প্রশ্ন: যাদের কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদের শির্ক কী ধরণের ছিল?
উত্তর: যাদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছিল, তারা তাওহীদে রুবূবিয়্যাতে আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক করত না। কুরআনে কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, তারা কেবল তাওহীদে উলুহিয়্যাতে আল্লাহর সাথে শির্ক করত।
রুবূবিয়্যাতের ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহই একমাত্র রব আর তিনিই বিপদগ্রস্তের আহ্বানে সাড়াদানকারী, আর তিনিই বিপদাপদ দূরকারী; ইত্যাদি যে সব বিষয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে জানিয়েছেন যে, তারা সেগুলোর রুবুবিয়্যাত কেবল আল্লাহর জন্য স্বীকৃতি দিত।
কিন্তু তারা ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করত, আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদতও করত। এ ধরণের শির্ক মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কেননা তাওহীদের শাব্দিক অর্থ হলো, কোনো কিছু একক করে নির্দিষ্ট করা। আর আল্লাহ তা‘আলার কতিপয় নির্দিষ্ট হক রয়েছে, যা এককভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব। এ হকগুলো তিন প্রকার:
১. মালিকানা ও কর্তৃত্বের অধিকার
২. ইবাদাত পাওয়ার অধিকার
৩. নাম ও গুণাবলীর অধিকার
এজন্যই আলেমগণ তাওহীদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ, তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ।
আরবের মুশরিকরা কেবল ইবাদত অংশেই আল্লাহর সাথে শরীক করত, তারা আল্লাহর সাথে অন্যেরও ইবাদত করত। আর এ জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ﴾ [النساء: ٣٦]
“তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬] অর্থাৎ তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক করবে না।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [المائدة: ٧٢]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ٤٨]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। তবে এর চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠﴾ [غافر: ٦٠]
“এবং তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদাত করতে অহংকার করবে, তারা অচিরেই অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা ইখলাস বা নিষ্ঠার সূরায় বলেন,
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَٰفِرُونَ ١ لَآ أَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُونَ ٢ وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ ٣ وَلَآ أَنَا۠ عَابِدٞ مَّا عَبَدتُّمۡ ٤ وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ ٥﴾ [الكافرون: ١، ٥]
“বলুন, হে কাফিররা! আমি তার ইবাদাত করি না, যার ইবাদাত তোমরা কর, এবং তোমরাও তার ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি এবং আমি ইবাদাতকারী নই তার, যার ইবাদাত তোমরা করে আসছো।” [সূরা কাফিরূন, আয়াত: ১-৫]
লক্ষ্য করুন, এখানে আমি সূরা আল-কাফিরূনকে সূরা ইখলাস নাম দিয়েছি। কারণ এ সূরা আমল বা কর্মে ইখলাস শিক্ষা দেয়। যদিও সূরাটির নাম সূরা আল-কাফিরূন। কিন্তু এ সূরাটি আমলি ইখলাসের সূরা, যেমনটি সূরা ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ইলমি বা আকীদা বিষয়ক ইখলাসের সূরা।
আল্লাহই হচ্ছেন সত্যিকারের তাওফীকদাতা।
সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।