ঈমানফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম

প্রশ্ন: আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে ইলহাদ (إلحاد) কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: ইলহাদের আভিধানিক অর্থ বাঁকা হয়ে যাওয়া বা এক দিকে ঝুকে পড়া। আল্লাহর বাণী,

﴿وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّهُمۡ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُۥ بَشَرٞۗ لِّسَانُ ٱلَّذِي يُلۡحِدُونَ إِلَيۡهِ أَعۡجَمِيّٞ وَهَٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيّٞ مُّبِينٌ ١٠٣﴾ [النحل: ١٠٣]

“যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে, তার ভাষা তো আরবী নয় এবং এ কুরআন পরিস্কার আরবী ভাষায়।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০৩]

লাহাদ কবর যেহেতু এক পাশ দিয়ে বাঁকা করে ভিতরের দিকে প্রবেশ করানো থাকে, তাই তাকে লাহাদ বলা হয়। সঠিক বিষয় জানা না থাকলে ইলহাদ জানা সম্ভব নয়। আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো এগুলোকে আমরা আহলে সুন্নাতদের মূলনীতি অনুযায়ী কোনো প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিকৃতি, বাতিল এবং উপমা-দৃষ্টান্ত বর্ণনা ছাড়াই আল্লাহর শানে প্রযোজ্য অর্থে ব্যবহার করব। সুতরাং আমরা যখন সঠিক পথ জানতে পারলাম, তখন তার বিপরীত পথে যাওয়ার নামই ইলহাদ বা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বন। আলিমগণ ইলহাদকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করেছেন:

১) আল্লাহর কোনো নাম বা কোনো গুণকে সরাসরি অস্বীকার করা: যেমন, জাহেলী যুগের লোকেরা আল্লাহর ‘রহমান’ নামটি অস্বীকার করত কিংবা নামটির প্রতি ঈমান আনয়ন করল; কিন্তু নামটি যে গুণের প্রতি প্রমাণ বহণ করে, তা অস্বীকার করল। যেমন, কোনো কোনো বিদ‘আতী বলে থাকে, আল্লাহ দয়াবিহীন দয়ালু, শ্রবণশক্তিহীন শ্রবণকারী।

২) আল্লাহ নিজেকে যে নামে নামকরণ করেন নি, সে নামে তাঁকে নামকরণ করা: এভাবে নাম রাখা ইলহাদ হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর নামসমূহ কুরআন এবং সুন্নাহতে যেভাবে এসেছে সেভাবেই মানতে হবে। কারও পক্ষে জায়েয নেই যে, নিজ থেকে আল্লাহর নাম রাখবে। কারণ, এটি আল্লাহর ব্যাপারে অজ্ঞতা বশতঃ কথা বলার শামিল। যেমন খৃষ্টানরা আল্লাহকে পিতা বলে এবং দার্শনিকরা ক্রিয়াশীল কারণ বলে থাকে।[1]

৩) আল্লাহর নামসমূহকে সৃষ্টিকুলের গুণাবলীর প্রতি নির্দেশ দানকারী মনে করে উপমা স্বরূপ বিশ্বাস করাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। ইলহাদ হওয়ার কারণ হলো, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহর নাম ও গুণাবলী মানুষের নামের মতই, সে তাকে তার আপন অর্থ হতে সরিয়ে ফেলল এবং সঠিক অর্থ বর্জন করে অন্য অর্থ গ্রহণ করল। এ রকম করা কুফুরী। বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [الشورا: ١١]

“তাঁর অনুরূপ আর কেউ নেই। তিনি সব কিছু জানেন এবং শুনেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيّٗا﴾ [مريم: ٦٥]

“তাঁর সমকক্ষ কেউ আছে কি?” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৫]

ইমাম বুখারী রহ.-এর উস্তাদ নাঈম ইবন হাম্মাদ রহ. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে মাখলুকের সাথে তুলনা করল, সে কুফুরী করল। যে ব্যক্তি আল্লাহর কোনো গুণকে অস্বীকার করল, সেও কুফুরী করল। আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণাম্বিত করেছেন, তাতে মাখলুকের সাথে কোনো তুলনা নেই। ৪) আল্লাহর নাম থেকে মূর্তির নাম বের করা: যেমন, ইলাহ থেকে লাত নাম বের করা, আজীজ থেকে উজ্জা এবং মান্নান থেকে মানাত ইত্যাদি। এখানে ইলহাদ হওয়ার কারণ এ যে, আল্লাহর নামগুলো শুধু তার জন্যই নির্দিষ্ট। অন্য কোনো মাখলুককে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত ইবাদাতের অংশ প্রদান করার উদ্দেশ্যে এগুলোর অর্থ স্থানান্তর করা জায়েয নেই।

[1] অনেকে যেমন আল্লাহকে ‘খোদা’ বলে থাকে, এটাও মারাত্মক একটি ভুল। কেননা এটাও ইলহাদের অন্তর্ভূক্ত হবে।

 

 

সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button