কসম ও মান্নত

প্রশ্নঃ যার ওপর কিছু মানতের রোযা আছে সে কি রমযানের রোযার সাথে মানতের রোযা রাখতে পারবে?

উত্তর:

কোন ইবাদত বা নেক আমল করার মানত করলে সেটা পূর্ণ করা ওয়াজিব। যেমন— কেউ একদিন বা দুইদিন রোযা রাখার মানত করল। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কোন আনুগত্য করার মানত করল তাকে ঐ আনুগত্য পালন করতে হবে।”[সহিহ বুখারী (৬৩১৮)]

এ মানতকে যদি বিশেষ কোন সময়ে পালন করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তাহলে সে সময় মানত পালন করাই ওয়াজিব। যেমন যে ব্যক্তি মাসের প্রথম তিনদিন রোযা রাখার মানত করেছে। আর যদি কোন সময় নির্দিষ্ট করা না হয় তাহলে এমন মানতের রোযা যে কোন সময় পালন করা জায়েয। তবে রমযান মাস, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দুই দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো ব্যতীত।

রমযান মাসে মানতের রোযা রাখা যাবে না; যেহেতু এ সময় ফরয রোযা রাখার সময়। সুতরাং এ সময়ে অন্য কোন রোযা পালন করা শুদ্ধ হবে না। আর দুই ঈদের দিন ও তাশরিকের দিনগুলোতে রোযা রাখার ব্যাপারে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যিয়াদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ইবনে উমর (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল। বলল যে, আমি মানত করেছি যতদিন আমি বাঁচি আমি মঙ্গলবারে কিংবা বুধবারে রোযা রাখব। এখন এ দিনটি কোরবানির ঈদের দিনে পড়েছে। ইবনে উমর বললেন: “আল্লাহ্‌ আমাদেরকে মানত পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন; অন্যদিকে আমাদেরকে কোরবানির দিন রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। লোকটি পুনরায় তাকে প্রশ্ন করল। তিনিও পুনরায় একই জবাব দিলেন। কোন কথা বাড়ালেন না।”[সহিহ বুখারী (৬২১২)]

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন নফল রোযা কিংবা মানতের রোযা রাখা যাবে না মর্মে ইজমা সংঘটিত হয়েছে।”[সমাপ্ত]

আয়েশা (রাঃ) থেকে এবং সালেম এর সূত্রে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা উভয়ে বলেন: “তাশরিকের দিনগুলোতে কাউকে রোযা রাখার ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়নি; শুধু যে ব্যক্তি হাদির পশুর ব্যবস্থা করতে পারেনি সে ব্যক্তি ব্যতীত”।[সহিহ বুখারী (১৯৯৮)]

আলেমগণ এই মর্মে সাবধান করেছেন যে, রমযান মাসে অন্য কোন রোযা রাখা শুদ্ধ নয়:

ইমাম নববী তাঁর আল-মাজমু গ্রন্থে (৬/৩১৫) বলেন: “ইমাম শাফেয়ি ও মাযহাবের অন্যান্য আলেমগণ বলেন: রমযান মাস রমযানের রোযা রাখার জন্যই নির্দিষ্ট। সুতরাং রমযান মাসে অন্য কোন রোযা রাখা সঠিক নয়। তাই কোন গৃহে অবস্থানকারী (মুকীম) ব্যক্তি কিংবা মুসাফির কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি যদি এ মাসে কাফ্‌ফারার রোযা, মানতের রোযা, কাযা রোযা কিংবা নফল রোযা রাখে কিংবা সাধারণ নিয়তে রোযা রাখে তাহলে তার নিয়ত শুদ্ধ হবে না এবং তার রোযাও শুদ্ধ হবে না। যে নিয়তে রোযা রেখেছে সে নিয়তেও শুদ্ধ হবে না এবং রমযানের রোযা হিসেবেও শুদ্ধ হবে না।”[সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থে বলেন: মুসাফির ব্যক্তি রমযান মাসে রমযানের রোযা ছাড়া অন্য কোন রোযা রাখতে পারবে না; যেমন—মানতের রোযা, কাযা রোযা। কেননা রোযা না-রাখা জায়েয করা হয়েছে ছাড় স্বরূপ ও সহজ করণার্থে। কেউ যদি সহজীকরণ গ্রহণ করতে না চায়; তাহলে তার উপর অনিবার্য মূল বিধান বাস্তবায়ন করা। তাই কেউ যদি রমযান ছাড়া অন্য কোন রোযার নিয়ত না করে তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে না। না রমযানের রোযা হিসেবে; আর না যে রোযার নিয়ত করেছে সে রোযা হিসেবে। এটিই মাযহাবের সঠিক অভিমত এবং এটাই অধিকাংশ আলেমের অভিমত।”[সমাপ্ত]

তিনি আরও (১৩/৬৪৫) বলেন:

“যদি কেউ বলে: আল্লাহ্‌র জন্য একমাস রোযা রাখা আমার ওপর আবশ্যক। এরপর সে রমযান মাসে সিয়াম সাধন দ্বারা মানতের রোযা রাখা ও রমযানের রোযা পালন উভয়টার নিয়ত করে তাহলে সেটা জায়েয হবে না। যেমনিভাবে কেউ যদি দুই রাকাত নামায পড়ার মানত করে; তখন সে ফজরের নামায আদায় করার দ্বারা মানতের নামায ও ফজরের নামায উভয়টা আদায় হয় না।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি রোযা রাখার মানত করেছে; সে যদি এ মানতকে কোন শর্তের সাথে সম্পৃক্ত করে থাকে তাহলে শর্ত পূর্ণ হওয়ার সময় থেকে তার ওপর ওয়াজিব মানত পূর্ণ করা এবং বিলম্ব না করা। এর উদাহরণ হচ্ছে: যদি আল্লাহ্‌ এ রোগ থেকে আমাকে আরোগ্য দান করেন তাহলে আমার ওপর তিনদিন মানত রোযা রাখা আবশ্যক। ফলে সে ব্যক্তি যদি রোগ মুক্ত হয় তাহলে তার ওপর আবশ্যক অবিলম্বে রোযা পালন করা এবং দেরী না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ্‌র সাথে অঙ্গীকার করে বলেছিল, ‘তিনি যদি স্বীয় অনুগ্রহ থেকে আমাদেরকে দান করেন তাহলে অবশ্যই আমরা ছদকা দেব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব’। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ থেকে দান করলেন তখন তারা তা নিয়ে কার্পণ্য করল এবং (নিজেদের অঙ্গীকার থেকে) মুখ ফিরিয়ে চলে গেল।”[সূরা তাওবা, ৭৫-৭৬]

আর যে মানত কোন শর্তের সাথে সম্পৃক্ত নয়; বরং কোন ব্যক্তি নিজেকে রোযা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলল যে: ‘আল্লাহ্‌র জন্য আমার ওপর তিনদিন রোযা রাখা আবশ্যক’; কোন কারণ ছাড়া। এ ব্যক্তিরও এ আমলটি অবিলম্বে আদায় করা ওয়াজিব। তবে, প্রথম ব্যক্তির মত নয়। যদি রমযান এসে যায় কিন্তু সে তখনও মানতের রোযা রাখেনি, সেক্ষেত্রে সবাই জানেন যে, সে রমযানের রোযা রাখা শুরু করবে। রমযান শেষ হওয়ার পর মানতের রোযা রাখবে। যদি সে রমযান মাসে মানতের রোযা রাখে তাহলে তার মানতের রোযাও শুদ্ধ হবে না এবং রমযানের রোযা হিসেবেও শুদ্ধ হবে না। কোন ব্যক্তির ওপর যদি মানতের তিনটি রোযা থাকে এবং সে রমযান মাসের তিনদিন মানতের রোযা রাখে। তার ওপর কি আবশ্যক? এ রোযা তার মানতের রোযা হিসেবেও কাজে আসবে না এবং রমযানের রোযা হিসেবেও আদায় হবে না। মানতের রোযা হিসেবে কাজে না আসার কারণ হল রমযান মাসের সময় শুধুমাত্র রমযানের রোযা রাখার মত সংকীর্ণ; তাই এ সময়ে অন্য কোন রোযা রাখা শুদ্ধ হবে না। আর রমযানের রোযা হিসেবে আদায় না হওয়ার কারণ হল যেহেতু সে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখার নিয়ত করেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমলসমূহ নিয়ত অনুযায়ী বিবেচ্য হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করেছে সেটাই তার প্রাপ্য”।[আল-লিকা আস-শাহরি (৪/৫২) থেকে সমাপ্ত]

সারকথা: রমযান মাস ফরয রোযা পালন করার জন্য খাসভাবে নির্দিষ্ট। এ মাসে অন্য কোন রোযা রাখা জায়েয নয়; না নফল রোযা, আর না কোন মানতের রোযা; না মুকীম ব্যক্তির জন্য, আর না মুসাফির ব্যক্তির জন্য। অনুরূপভাবে এ মাসের রোযার ক্ষেত্রে একাধিক নিয়ত একত্রিত হওয়াও জায়েয নয়। অর্থাৎ কেউ ফরয রোযা ও মানতের রোযার একসাথে নিয়ত করা। কেননা এ দুটো আলাদা দুটো অভীষ্ট ইবাদত। তাই এক নিয়তে দুটো আমল করা যাবে না।

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে সাব্যস্ত হল: আপনার জন্য রমযানের রোযার সাথে মানতের রোযা পালন করা জায়েয হবে না।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
Back to top button