প্রশ্ন : হোদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূল (ছাঃ) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কেটে দিয়ে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ লেখার মাধ্যমে নবুঅতের দাবী থেকে সরে এসেছিলেন কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে মক্কা বিজয়ের লক্ষ্যে। বর্তমানে এ লক্ষ্যেই কি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিৎ হবে না?
উত্তর : প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই।
প্রথমতঃ গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অথচ
‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ একটি নিরেট কুফরী মতবাদ। ইসলামের সাথে এর আপোষের কোন
সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়তঃ গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি হ’ল- ‘জনগণই
সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস’, আইন রচনার ক্ষেত্রে ‘দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ই
চূড়ান্ত’। অর্থাৎ গণতন্ত্রে মানুষকে মানুষের মনগড়া বিধান মানতে বাধ্য করে।
পক্ষান্তরে ইসলামী শরী‘আতের মৌল নীতি হ’ল ‘আল্লাহ্ই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস’
এবং ‘অহি’-র বিধানই চূড়ান্ত’। এখানে মানুষ স্রেফ আল্লাহর বিধান মানে। যার
অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান। বস্ত্ততঃ ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রথমে
মুসলমানকে ঈমানের গন্ডীমুক্ত করে। অতঃপর গণতন্ত্র তাকে মানুষের গোলাম
বানায়। অতঃপর সে আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে ভোটারের মনস্ত্তষ্টিকে
অগ্রাধিকার দেয়। যা তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
তৃতীয়তঃ প্রচলিত রাজনীতির সাথে আপোষ করাকে ‘হোদায়বিয়ার সন্ধি’-র সময় ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দ
বাদ দেওয়ার সাথে তুলনা করা নিতান্তই হাস্যকর ব্যাপার। কেননা তাঁকে আল্লাহর
রাসূল হিসাবে না মানার কারণেই কুরায়েশদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল। তারা এটা
মানলে তো আপোষ হয়ে যেত। সন্ধির কোন প্রয়োজন হ’ত না। সেকারণ তিনি
‘রাসূলুল্লাহ’ কেটে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’ লিখেছিলেন। এটা লেখাতে তিনি
কোন তাগূতী বিধানের সাথে আপোষ করেননি বা নবুঅতের দাবী থেকে সরে আসেননি।
অতএব বর্তমানের কুফরী রাজনীতির সাথে আপোষ করার জন্য উক্ত ঘটনাকে প্রমাণ
হিসাবে পেশ করা স্রেফ খোঁড়া অজুহাত মাত্র।
বলা বাহুল্য, প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে আপোষ নয়; বরং জনমত পরিবর্তনের মাধ্যমে একে পরিবর্তন করাই হ’ল প্রকৃত অর্থে ইসলামী রাজনীতি (বিঃদ্রঃ ‘ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন’, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন?’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ বই)।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।