কসম ও মান্নত

প্রশ্ন: শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর:

আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর নিম্নোক্ত বাণীতে শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারা বর্ণনা করেছেন: “তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু, যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছে করে কর সেগুলোর জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। তারপর এর কাফ্‌ফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি। অতঃপর যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফ্‌ফারা। আর তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো। এভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর”।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯]

সুতরাং একজন মানুষ তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে কোন একটি বাছাই করে নিতে পারেন:

১। দশজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। নিজের ফ্যামিলিকে যে ধরনের খাবার খাওয়ানো হয় সে ধরণের মধ্যম মানের খাবার। প্রত্যেক মিসকীনকে দেশীয় খাদ্যদ্রব্যের অর্ধ সা’ দিতে হবে। যেমন– চাল বা এ জাতীয় অন্য কিছু। অর্ধ সা’এর পরিমাণ হচ্ছে প্রায় দেড় কিলোগ্রাম। যদি কোন দেশে ভাতের সাথে তরকারি খাওয়ার প্রচলন থাকে, অনেক দেশে এটাকে তাবিখ (রান্নাকৃত) বলা হয় সেক্ষেত্রে চালের সাথে তাদেরকে তরকারী বা গোশত দেয়া উচিত। আর যদি দশজন মিসকীনকে একত্রিত করে দুপুরু বা রাতের খাবার খাওয়ানো হয় তাহলে সেটাও যথেষ্ট।

২। দশজন মিসকীনকে বস্ত্র দান করা। যে কাপড় দিয়ে নামায আদায় করা যায় প্রত্যেক মিসকীনকে এমন ড্রেস দিতে হবে। পুরুষদের জন্য জামা (জুব্বা) কিংবা লুঙ্গি ও চাদর। আর নারীদের জন্য গোটা দেহ আচ্ছাদনকারী পোশাক এবং ওড়না।

৩। একজন ঈমানদার ক্রীতদাস আদায করা।

যে ব্যক্তির এর কোনটি করার সামর্থ্য নেই সে ব্যক্তি লাগাতার তিনদিন রোযা রাখবে। জমহুর আলেমের অভিমত হচ্ছে– নগদ অর্থ দিয়ে কাফ্‌ফারা দিলে আদায় হবে না।

ইবনে কুদামা বলেন: কাফ্‌ফারা আদায় করার ক্ষেত্রে খাদ্য কিংবা বস্ত্রের মূল্য দিয়ে দিলে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন সুতরাং অন্য কিছু দিয়ে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। কারণ আল্লাহ্‌ তাআলা তিনটি পদ্ধতি থেকে একটি চয়ন করার সুযোগ দিয়েছেন। যদি মূল্য দেয়া জায়েয হত তাহলে তিনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কোন অর্থ থাকে না।[ইবনে কুদামা এর আল-মুগনি (১১/২৫৬) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: কাফ্‌ফারা অবশ্যই খাদ্য হতে হবে; অর্থ নয়। কেননা কুরআন-সুন্নাহ্‌তে খাদ্যের কথাই এসেছে। আবশ্যকীয় পরিমাণ হচ্ছে– অর্ধ সা’ দেশীয় খাদ্যদ্রব্য; যেমন- খেজুর, গম ইত্যাদি। আধুনিক পরিমানের হিসাবে প্রায় দেড় কিলোগ্রাম। আর যদি আপনি তাদেরকে দুপুরের খাবার খাইয়ে দেন বা রাতের খাবার খাইয়ে দেন কিংবা পোশাক পরিয়ে দেয়, যে পোশাক দিয়ে নামায পড়া জায়েয হবে সেটাও যথেষ্ট। এমন পোশাক হচ্ছে– একটা জামা (জুব্বা) কিংবা একটা লুঙ্গি ও চাদর। [ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৩/৪৮১)থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন বলেন: যদি কেউ ক্রীতদাস না পায়, পোশাক বা খাবার দিতে না পারে তাহলে সে তিনদিন রোযা রাখবে। এ রোযাগুলো লাগাতরভাবে রাখতে হবে। মাঝে কোনদিন রোযা ভাঙ্গা যাবে না।[ফাতাওয়া মানারুল ইসলাম (৩/৬৬৭)

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: islamqa.info

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
Back to top button