প্রশ্ন: পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যারা তাকদীরের মাসআলাসহ আকীদার বিভিন্ন বিষয় পাঠ করা পছন্দ করেন না, তাদের জন্য আপনার উপদেশ কী?
উত্তর: তাকদীরের বিষয়টি আকীদার অন্যান্য মাসআলার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের উচিৎ এ মাসআলাটি সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা অর্জন করা। কেননা এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সন্দেহের ওপর থাকা ঠিক নয়; কিন্তু যে সমস্ত বিষয় না শিখলে অথবা বিলম্বে শিখলে পথ ভ্রষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে, তা অবশ্যই শিখতে হবে। তাকদীরের মাসআলাটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ভালোভাবে শিক্ষা করা প্রতিটি বান্দার ওপর আবশ্যক। মূলতঃ তাকদীরের মাসআলায় কোনো সমস্যা নেই। মানুষের কাছে আকীদার আলোচনা কঠিন হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তারা আকীদা শিখতে গিয়ে ‘কীভাবে’ কথাটিকে ‘কেন’ কথার ওপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অথচ মানুষকে তার আমলের ব্যাপারে দু’টি প্রশ্নবোধক শব্দ দিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। কেন করলে এবং কীভাবে করলে। আমলটি কেন করেছো এটি হলো ইখলাছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা। আর কীভাবে করেছো এটি হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ কীভাবে করেছো এটির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেন করতে হবে এ বিষয়টির প্রতি তেমন কোনো গুরুত্বই দেয় না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চায়; কিন্তু আকীদার বিষয়টির উপরে কোনো গুরুত্ব দেয় না। দুনিয়াবী বিষয়ে মানুষ খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। অথচ তার অন্তর আল্লাহ (আকীদা, ইখলাছ ও তাওহীদের বিষয়) সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল। মূলতঃ দেখা যায় কতিপয় মানুষ বর্তমানে দুনিয়া পূজারী হয়ে গেছে। অথচ সে টেরও পাচ্ছে না। অনেক মানুষ আল্লাহর সাথে শির্কে লিপ্ত হয়েছে। অথচ সে অনুভবও করতে পারে না। আকীদার বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলিম সমাজ পর্যন্ত অনেকেই গুরুত্ব প্রদান করে না। এ বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। অবশ্য বিনা আমলে শুধু মাত্র আকীদার উপরে গুরুত্ব দেওয়াও ভুল। কারণ, আমল হলো আকীদা সংরক্ষণের জন্য প্রাচীর স্বরূপ। আমরা রেডিও-টিভি এবং পত্র-পত্রিকায় শুনতে পাই যে, পরিচ্ছন্ন আকীদাই হলো দীন। আকীদার ওপর গুরুত্ব দেওয়াতে দীনের কিছু কিছু হারাম বিষয়কে হালাল করে নেওয়ার আশংকা রয়েছে। এই যুক্তিতে যে, আকীদা ঠিক আছে।
মোটকথা এ যে, মানুষের উপর আকীদার বিষয়গুলো শিক্ষা করা আবশ্যক। যাতে করে তারা আল্লাহর নাম, গুণাবলী এবং কর্মক্ষমতা ও তাঁর বিধানাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে পারে। নিজে বিভ্রান্ত না হয় এবং অপরকে বিভ্রান্ত না করে। তাওহীদের জ্ঞান সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান। এ জন্য বিদ্বানগণ ইলমে তাওহীদকে ‘ফিকহে আকবার’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকহ বলে নাম রেখেছেন।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ»
“আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের জ্ঞান দান করেন।”[2]দীনের জ্ঞানের মধ্যে তাওহীদের জ্ঞানের গুরুত্ব সর্বপ্রথম। তাই মানুষের ওপর আবশ্যক হলো, এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব প্রদান করবে যে, কীভাবে সে তাওহীদের জ্ঞান অন্বেষণ করবে এবং কোনো উৎস থেকে তা অর্জন করবে। প্রথমে সন্দেহ মুক্ত ও সুস্পষ্ট বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন করবে। অতঃপর বিদ‘আত ও সন্দেহ পূর্ণ বিষয়গুলোর শিক্ষা অর্জন করার পর সঠিক আকীদার আলোকে তার উত্তর দিবে। আকীদার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর জ্ঞান অবশ্যই কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবীগণের বক্তব্য অতঃপর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীনে কেরাম এবং পরবর্তী যুগের নির্ভরযোগ্য আলিমগনের লেখনী ও বক্তব্য থেকে গ্রহণ করতে হবে। তাদের মধ্যে থেকে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া এবং তাঁর সুযোগ্য ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আফসোসের বিষয় এই যে, আমরা নিজেদেরকে হানাফী তথা ইমাম আবু হানীফার মাযহাবের অনুসারী বলে দাবী করি। অথচ আমরা তাঁর গৃহীত আকীদার সাথে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের আকীদার কোন সম্পর্ক নেই। -অনুবাদক।
[2] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম।
সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।