযা, হজ্জ, কোরবানি মানে কিন্তু ‘শরিয়াহ’ বা আল্লাহর আইন দিয়ে ক্বুরান হাদীস দিয়ে দেশ পরিচালনা করা, আইন-আদালত ও বিচার করাকে অস্বীকার করে, মুসলমান নাম নিয়ে হিজাব-পর্দাকে কটাক্ষ করে তারা মুনাফেক।

মুর্তাদ কাকে বলে?

‘রিদ্দা’ অর্থ হচ্ছে পূর্বের অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে যাওয়া। যে ব্যক্তি একবার ইসলাম ধর্ম কবুল করে মুসলিম হয়ে অথবা পূর্বে মুসলিম থাকার পরে কুফুরী অথবা শিরক করে অথবা ইসলামকে অস্বীকার করে পুনরায় কাফের হয়ে যায়, তাকে মুর্তাদ বলা হয়।

দেশে ইসলামী আইন চালু থাকলে এবং সরকার প্রধান যদি মুসলিম হয় তাহলে আদালতে নেওয়ার পূর্বে সে যদি তোওবাহ না করে, তাহলে আদলতে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুর্তাদকে হত্যা করা হবে।

কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যদি কেউ দ্বীন ত্যাগ করে (কুফুরীতে) ফিরে যায় তাহলে তোমরা তাকে হত্যা করো”  [সহীহ বুখারীঃ ৩০১৭] 

কোন ব্যক্তি যদি সারা জীবন নামায রোযা করে কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে কাফের হয়ে মুর্তাদ অবস্থায় মারা যায়, কোন সন্দেহ নেই সে ব্যক্তি চির জাহান্নামী, সে কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে থাকবে।  

উদাহরণঃ যে ব্যক্তি মুসলমানদের ঘরে মুসলমান হিসেবে বেড়ে উঠে কিন্তু পরবর্তীতে নাস্তিক হয়ে যায় অথবা ইয়াহুদী বা খ্রীস্টান হয়ে যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালিগালাজ করে বা ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি করে তবে সে মুর্তাদ হয়ে যাবে।

আহলে কিতাব কাকে বলে?

আহলে কিতাব অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নাযিল করা আসমানী কিতাব এর অনুসারী। ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদেরকে আহলে কিতাব বলা হয়।

কারণ ইয়াহুদীরা দাবী করে তারা মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর নাযিল করা তাওরাত (Old testament) এর অনুসরণ করে আর খ্রীস্টানরা দাবী করে তারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর নাযিল করা ইঞ্জীল (New testament) এর অনুসরণ করে।

উল্লেখ্য, যদিও তাদেরকে আহলে কিতাব বলা হয় পরিচয় হিসেবে, প্রকৃতপক্ষে তারা তাওরাত বা ইঞ্জীলের অনুসরণ করেনা। ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা তাদের সুবিধা ও খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কিতাবের বিকৃত বা অপব্যখ্যা করে সেইগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলেছে।

বর্তমানে ‘বাইবেল’ নামে যা আছে ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের কাছে, Old testament ও New testament এর সমন্বয়ে, এটা আসলে তাওরাত ও ইঞ্জীলের বিকৃত রূপ। 

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য লিখা

Back to top button