ইসলাম যদি শান্তির বানী প্রচার করে থাকে তবে পৃথিবীর বিভিন্ন্ দেশে জিহাদী মুসলিমগন সন্ত্রাসবাদের ভীতি ছড়াচ্ছে কেন?
প্রশ্ন:- ইসলাম যদি শান্তির বানী প্রচার করে থাকে তবে পৃথিবীর বিভিন্ন্ দেশে জিহাদী মুসলিমগন সন্ত্রাসবাদের ভীতি ছড়াচ্ছে কেন?
উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ।
জিহাদ অর্থ:-
জিহাদ সর্ম্পকে শুধু অমুসলিমই নয় মুসলিমদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে প্রচুর। বেশিরভাগ মুসলিম অমুসলিমদের ধারনা কোন যুদ্ধ যদি কোন মুসলিম দ্বারা হয় ব্যক্তিত্ব বা জাতিগত রাজনীতিক বা যে কোন কারনই হোক তা হলো ‘জিহাদ’। জিহাদ শব্দের উৎপত্তি ‘জাহাদা’ হতে যার অর্থ ‘চেষ্টা করা, সংগ্রাম করা’ ইসলামের পথে শয়তানের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে নিজেদের সাথে যুদ্ধ করার অর্থই জিহাদ। অন্যার্থে সামাজকে উন্নত করতে চেষ্টা করা, আত্নরর্ক্ষাথে যুদ্ধ করা, অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা,
সবাই জিহাদ করছে:-
যদি কোন ছাত্র পাস করার জন্য চেষ্টা করে তাহলে আরবী অর্থে সে পাস করার জন্য জিহাদ করেছেন, যদি একজন শ্রমিক তাঁর মালিককে সন্তুষ্ট করার জন্য পরিশ্রম করে তা ভালো বা মন্দ হোক সে জিহাদ করেছে, যদি কোন রাজনীতিক ভোটের জন্য পরিশ্রম করে তা সে ভালো বা খারাপ পর্যায় হোক সে জিহাদ করেছে ভোটের জন্য।
জিহাদ অর্থ ধর্মযুদ্ধ নয়?:-
‘ধর্মযুদ্ধ’ বা ‘হারবুমমুকাদ্দাসা’ বলতে কোন শব্দ কুরআন বা হাদীসে নেই। সর্বপ্রথম ধর্মযুদ্ধ শব্দটি ব্যবহার হয়েছিল জেরুযালেম নগরীকে কেন্দ্র করে ইউরোপের খ্রীষ্টান পোপগন সম্মিলিত হয়ে খ্রীষ্টীয় তের শতাব্দীর সময়কালে নিজেদের (ধর্মীয় শহর) ঘোষনা দেয়ে এবং শান্তিকামী মুসলিমদের বিরুদ্ধে “Crused” বা তথাকথিত ধর্মযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের সুচনা করে। সে শহর তারা দখল করে মুসলিমদের উপর রক্ত-সাগর বইয়ে দেয়। জোর করে মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করা হয় অথচ অত্যাচারীত মুসলিমদের ডাকে অকুতভয় সৈনিক গাজী সালাহদীন জেরুযালেম জয় করেন এবং ইসলামের মহানুভবতা প্রদশর্ন করে প্রত্যেক অমুসলিমকে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেন, তাদের উপাসনালয়ে তাদেরই কর্তৃত্ব বজায় রাখেন।
প্রতিটি ধর্মেই অপরাধী রয়েছে-
যেমন পৃথিবীর ১ নং সন্ত্রাসী হিটলার সে একাই ৬০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। মুসোলিনি সে খ্রীষ্টান লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে সে। পৃথিবীর সমস্ত সন্ত্রাসী হত্যাকর্ম একসাথে করলেও হিটলারের হত্যাকান্ডের সমান কেউ হতে পারবেনা। এরজন্য খ্রীষ্টানধর্মকে দায়ী করা অনুচিৎ।
কেন এসব হচ্ছে?
✔ কোন কোন মুসলিম হয়তো ভুল পথে রয়েছে তারা হয়তো কুরআনকে অনুসরন করছেনা।
✔ এটা এমনও হতেপারে তাদের অহেতুক হয়রানি করা হয়েছে। আপনি যদি প্যালেস্টাইন বা আফগানিস্তান বা পৃথিবীর অন্য দেশ দেখেন এবং ইতিহাস বলে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, সন্তান-সন্ততিকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে অথবা তারা অবিচারের সম্মুখীন। তাদের অধিকার কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেনা, কেউ সাহায্য করছেনা। আমরা প্রায়ই টিভিতে দেখি তারা ট্যাংক,ফাইটার প্লেন, মেশিনগানের বিরুদ্ধে ছোট ছোট শিশু-কিশোররা হাতে তুলে নিয়েছে পাথর বা যা সম্বল।
✔ তাহলে দোষ কাদের? দোষ আমাদের। যদি কোন সন্ত্রাসী দল বা সংগঠন থেকেই থাকে তাহলে আমাদের উচিৎ তার শিকড় খুঁজে বের করা এবং কেন তারা এসব কর্মকান্ড করছে তার যথাযথ কারন খুজেঁ বের করা।
✔ শুধু তথাকথিত সন্ত্রাসীদের হত্যা করলে হবেনা আপনি একজন খুন করবেন ১০ জন তার পরিবর্তে আসবে। ঘটনার গোড়ায় গিয়ে সত্যিকারের কারন খুজেঁ বের করতে হবে, কেন এসব সংগঠিত হচ্ছে ও সে অনুযায়ী সমাধান করতে হবে।
যেমন- হিটলার যখন ইহুদিদের দেশ হতে বের করে দিল তারা আশ্রয় গ্রহন করলো ফিলিস্তিনে স্বভাবতই ফিলিস্তিনের মুসলিমরা তাদের আহলান-সাহলান জানিয়ে থাকতে দিল ভায়ের মতো। কিন্তু তারাই ফিলিস্তিনিদের ঘর হতে বের করে দিল যখন ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ঘর ফিরে পাবার জন্য সংগ্রাম শুরু করলে তাদের বলা হলো সন্ত্রাসী। আত্নঘাতী বোমা হামলার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় ফিলিস্তিনে, আফগানিস্তানে। কে নিজের দেহে বোমা বেঁধে নিশ্চিন্তে মরতে চায়?
মনো-বিজ্ঞানীগন বলেন-
আসল কারন খুজে বের করা উচিৎ কেন তারা এসব করছে? অবশ্যই কোথাওনা কোথাও গন্ডগোল আছে, কেউ বোমাবাজি করছে টাকার জন্য, কেউবা ক্ষমতার জন্য, কেউবা রাজনৈতিক কুশ্রি অভিলাষ পুরনের প্রত্যাশায়\ তবে আমি মনে করি সে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান যেই হোক নিশ্চই সে অবিচার অথবা হয়রানির স্বীকার। অনেক সময় মিথ্যার রঙ্গিন কর্মকান্ডের পেছনে সত্য লুকিয়ে থাকে। তাই মিথ্যাকে হটিয়ে সত্যকে খুজে বের করা উচিৎ। মনো-বিজ্ঞানীগন বলেন যখন কারো উপর অনাকাঙ্খিত অবিচার বা শোষন করা হয় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তখন সে তা আত্নরক্ষার জন্য ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অতএব প্রকৃত সত্যকে খুজেঁ বের করে সমস্যার সমাধান করা উচিৎ ফলে সমগ্র মানবজাতি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। অবিচার বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া চলবেনা তা সে হিন্দু, মুসলিম যেই হোক।
সূত্রঃ ডঃ জাকির নায়েক এর প্রশ্ন – উত্তর পর্ব সমগ্র