হারাম ও কবিরা গুনাহ

তামাক বিক্রি করা ও তামাক কোম্পানীতে কাজ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন : এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে: আমি কঠোর পরিশ্রমের একটি কাজ করতাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে পারিনি, অতঃপর হালকা একটি কাজের সন্ধান করে সিগারেট তৈরীর কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ পাইনি, আমি কয়েক মাস যাব  এতে কাজ করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, আমি সিগারেট বা এ জাতীয় কোনো কিছু পান করি না। প্রশ্ন হলো: আমার এ কাজের পারিশ্রমিক হালাল না হারাম? আলহামদু লিল্লাহ আমি কিন্তু মনোযোগ সহকারে আমার কাজ করে যাচ্ছি।

উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ।

সিগারেট তৈরীর কারখানায় আপনার কাজ করা জায়েয হবে না; কারণ সিগারেট তৈরী এবং তা ক্রয় বিক্রির লেনদেন করা হারাম, আর এ কোম্পানীতে কাজ করা হারামের উপর সহযোগিতার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভাল এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা কর পক্ষান্তরে পাপ এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করো না।” [সূরা মায়েদা: ২] কাজেই এ কোম্পানীতে আপনার কাজ চালিয়ে যাওয়া হারাম এবং আপনার পারিশ্রমিকও হারাম। আপনার উচিত হলো এ কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা করা। হালাল কর্ম করে হালাল কম উপার্জন করা হারাম অধিক উপার্জনের চেয়ে উত্তম। কেননা কোনো ব্যক্তি যখন হারাম উপার্জন করে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন না, তা সদকা করে দিলে আল্লাহ তা কবুল করেন না আর তা ছেড়ে গেলে সেটা তার জন্য গোনাহের কাজ হবে যদিও ওয়ারিসদের জন্য প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। জেনে রাখুন! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সাব্যস্ত রয়েছে যে, তিনি বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্রকেই গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ মুমিনগণকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন; যে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসূলগণকে’। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيم  ٥١﴾ [المؤمنون: ٥١]

“হে রাসূলগণ! আপনারা ভাল পবিত্র জিনিস ভক্ষণ করুন এবং সৎকর্ম সম্পাদন করুন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত আছি।” [সূরা মুমিনূন: ৫১]। তিনি আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ١٧٢ ﴾ [البقرة: ١٧٢]

“হে মুমিনগণ ! আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র রিযিক দিয়েছি তা থেকেই তোমরা ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা সত্যিকারার্থে তাঁর ইবাদত করে থাক।” [সুরা বাকারা: ১৭২]। এরপর রাসূল কোনো ব্যক্তির দীর্ঘ ভ্রমণের কথা জানিয়ে বললেন, লোকটির কেশ এলোমেলো অবস্থায়, আকাশের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে বলে: হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম, শরীর গঠন হয়েছে হারাম দিয়ে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: ‘তাহলে কি ভাবে তার দো‘আ কবুল হবে?”[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/৩১০-৩১১]

নবী (ﷺ) এই ব্যক্তির দো‘আ কবুল হওয়া অসম্ভব বলেছেন অথচ লোকটি দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ (সফর) অবলম্বন করেছে; কারণ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম, শরীর গঠন হয়েছে হারাম দিয়ে। এ প্রার্থনাকারী দো‘আ কবুলের কারণগুলো অবলম্বন করার পরও তার দো‘আ কবুল হয়নি, কারণ তার সকল জিনিস হারাম ছিল, কাজেই মানুষের উচিত হলো: হারাম খাদ্য পরিত্যাগ করা এবং এ থেকে দূরে থাকা।

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَج ا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ﴾ [الطلاق: ٢،  ٣]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার জন্য রাস্তা বের করে দেন এবং বিনা হিসাবে তিনি তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।” [সূরা তালাক: ২-৩]

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡر ا ﴾ [الطلاق: ٤]

“এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]

আপনার প্রতি আমার উপদেশ হলো, আপনি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করুন! এবং এ কোম্পানী থেকে বের হয়ে এসে হালাল রিযিক অনুসন্ধান করুন, যেন আল্লাহ এতে বরকত দান করেন [ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৪/৩১০-৩১১]।

সংকলন: আমের সালেহ আলাওয়ী নাজী
সূত্র: ইসলামহাউজ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
Back to top button