দ্বীনে মধ্যমপন্থা
প্রশ্ন: দ্বীনে মধ্যমপন্থা কী?
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
দ্বীন মানতে কিছু লোক চরমপন্থি আছে, কিছু আছে নরম ও ঢিলেপন্থী এবং কিছু আছে মধ্যমপন্থী। কেও দ্বীন ও ইবাদত এর ক্ষত্রে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করে, সহজটাকে কঠিন করে এবং কেও একেবারে ঢিলেমি করে, অবজ্ঞা ও অবহেলা করে এবং কঠিনটাকে সহজ মনে করে। অথচ প্রত্যেক জিনিসের মাঝামাঝিটাই ঠিক।
আমাদের দ্বীনই হল মধ্যমপন্থী। তাতে অতিরঞ্জন নেই। মহানবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের পথই হল মধ্যমপন্থা। মহানবী (সঃ)-এর তরীকাই হল মাঝামাঝি আচরণ।
আনাস (রঃ) বলেন যে, তিন ব্যাক্তি নবী (সঃ)-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী (সঃ)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, “তোমাদের সঙ্গে নবী (সঃ)-এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু তোমাদের তাঁর চেয়ে বেশি ইবাদত করা প্রয়োজন)”। সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “ আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।” দ্বিতীয়জন বললেন, “আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।” তৃতীয়জন বললেন, “আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি, তাঁর ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশি রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” ৭০ (বুখারী-মুসলিম)
সুতরাং তাঁর তরীকাতেই আছে মধ্যমপন্থী আচরণ। তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যাক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তাঁর উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দেবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।” ৭৫ (বুখারী)
বুখারির অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।”
যারা ঢিলাপন্থী, তাঁরা সুন্নতের উপর আমল করে না, নফল আদায় করতে সচেষ্ট হয় না, বরং অনেক সময় ফরয আদায়েও শৈথিল্য করে।
উদাহারন স্বরূপঃ-
(ক) একটি লোক ফাসেক (পাপাচার), সে কবীরা গোনাহ করে, কিন্তু নামায পড়ে এবং শিরক করে না। চরমপন্থি বলে, “আমি তাঁকে সালাম করব না, তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। তাঁর সাথে কথা বলব না।”
নরমপন্থী বলে, “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়। আমি তাঁকে সালাম করব, তাঁর সাথে সুসম্পর্ক রাখব, তাঁর সাথে হেসে-খেলে উঠাবসা করব।”
আর মধ্যমপন্থী বলে, “আমি তাঁর পাপের জন্য তাঁকে ঘৃণা করব এবং ঈমানের জন্য ভালোবাসব। তাঁকে বর্জন করায় যদি কোন উপকার থাকে, তাহলে তাঁকে বর্জন করব।”
(খ) চরমপন্থী লোক স্ত্রীকে চরণের দাসী মনে করে। নরমপন্থী তাঁকে নিজের প্রভু মনে করে, বানরের মত তাঁর কোথায় উঠ-বস করে। আর মধ্যমপন্থী তাঁকে বন্ধু মনে করে। সে জানে, “ নারীদের তেমন ন্যায়-সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাঁদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছুটা মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (বাকারাহঃ ২২৮)
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কোন ইমানদার পুরুষ যেন কোন ইমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃনা না করে। যদি সে তাঁর একটি আচরণে অসন্তষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তষ্ট হবে।” ৭৬ (মুসলিম)
সূত্র: দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী