সালাত / নামায

প্রশ্ন : ক্রোধবশতঃ পৃথক জায়গায় ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি? মদীনার ‘মসজিদে যেরার’ ওয়াক্তিয়া ছিল, না জামে মসজিদ ছিল?

উত্তর : একই সমাজে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে যদি নতুন মসজিদ তৈরী করা হয় এবং এর দ্বারা মুমিন সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি ও ক্ষতি করা উদ্দেশ্য হয়, তবে উক্ত মসজিদ ‘মসজিদে যেরার’ বা ‘ক্ষতিকর মসজিদ’ হিসাবে গণ্য হবে। কেননা এরূপ মসজিদ তৈরীর ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকে না এবং তা তাক্বওয়ার
উপর প্রতিষ্ঠিত হয় না (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত; আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব, পৃঃ ৩৯৮)

আল্লাহ বলেন, ‘যারা মসজিদ নির্মাণ করে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, যিদ ও কুফরীর তাড়নায়, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য।
অথচ তারা কসম করে বলে যে, কল্যাণ ব্যতীত আমরা কিছুই কামনা করি না। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’ (তওবা ৯/১০৭)

সুতরাং স্রেফ যিদ ও ক্রোধবশতঃ নতুন মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবেনা। শায়খুল ইসলাম
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ক্ষতির উদ্দেশ্যে বা প্রয়োজন ব্যতীত দ্বিতীয় মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না’ (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৪৯)

ক্বাসেমী বলেন, ‘মসজিদে যেরার কোন মসজিদ নয়। এর কোন বিধান নেই, সম্মান নেই ও তাতে
কোন দান করা যাবে না। আববাসীয় খলীফা রাযী বিল্লাহ (৩২২-৩২৯ হি.) এই ধরনের বহু মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন (তাফসীরে ক্বাসেমী ৫/৫০৫-৫০৬ পৃ.)

কুরতুবী বলেন, মসজিদের পাশে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ জায়েয নয়। কেউ নির্মাণ
করলে তাতে বাধা দেওয়া ও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব হবে, যাতে মুছল্লীরা প্রথম মসজিদে ফিরে যায়। তবে মসজিদে মুছল্লীদের স্থান সংকুলান না হ’লে সকলের সম্মতিক্রমে দ্বিতীয় মসজিদ নির্মাণে বাধা নেই (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত, ৮/২৫৪ পৃ.; আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব ৩৯৮ পৃ.)

অতএব তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদের বিপরীতে মসজিদ নামক স্থাপনা
ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং সবাইকে পুরাতন মসজিদে ফিরে আসতে হবে। তবে যদি মহল্লা
পৃথক হয় ও মসজিদ বিভক্ত করার উদ্দেশ্য না থাকে এবং উভয় মসজিদের মাঝে যুক্তিসঙ্গত দূরত্ব ও ব্যবধান থাকে, তাহ’লে সকলের সম্মতি সাপেক্ষে নতুন মসজিদ নির্মিত হ’তে পারে (তিরমিযী হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৭১৭; মির‘আত হা/৭২২-এর ব্যাখ্যা)

অনুরূপভাবে ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করার কারণে বিদ‘আতীরা যদি বের করে দেয়
এবং সাধ্যমত চেষ্টা সত্ত্বেও আপোষের কোন পথ না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সম্ভবপর দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

রাসূল (ছাঃ)-এর সময় ৯ম হিজরীতে মুনাফিকরা যে মসজিদ নির্মাণ করেছিল, সেটি
ওয়াক্তিয়া ছিল বলে অনুমিত হয়। কারণ তার অনতিদূরেই ১ম হিজরীতে নির্মিত ‘মসজিদে ক্বোবা’ মওজূদ ছিল। মুনাফিকদের নির্মিত মসজিদ নামক উক্ত স্থাপনাটি আল্লাহর হুকুমে রাসূল (ছাঃ) পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেন। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখতে পাওয়া যায়।

সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মোঃ মামুনূর রশিদ (বকুল)

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button